কুমিল্লায় যুবদল নেতাকে চাঁদা না দেয়ায় যুবককে মারধর

কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলার মৌকরা ইউনিয়ন যুবদলের সাবেক আহ্বায়ক আব্দুর রহিমকে চাঁদা না দেয়ায় এক ব্যক্তিকে আটকে রেখে মারধরের ভিডিও ভাইরাল হয়েছে সামাজিকমাধ্যমে।

ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার পর সাবেক এই যুবদল নেতা ক্ষিপ্ত হয়ে ইউনিয়নের গোমকোট বাজারে জসীম নামের এক ফার্নিচার ব্যবসায়ীর দোকানে গিয়ে তাকে বেধড়ক মারধর করেন। পরে মারধরের শিকার জসীমের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে যুবদলের নেতা রহিমকে আটক করে নাঙ্গলকোট থানা পুলিশ।

বুধবার (৫ মার্চ) রাতে অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করা হয়।

আটক যুবদলের সাবেক নেতা আব্দুর রহিম নাঙ্গলকোট উপজেলার মোড্ডা গ্রামের মৃত ইয়াকুব আলীর ছেলে। তিনি মৌকরা ইউনিয়ন যুবদলের সাবেক সভাপতি ছিলেন বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) নাঙ্গলকোট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) একেএম ফজলুল হক জানান, অভিযোগের ভিত্তিতে আটক রহিমকে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। তবে মারধরের শিকার ওই ব্যক্তির পরিচয় সম্পর্কে কিছুই জানা যায়নি।

ভাইরাল হওয়া ওই ভিডিওতে যুবদল নেতা রহিমকে একজনের সঙ্গে লাউডস্পিকারে মোবাইল ফোনে কথা বলতে শোনা যায়। মোবাইলের অপর পাশের ব্যক্তিকে রহিম বলেন, ‘আপনি ২০ হাজার টাকা দিবেন’। এসময় মোবাইলের অপর প্রান্তে থাকা ব্যক্তি বলে ওঠেন, ‘আপনি তো আমার সঙ্গে চাঁদাবাজি করছেন।’ এরপর যুবদল নেতা রহিম বলেন, ‘আপনার সঙ্গে চাঁদাবাজি করল কে? চাঁদাবাজি করলে আপনি কবেই এই এলাকা থেকে আউট হয়ে যেতেন।’ এসময় অপর পাশের ব্যক্তি বলেন, ‘চাঁদাবাজি না করলে আমি আমার তরফ থেকে যেটা দেব, আপনাকে সেটা নিতে হবে। আমি কী করি, আপনি চিটাগং (চট্টগ্রাম) শহরে গিয়ে খবর নেন।’ এসময় যুবদল নেতা রহিম বলে ওঠেন, ‘আপনি চিটাগং শহরের অনেক বড় নেতা। আমি আপনার কাছে চাঁদা চাইছি? আপনি ৫ হাজার টাকা দিচ্ছেন, আমার এখানে প্রোগ্রামে খরচ করলাম আড়াই থেকে তিন লাখ টাকা।’

এরপর যুবদলের নেতা রহিম অপর ব্যক্তিকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকেন। একপর্যায়ে মোবাইল ফোন রেখে মোবাইলের অপর পাশের ব্যক্তির প্রতিনিধি এক যুবককে ধাক্কাতে ধাক্কাতে একটি দোকান ঘরে ঢোকান। সঙ্গের একজনকে তাকে বেঁধে রাখতে নির্দেশ দেন। পরে তার মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে তাকে বেদম প্রহার করা হয়।

এ ঘটনার দৃশ্য ঘটনাস্থলে থাকা কেউ একজন তার মুঠোফোনে রেকর্ড করে রাখেন। পরে তা ফেসবুকে পোস্ট করলে মুহুর্তেই ভিডিওটি ভাইরাল হতে থাকে।

অপরদিকে, ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার পেছনে গোমকোট বাজারের ফার্নিচার ব্যবসায়ী জসীমের হাত রয়েছে বলে ধারণা করেন যুবদলের নেতা রহিম। বুধবার রাত ৮টার দিকে জসীমের ফার্নিচার দোকানে গিয়ে হামলা করেন রহিম। এসময় জসীমকে মারধর করেন তিনি। ভাঙচুর চালানো হয় তার ফার্নিচার দোকানে। পরে নাঙ্গলকোট থানায় গিয়ে মারধরের শিকার জসীম বাদী হয়ে লিখিত অভিযোগ দেন। রাতে পুলিশ অভিযান চালিয়ে নিজ বাড়ির সামনে থেকে যুবদলের নেতা রহিমকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলতি বছরের ২৯ জানুয়ারি মৌকরা ইউনিয়ন বিএনপির সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল গফুর ভূঁইয়া। ওই অনুষ্ঠানের নাম ভাঙিয়ে বিভিন্ন ব্যবসায়ী, ঠিকাদারদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করে আসছিলেন যুবদলের নেতা রহিম।

অভিযুক্ত যুবদলের নেতা আব্দুর রহিম পুলিশ হেফাজতে থাকায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

আরো পড়ুন