কুমিল্লা জেলার ১৫৪৮ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নেই শহীদ মিনার

বাংলাদেশ একমাত্র দেশ, যেখানে ভাষার জন্য এত বেশি মানুষ জীবন উৎসর্গ করেছে। পৃথিবীর অন্য কোনো দেশে মাতৃভাষার জন্য এত বেশি জীবন দিতে হয়নি। তাই তো এ দেশের ভাষা শহীদ দিবস – আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে জাতিসংঘে স্বীকৃতি পেয়েছে। দেশের ভাষার গৌরব এত উচ্চপর্যায়ে পৌঁছলেও কুমিল্লার বিভিন্ন অঞ্চলের ১৫৪৮টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই। এটা একটি পরিতাপের বিষয়।

এখানকার বেশিরভাগ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মাদ্রাসায় শহীদ মিনার না থাকায় – আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসসহ বিভিন্ন জাতীয় দিবসে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে বিপাকে পড়তে হয় শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের।

এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কোনোটিতে কলাগাছ কিংবা বাঁশ-কাঠ দিয়ে অস্থায়ীভাবে শহীদ মিনার তৈরি করে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে হয়। আবার কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানে শুধু পতাকা উত্তোলন করে বিশেষ দিবস পালন করা হয়। ফলে শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত হচ্ছে দেশপ্রেম ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার শিক্ষা অর্জনে। জাতীয় দিবসের গুরুত্ব বুঝতে পারছে না তারা।

কুমিল্লায় প্রাথমিক, মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কলেজ ও মাদ্রাসার সংখ্যা ৩২২৫টি। এর মধ্যে ১৫৪৮ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নেই শহীদ মিনার। জেলার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক অফিসের তথ্য মতে, বিভিন্ন উপজেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ২১০৭টি এর মধ্যে ১২৩৮ বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নেই। অর্থাৎ, অর্ধেকের চেয়ে বেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই।

জেলায় মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৫৭৪টি, এর মধ্যে শহীদ মিনার নেই ৭২টিতে। স্কুল অ্যান্ড কলেজের সংখ্যা ৫০টি, এগুলোর মধ্যে শহীদ মিনার নেই ৩টিতে। কলেজের সংখ্যা ১১৭টি, কিন্তু সেখানকার ১৪টি কলেজে শহীদ মিনার নেই।

বিভিন্ন উপজেলায় মাদ্রাসার সংখ্যা ৩৭৭টি, তবে ২৫৯ টি বা অর্ধেকের চেয়ে বেশি মাদ্রাসায় শহীদ মিনার নেই।

এ বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড কুমিল্লার সাবেক চেয়ারম্যান প্রফেসর মো. জামাল নাছের বলেন, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হচ্ছে সমগ্র বাংলাভাষী অঞ্চলে পালিত একটি বিশেষ দিবস। এটা ১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দের ১৭ নভেম্বরে জাতিসংঘ কর্তৃক গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রতি বছর ২১ ফেব্রুয়ারি তারিখে বিশ্বব্যাপী পালন করা হয়। এটি শহীদ দিবস হিসেবেও পরিচিত। এ দিনটি বাঙালি জনগণের ভাষা আন্দোলনের গৌরবোজ্জ্বল একটি দিন। ১৯৫২ সালের এই দিনে (৮ ফাল্গুন,১৩৫৮, বৃহস্পতিবার) বাংলাকে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে ঢাকায় আন্দোলনরত ছাত্রদের ওপর পুলিশের গুলিবর্ষণে অনেক তরুণ শহীদ হন। যাদের মধ্যে রফিক, জব্বার,শফিউর, সালাম, বরকত উল্লেখযোগ্য।

এ প্রসঙ্গে সুশীল সমাজের প্রতিনিধি জহিরুল হক দুলাল বলেন, এত বছর পর বাংলার এ অঞ্চলে শহীদ মিনার নেই, এটা ভাবতেই অবাক লাগে। তবে প্রশাসন ও স্থানীয় বিত্তশালীরা এ ক্ষেত্রে এগিয়ে আসতে পারেন। যে সব বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নেই, তাদের পার্শ্ববর্তী নিকটতম স্থানে যেসব শহীদ মিনার আছে – সেখানে গিয়ে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।

কুমিল্লা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. শফিউল আলম বলেন, সকল বিদ্যালয়গুলোতে শহীদ মিনার নির্মাণ করা হলে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বা শহীদ দিবসটির তাৎপর্য বুঝতে পারতো। আমরা আশাবাদী যে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণ করা হবে।

কুমিল্লা জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, বেশির ভাগ প্রাইমারি স্কুলেই শহীদ মিনার নেই। আমাদের কাছে মন্ত্রনালয় থেকে একটি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, যাতে প্রতিটি স্কুলে শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়। সরকারি উদ্যোগে অনেক স্কুলে শহীদ মিনার করা হয়েছে। অন্য বিদ্যালয়গুলোতে শহীদ মিনার না হওয়ার মূল কারণ হচ্ছে উদ্যোগের অভাব। আমরা প্রধান শিক্ষকদেরকে একটি নির্দেশনা দিয়েছি। আশা করছি সব বিদ্যালয়েই শহীদ মিনার নির্মাণ করা হবে ।

আরো পড়ুন