ভোটের মাঠে ইয়াছিনকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিলেন সাক্কু

কুমিল্লার রাজনীতিতে হাজি আমিনুর রশীদ ইয়াছিন ও মনিরুল হক সাক্কুর দ্বন্দ্বের বিষয়টি কার না জানা। যুগ যুগ ধরে এই দুই নেতা বিবাদে জড়িয়ে আছেন। তাদের কেন্দ্র করে কুমিল্লা মহানগরে দ্বিমেরুকেন্দ্রিক রাজনীতি চলছে দীর্ঘদিন ধরে।
আমিনুর রশীদ ইয়াছিন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা। আর মনিরুল হক সাক্কু কুমিল্লা সিটির দুই বারের সাবেক মেয়র। তিনি এখন বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত। দুই নেতারই কুমিল্লায় জনপ্রিয়তা রয়েছে।
রাজনীতির মাঠের পাশাপাশি এবার সংসদ নির্বাচনেও ইয়াছিনকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছেন সিটি নির্বাচনে অংশ নিয়ে দল থেকে বহিষ্কার হওয়া সাক্কু। কুমিল্লা সদর সংসদীয় আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী সাবেক এমপি ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাজী আমিনুর রশীদ ইয়াছিন। এ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে মাঠে নামছেন সাবেক সিটি মেয়র মনিরুল হক সাক্কু।
সম্প্রতি নিজ কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় এই ঘোষণা দেন বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত এ নেতা। সাক্কুর এই ঘোষণা নিয়ে চলছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। সচেতন মহলের প্রশ্ন-তবে কি জটিল সমীকরণ কিংবা সংঘাতের দিকেই যাচ্ছে বিএনপির রাজনীতি?
কুমিল্লা-৬ (আদর্শ সদর) আসনে বিএনপির প্রার্থী হিসাবে ইয়াছিনকেই দলীয় সব কর্মকাণ্ডে দেখা যাচ্ছে। তাছাড়া ১৭ বছর ধরেও দলের হাল ধরে রেখেছেন তিনি। তবে সম্প্রতি এ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছেন সাক্কু। তিনি ইয়াছিনকে চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলেছেন, ‘পারলে আমাকে ঠেকান’।
এমনকি ইয়াছিন যেখানে নির্বাচনে প্রার্থী হবেন সেখানেই সাক্কু প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। এতে রীতিমতো তোলপাড় শুরু হয়েছে। সাক্কু প্রার্থী হলে ইয়াছিনের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন অনেকেই। তাছাড়া সংঘাত-সহিংসতাও হতে পারে। তবে বিএনপির নেতাকর্মীদের দাবি, স্রোতের বিপরীতে তেমন সুবিধা করতে পারবেন না সাক্কু। দলীয় মনোনয়ন যিনি পাবেন কুমিল্লায় তিনিই এগিয়ে থাকবেন।
এদিকে বিএনপির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের দাবি, সাক্কু ভোটে জেতার জন্য নয়, বিএনপির প্রার্থীকে হারাতেই মিশন নিয়ে মাঠে নেমেছেন। সম্প্রতি এক মতবিনিময় সভায় সাক্কু বলেন, ‘ইয়াছিন সাহেব আপনি নিজেকে সামলান। আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে নির্বাচন করব। আপনার শক্তি থাকলে আমাকে আটকান। বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিন আমি ১০ হাজার নেতাকর্মী নিয়ে র্যালি করব। আমি আর মেয়র নির্বাচন করব না। আমাকে বাধা দেবে কে? আমি যেটা বলি সেটাই করি। ইয়াছিন সাহেব আপনাকে সামনাসামনি চ্যালেঞ্জ করলাম। আগামী তিন মাস আমি মাঠে কার্যক্রম পরিচালনা করব। তোমাদের তো পদ-পদবি আছে। আমার তো কোনো পদ-পদবি নাই। আমাকে বাধা দেবে কে? আমি এখন থেকেই প্রতিটি ঘরে ঘরে কার্যক্রম পরিচালনা করব।’
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সাক্কুর এমন ঘোষণায় কুমিল্লায় বিএনপির রাজনৈতিক অঙ্গনে ফের অস্থিরতা সৃষ্টি হতে পারে। এদিকে ইয়াছিন সাক্কুর বিরোধের সুযোগে নীরবে গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন জামায়াতের প্রার্থী এবং মহানগর জামায়াতের আমির কাজী দ্বীন মোহাম্মদ।
আদর্শ সদর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক রেজাউল কাইয়ুম বলেন, মনিরুল হক সাক্কু ১৭ বছর আওয়ামী লীগের সঙ্গে আঁতাত করে ক্ষমতা ভোগ করেছেন। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার পায়ে ধরে নীতি-আদর্শ বিসর্জন দিয়েছেন। এখন বিএনপির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছেন। ভোটে জয়ী হওয়ার জন্য নয়, সাক্কু প্রার্থী হতে চান বিএনপির ক্ষতি করার জন্য। ইয়াছিন সাহেবের ক্ষতি করাই ওনার মূল উদ্দেশ্য।
মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইউসুফ মোল্লা টিপু বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সাক্কু কোনো ‘কাউন্টেবল’ প্রার্থী না। মূলত তিনি বিএনপির প্রার্থীর ভোট নষ্ট করার জন্য প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে চাচ্ছেন। এতে বিএনপি প্রার্থীর ওপর ন্যূনতম নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না। সাক্কু সাহেবের শক্তি ছিল বিএনপি। এখন তিনি বহিষ্কৃত। সুতরাং মাঠে তিনি এখন ভ্যালুলেস।
এ বিষয়ে মনিরুল হক সাক্কু বলেন, আগামী নির্বাচনে বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইব, না পেলে আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে নির্বাচন করব। আমি যেহেতু বহিষ্কৃত তাই আমার কাজে কেউ বাধা দিতে পারবে না। জনগণ আমাকে চাচ্ছে তাই মাঠে কাজ শুরু করে দিয়েছি। আমি আর মেয়র নির্বাচন করব না। ইয়াছিন সাহেবের সঙ্গেই আমি এমপি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করব।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে হাজী আমিনুর রশীদ ইয়াছিন বলেন, আমি প্রতিহিংসার রাজনীতিতে বিশ্বাস করি না। সাক্কু সাহেব যেভাবে কথা বলেন আমি সেভাবে উত্তর দিতে চাই না। বিএনপির আদর্শ ধারণ করে রাজনীতি করি। আগামী নির্বাচনে দল মনোনয়ন দিলে নির্বাচন করব