শিক্ষার আলো ছড়িয়ে শতাব্দী পেরিয়েছে গোমতা ইসহাকিয়া উচ্চ বিদ্যালয়
মুরাদনগর প্রতিনিধিঃ কথায় বলে, ‘ধ্যানের চর্চা হয় গুহায়, ধর্মের চর্চা হয় মসজিদ-মন্দিরে, নীতির চর্চা হয় পরিবারে, বিদ্যার চর্চা হয় বিদ্যালয়ে’। বিদ্যা চর্চার এমনি একটি শতবর্ষী বিদ্যাপিঠ ১০৭ বছর ধরে যে বিদ্যালয়টি আজও আলো ছড়াচ্ছে সেটি হলো কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর উপজেলার দক্ষিন সিমান্তবর্তী এলাকার গোমতা ইসহাকিয়া উচ্চ বিদ্যালয়।
বিদ্যালয়টিতে ১ম শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত প্রায় এক হাজার ৫২ জন শিক্ষার্থী পড়াশুনা করছে এবং মাধ্যমিকে শিক্ষকের পদ সংখ্যা ১৩ জন হলেও বর্তমানে রয়েছে ১০ জন, পার্টাইমে ২জন ও শূন্য রয়েছে একটি পদে আর প্রাথমিকে শিক্ষক রয়েছে ৬ জন। বিদ্যালয়টিতে রয়েছে একটি সমৃদ্ধ পাঠাগার। বইয়ের সংখ্যা এক হাজার পাচ’শ। রয়েছে একটি বিজ্ঞানাগার। বিদ্যালয়টির জমির পরিমাণ ১ দশমিক ৯২ একর। বিদ্যালয়ের স্কুল মূল ক্যাম্পাসের রয়েছে ১টি নিজস্ব খেলার মাঠ, মাধ্যমিকে দ্বি-তল বিশিষ্ট দুইটি ও এক তলা একটি ভবন, ৩০ শতকের একটি পুকুর ও একটি পাকা মসজিদ।
১৯১০ সালে লাজুর গ্রামের মুন্সী বাড়ির মরহুম মাওলানা ইসহাক উপজেলার দক্ষিন সিমান্তবর্তী গোমতা এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহা-সড়কের পাশে মনোরম পরিবেশে প্রথমে এবতেদায়ি মাদ্রাসা ও প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন। শুরুতে দু’চালা একটি টিনের ঘরে মাধ্যমে চলে শিক্ষা কার্যক্রম। পরে দাখিল মাদ্রাসাটি বন্ধ করে ১৯৬২ সালে মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। কুমিল্লা জেলার দক্ষিন অঞ্চলের খেঁটে খাওয়া মানুষের ছেলে-মেয়েদের মাঝে শিক্ষার আলো প্রজ্জলিত করার প্রযোজনীয়তা অনুভব করে এ প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠা করেন। আর তার নামেই প্রতিষ্ঠানটির নামকরন করা হয় গোমতা ইসহাকিয়া উচ্চ বিদ্যালয়। পরবর্তীতে ১৯১৩ সালে মরহুম মাওলানা ইসহাকের ব্যাক্তিগত তহবিল থেকে দু’চালা ঘরের স্থলে ১৬০ফুট দৈঘ্য ও ২০ফুট প্রস্ত ৮টি কক্ষ বিশিষ্ট একটি এক তল ভবন নির্মাণ করেন। সেটি আবার ১৯৬৫ সালে দ্বি-তল ভবনে রূপান্তর করা হয়। অপর দিকে প্রাথমিক শিক্ষার জন ক্যাম্পাসের দক্ষিন পূর্ব পাশে ১৯৬৫ সালে ৪ কক্ষ বিশিষ্ট একতলা ভবন নির্মাণ করা হয়। প্রর্যায়ক্রমে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে ১৯৫০ সালে একটি অনুদানের টাকা থেকে ৪০ফুট দৈঘ্য ও ২০ফুট প্রস্ত একটি পাকা রোম তৈরী করা হয়। সেটির উপরে পরে আরো একটি টিন সীট কক্ষ নিমার্ন করা হয়। ১৯৭৩ সালে প্রাথমিক শিক্ষার স্কুলটিকে জাতীয়করন করা