যে সাহাবির মৃত্যুতে আল্লাহর আরশ কেঁপে উঠেছিল
সাদ বিন মুয়াজ (রা.) ৩১ বছর বয়সে মদিনায় ইসলাম গ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন মদিনার একজন আনসার সাহাবি। তার মাধ্যমে বনু আবদুল আশহাল গোত্রের সব নারী-পুরুষ ইসলাম গ্রহণ করেছেন। বদর, উহুদ ও খন্দক যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন তিনি।
সাদ ইবনে মুয়াজ (রা.) সব সময় মহানবী (সা.)–কে রক্ষার চেষ্টা করতেন। মহানবী (সা.)-এর যেকোনো সিদ্ধান্তে সমর্থন জানাতেন। বিশেষ করে মদিনার আনসারদের সঙ্গে মক্কার মুহাজিরদের কোনো মনোমালিন্য তৈরি হলে সাধ্যমতো সমাধানের চেষ্টা করতেন। আনসারদের আল্লাহর কথা স্মরণ করিয়ে দিতেন তিনি। অথচ এই মহৎ চরিত্রের সাহাবি ইসলাম গ্রহণের পর মাত্র পাঁচ বছর জীবিত ছিলেন। এ কারণেই আমাদের নবী (সা.) বললেন, তার মৃত্যুতে আল্লাহর আরশ কেঁপে উঠেছিল।
মদিনার ‘জান্নাতুল বাকি’ নামক কবরস্থানে সাদ ইবনে মুয়াজকে (রা.) দাফন করা হয়। মুত্যুকালে তার বয়স ছিল মাত্র ৩৬ বছর। মুত্যর পর জিবরাঈল (আ.) রেশমি পাগড়ি পরিধান করে রাসুল (সা.)-এর দরবারে উপস্থিত হয়ে বলেন, কে মৃত্যুবরণ করেছে, যার জন্য আসমানের দরজাগুলো খুলে দেয়া হয়েছে এবং আরশে কম্পন সৃষ্টি হয়েছে? রাসুল (সা.) দৌঁড়ে যান সাদ (রা.)-এর কাছে। গিয়ে দেখেন তিনি আর বেঁচে নেই। (বুখারি, হাদিস : ৩৮০৩; মুসলিম, হাদিস : ২৪৬৬)
সাদ ইবনে মুয়াজ (রা.) এর জানাজার ব্যাপারে সাহাবিরা বলেছিলেন, ‘আমরা যখন তার মৃতদেহ বহন করে নিয়ে যাচ্ছিলাম, তখন মনে হচ্ছিল যেন শরীরের কোনো ওজন নেই। মনে হচ্ছিল, আমরা কোনো তুলা বহন করে নিয়ে যাচ্ছি।’ এটা শুনে মদিনায় কিছু মুনাফেক তামাশার ছলে বলেছিল, ‘দেখলে তো, সাদ ইবনে মুয়াজের কোনো ওজন নেই। একইভাবে তার কাজেও কোনো ওজন ছিল না।’
পরে মহানবী (সা.) বিষয়টি পরিষ্কার করলেন, ‘সেদিন ফেরেশতারা সাদ ইবনে মুয়াজকে বহন করেছিল। তাই তোমরা কোনো ওজন অনুভব করনি।’
কিন্তু আল্লাহর আরশ কেঁপে উঠল কীভাবে?
মহানবী (সা.) এই কথা বলেননি যে সাদ (রা.)–এর মৃত্যুর কষ্টে বা ভয়ে আরশ কেঁপে উঠেছিল। বরং মহানবী (সা.) বলেন, ‘সাদ ইবনে মুয়াজের রুহ আল্লাহর দিকে ফিরে যাচ্ছে, এই খুশিতে আরশ কেঁপে উঠেছিল।’
ইমাম হাসান বসরী (র.) হাদিসটি নিয়ে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, ‘আরশ আসলে কষ্টে বা ভয়ে কেঁপে ওঠেনি, বরং এটি খুশিতে কেঁপে উঠেছিল। একইভাবে উহুদ পাহাড়ও কেঁপে উঠেছিল যেদিন মহানবী (সা.), আবু বকর (রা.), ওমর (রা.) এবং উসমান (রা.) পাহাড়ে উঠেছিলেন। আমাদের নবী (সা.) পাহাড়কে লক্ষ্য করে বলেছিলেন, ‘তোমার কম্পন বন্ধ করো, হে উহুদ, তোমার ওপর একজন নবী, একজন সিদ্দিক এবং দুজন শহীদ আরোহণ করেছে।’
সাদ ইবনে মুয়াজ (রা.) মারা গিয়েছিলেন খন্দকের যুদ্ধের সময়ের এক আঘাতের ফলে। সেই আঘাতে আক্রান্ত হয়ে পরে তার মৃত্যু হয়েছিল। অর্থাৎ তিনি শহীদ হয়েছিলেন।