ভূমি জটিলতায় চালু হচ্ছে না কুমিল্লা বিমানবন্দর
কুমিল্লা বিমানবন্দর চালু এখন সময়ের দাবি বলে মনে করছেন জেলার সর্বস্তরের মানুষ। কিন্তু কবে উড়বে উড়োজাহাজ? এ প্রশ্ন ৩০ বছর ধরে ঘুরপাক খাচ্ছে বৃহত্তর কুমিল্লাবাসীর মনে। বৃহত্তর কুমিল্লার মানুষ এখনও আশায় বুক বেঁধে আছেন উড়োজাহাজ ওঠানামা করবে কুমিল্লা বিমানবন্দরে।
দেশের সর্বোচ্চ প্রবাসী অধ্যুষিত এলাকা কুমিল্লা। রেমিট্যান্সেও সেরা এই জেলা। বর্তমানে এই জেলার অনেক মানুষ বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান করছেন। রাজধানী ঢাকা ও দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামের মাঝামাঝি অবস্থিত জেলাটি। ভৌগলিকভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এ জেলা। এখানে ইপিজেড, বিসিক শিল্পনগরী ও গার্মেন্টসসহ অনেক শিল্প-কারখানা রয়েছে। আছে একটি বিমানবন্দরও। এর ডিভিওআর ও ডিএমই সিগন্যাল ব্যবহারের মাধ্যমে প্রতি মাসে মোটা অঙ্কের রাজস্ব আয় করছে সরকার।
তবে সবকিছু ঠিক থাকা সত্ত্বেও বিমান ওঠানামা না করায় গত ৩০ বছর ধরে নিষ্প্রাণ কুমিল্লা বিমানবন্দরটি। এ বিমানবন্দরটি পুনরায় চালু করতে বেশি অর্থের প্রয়োজন নেই। বিপুল পরিমাণ জমি রয়েছে। শুধুমাত্র সেনাবাহিনীর সাথে ভূমি সংক্রান্ত জটিলতা রয়েছে। রানওয়ে কার্পেটিং, ফায়ার বিগ্রেড ও এয়ারক্রাফটের সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য টাওয়ারে বিএইচএফ সেট করলে এ বিমানবন্দর থেকে অভ্যন্তরীণ রুটে বিমান চলাচলে বাধা থাকবে না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
১৯৪০ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় কুমিল্লা নগরীর নেউরা-ঢুলিপাড়ার পাশে স্থাপিত হয় কুমিল্লা বিমানবন্দর। ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত দেশের অভ্যন্তরীণ রুটে সেনাবাহিনী এ বিমানবন্দর ব্যবহার করতো। একই বছর বন্দরটি সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। এরপর ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত টানা ১০ বছর বিমান ওঠানামা করে এ বিমানবন্দরে। কিছুদিন পর যাত্রী সংকটে তা বন্ধ হয়ে যায়।
পরবর্তীকালে ১৯৯৪ সালে ফের বিমানবন্দরটি চালু করা হলেও পর্যাপ্ত যাত্রী না হওয়ায় মাত্র দুই সপ্তাহের ব্যবধানে এয়ারলাইন্সগুলো বিমান ওঠানামা বন্ধ করে দেয়। সে সময় আন্তর্জাতিক কোনো ফ্লাইট চালু না থাকলেও মূলত দেশের অভ্যন্তরের ফ্লাইটগুলো চালু ছিল এ বিমানবন্দরে।
সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, ৭৭ একর ভূমির ওপর প্রতিষ্ঠিত বিমানবন্দরটিতে এখন ভুতুড়ে পরিবেশ। হঠাৎ দেখে বুঝার উপায় নেই এটি একটি বিমানবন্দর। বিমানবন্দর সড়কের বেহাল দশা, অধিকাংশ এলাকায় চাষ করা হয়েছে গরুর ঘাস। ভেতরে রয়েছে ছোট ছোট একাধিক পুকুর। বন্দরটি কুমিল্লা সিটি করপোরেশন এলাকায় হওয়ায় এবং যাত্রী ওঠানামা না করায় বিমানবন্দরের জন্য নির্মিত সড়কটি ঢুলিপাড়া, রসুলপুর ও রাজাপাড়া এলাকাবাসী ও সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।
কুমিল্লা বিমানবন্দর থেকে বর্তমানে প্রতিবেশী দেশ ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ৩০-৩৫টি বিমান দৈনিক সিগন্যাল ব্যবহার করছে। এতে প্রতি মাসে আড়াই থেকে প্রায় ৩ কোটি টাকার রাজস্ব আয় হচ্ছে সরকারের। বেশি চলাচল করে ভারতে অভ্যন্তরীণ রুটের বিমান। আগরতলা বিমানবন্দরে যাওয়া বিমান এই রুটে চলে। এছাড়া রয়েছে ব্যাংকক, সিঙ্গাপুরের বিমান। বর্তমানে এ বন্দরে ২৩ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী কাজ করছেন।
কুমিল্লা ইপিজেডের ব্যবসায়ী নাজিম উদ্দীন জানান, বিমানবন্দর চালু হলে ইপিজেডে আরও বেশি বিদেশি বিনিয়োগকারী আসতেন। এতে বিপুল সংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থান হতো। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের যাতায়াতের কথা বিবেচনা করে কুমিল্লা বিমানবন্দর পুনরায় চালুর উদ্যোগ নিতে সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন তারা।
কুমিল্লা সিটি কলেজের অধ্যক্ষ নাদিমুল হাসান চৌধুরী বলেন, কুমিল্লার মানুষের প্রাণের দাবি দুইটি কুমিল্লা নামে বিভাগ এবং কুমিল্লা এয়ারপোর্ট। এই দুইটি হলে কুমিল্লার মানুষের জীবনযাত্রার উন্নয়ন ঘটবে। কুমিল্লাকে পিছিয়ে থাকতে হবে না।
কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলা বিএনপির সভাপতি এডভোকেট আক্তার হোসেন বলেন, প্রবাসে অবস্থানের দিক থেকে কুমিল্লার মানুষের সংখ্যা অনেক বেশি। রেমিট্যান্সেও সেরা কুমিল্লা জেলা। প্রবাসীদের কথা বিবেচনা করে হলেও কুমিল্লা বিমানবন্দরটি পুনরায় চালু করা সময়ের দাবি। কুমিল্লা বিমানবন্দর চালু হলে কুমিল্লার মানুষের জীবন যাত্রার মান আরও উন্নতি হবে।
কুমিল্লা বিমানবন্দরের সিএনএস প্রকৌশলী নাসির উদ্দিন আহমেদ বলেন, বিমানবন্দরটি সরকারের একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠান। এই বিমানবন্দর থেকে এখন প্রতি মাসে আড়াই থেকে প্রায় ৩ কোটি টাকার রাজস্ব আয় হচ্ছে সরকারের। বর্তমানে ৩০-৩৫টি বিমান ডিভিওআর ও ডিএমই সিগন্যাল ব্যবহার করে। বিমান ওঠানামা না করলেও এটা থেকে ভালো রাজস্ব আয় হচ্ছে। বর্তমানে বিমানবন্দরটি সেনাবাহিনীর সাথে ভূমি জটিলতা আছে। এই জটিলতা শেষ হলে কুমিল্লা বিমানবন্দর চালু করা সম্ভব।