হলে মাধ্যমিক ও প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দুইটি পৃথক প্রতিষ্ঠান হিসেবে রূপান্ত হয়ে যায়। ১৯৮৪ সালে মাধ্যমিক শাখাকে এমপিওভুক্ত করার পর ১৯৯৫ সালে তিন রোম বিশিষ্ট এক তলা আরো একটি ভবন তৈরী করে ফ্যাসিলিটিস বিভাগ। ২০০১ সালে কতৃপক্ষ পুরাতন ভবনটি পরিতেক্ত ঘোষনা করলে ফ্যাসিলিটিস ও অনুদানের অর্থে নির্মাণ করা মোট পাচঁটি কক্ষে কোন রকম ভাবে চলছে শিক্ষা কার্যক্রম। বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার শুরু থেকে শতকরা ৮০ ভাগ শিক্ষার্থী পরিক্ষায় পাশ হয়ে আসছে। ১৯৬২ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের মধ্যে ফুটবল খেলায় প্রথম স্থান অর্জন করে।
এ বিদ্যালয়ের বহু শিক্ষার্থী বর্তমানে দেশে-বিদেশে যেমন সুনাম অর্জন করেছেন, তেমনি সরকারের উচ্চ পর্যায়েও দায়িত্ব পালন করেছে এবং এখনো করছেন। বিদ্যালয়ের স্বনামধন্য কয়েকজন শিক্ষার্থী হলেন, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রনালয়ের যুগ্ম সচিব শফিকুল ইসলাম, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ^বিদ্যালয়ের (বুয়েট) প্রফেসর আবুল বাসার, পরমানু বিজ্ঞানী আব্দুল জলিল, ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডা. দুলাল, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডা. কামরুল হাছান, বাংলাদেশ সেনা বাহিনির লে.কর্নেল আব্দুল ওয়াদুদ, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া ও বিশ^বিদ্যালয়ের প্রফেসর আব্দুর রশিদ, ফেনি সরকারি কলেজের প্রফেসর আহম্মদ হোসেন, বাংলাদেশ উম্মক্ত বিশ^বিদ্যালয়ের ডীন ড. শাহ আলম, শাহজালাল বিশ^বিদ্যালয়ের প্রফেসর মো: সালাউদ্দিন, যমুনা ব্যাংক লি: এর সিনিয়র অফিসার মাসুদ রানা, পেট্রোবাংলার কর্মকর্তা নাছির উদ্দিন প্রমুখ।
গোমতা ইসহাকিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মুন্সী ছাইফ আহম্মদ জানান, আমার দাদা এ বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা এবং আমিও এ বিদ্যালয়ের একজন ছাত্র ছিলাম। আজ এ বিদ্যালয়েরই প্রধান শিক্ষক হতে পেরে নিজে গর্ববোধ করি। বিদ্যালয়টি মুরাদনগর, দাউদকান্দি, দ্বেবিদার ও চান্দিনা এ চারটি উপজেলার সিমান্তবর্তী হওয়ায় ঐ উপজেলা গুলোর অনেক শিক্ষার্থীরা এখানে লেখা-পড়া করে থাকে। এই বিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষার্থী একদিন দেশ গড়ার কাজে নেতৃত্ব দিবে বলে মনে করি। এই বিদ্যালয়টি মানুষ গড়ার কারখানায় পরিণত হয়েছে। শিক্ষার্থীদের দেশপ্রেমিক আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ করে যাব। আমি আশাকরি বিদ্যালয়টি সকল দিক বিবেচনা কওে বিদ্যালয়টি জাতীয়করন করা হবে।