কুমিল্লায় গোমতীর পাড়ে ভেঙ্গে পড়ছে ফসলী জমি

মারুফ আহমেদঃ কুমিল্লার প্রধান নদী গোমতী। জেলার ৭ টি উপজেলা হয়ে দাউদকান্দিতে মেঘনায় মিলিত হয়েছে এই নদী। নদীটির দু’তীরের বিশাল এলাকাজুড়ে রয়েছে হাজার হাজার একর আবাদী জমি। নদী তীরের কমপক্ষে অর্ধলক্ষাধিক কৃষক পরিবার নদীর চর এলাকায় চাষাবাদ করে জীবিকা নির্বাহ করছে। সাম্প্রতিক সময়ে রাজনৈতিক পরিচয়ে প্রভাব খাটিয়ে নদীর দু’তীরের বিভিন্ন এলাকায় একাধিক সিন্ডিকেট অপরিকল্পিতভাবে অবাধে বালু উত্তোলন ও মাটি কাটছে। এতে করে ফসলী জমি ভেঙ্গে পড়ছে। এই যখন অবস্থা তখন প্রশাসনও রয়েছে নিরব। এতে দিন দিন কমে যাচ্ছে নদী তীরে চাষাবাদযোগ্য জমি ও উৎপাদিত ফসলের পরিমান।

কুমিল্লার প্রধান নদী গোমতীর প্রতিরক্ষাবাধেঁর ভিতর সুদীর্ঘকাল ধরে নদী তীরবর্তী এলাকার লোকজন বিভিন্ন ধরণের কৃষিপণ্য উৎপাদন করে আসছে। শুস্ক মৌসুমে তরমুজ, বাঙ্গি, মূলা, করলা, পুইশাক, লালশাক, আলু, ফুল কপি,বাধাঁ কপি, টমেটো, মিষ্টি আলু, মিষ্টি কুমড়োর, বেগুন,গম, ভূট্টা, আখ পাশাপাশি বর্ষা মৌসুমে ধান চাষাবাদ করে আসছিল এখানকার কৃষকরা। সাম্প্রতিক সময়ে নদী থেকে কোন নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে অপরিকল্পিতভাবে যত্রতত্র ড্রেজার মেশিন বসিয়ে যেমন বালু তুলছে, তেমনি চরের নানা অংশ থেকে অবাধে মাটি কেটে বিক্রি করছে ভূমিদস্যূ বা প্রভাবশালী বেশ কিছু সিন্ডিকেট। এতে করে কুমিল্লা সদর বুড়িচং, ব্রাহ্মণপাড়া,দেবিদ্বার ,মুরাদনগর তিতাস, দাউদকান্দি উপজেলার গোমতীর চরের অসংখ্য স্থানে কৃষকদের চাষ করা জমির ফসল নষ্ট হচ্ছে। অনেকস্থানে চাষাবাদকৃত জমির মাটি ভেঙ্গে ফসল নষ্ট হওয়ায় কৃষক আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে নদী তীরে চাষাবাদের। কিছু কিছু এলাকায় গ্রামবাসী প্রতিবাদ করলেও রাজনৈতিক পরিচয়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে হয়রানী করছে কৃষকদের।

সরেজমিন নদী তীরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে পাওয়া চিত্রে দেখা গেছে নদী থেকে বালু উত্তোলন,চর থেকে অপরিকল্পিত মাটি কাটায় চরের জমি ভেঙ্গে পড়ে ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতিতে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে অসংখ্য কৃষক । কুমিল্লা সদর উপজেলার দুর্গাপুর উত্তর ইউনিয়নের কাচিয়াতলী এলাকায় জাহাঙ্গীর,সুলতান,কালামসহ একাধিক কৃষক জানান, চরের জমিই আমাদের বেচেঁ থাকার অবলম্বন। অথচ ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে চর থেকে মাটি কাটায় এখন আমাদের ফসলী জমি নিশ্চিহ্ন হয়ে পড়ছে। একই অবস্থা দেখা গেছে পাশ্ববর্তী বুড়িচং উপজেলার ময়নামতির ষোলনল,কাঠালিয়া ও ব্রাহ্মণপাড়ার মালাপাড়া ইউনিয়নের মনোহরপুরসহ একাধিকস্থানে। সেখানকার কৃষকরাও জানান তাদের দুঃখ দুর্দশার কথা। প্রভাবশালীদের ভয়ে কেউ নাম বলতে রাজি হননি। এখন অবাধে মাটি কাটা ও বালু তুলে ট্রাক/ট্রাক্টরে পরিবহন করায় কমে গেছে চাষাবাদযোগ্য জমির পরিমান। তারা আরো বলেন,আমরা নদী তীরে চাষাবাদ করে বছরের পরিবারের খাবারের সিংহভাগ চাহিদা পূরণসহ কিছু ফসল বিক্রি করে সংসারের অন্যান্য ব্যয় নির্বাহ করতাম। তবে এখন পুরো বছর চরের অধিকাংশ জমি খালি পড়ে থাকে। প্রভাবশালীরা যখন যেভাবে পারে মাটি কেটে,বালু উত্তোলন করে বিক্রির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা আয় করছে।

নদী তীরে কৃষকদের দুর্ভোগের বিষয়ে কুমিল্লা পানি উন্নয়ন বোর্ডের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান,বর্ষা মৌসুম আসলে বাধঁ রক্ষণাবেক্ষনে আমাদের ব্যস্ত থাকতে হয়। নদীর চর থেকে মাটি কাটা বা নদী থেকে বালু উত্তোলনে আমাদের কিছুই করার নাই। বিষয়টি জেলা প্রশাসনের। এদিকে কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মোঃ আবুল ফজল মীর জানান,খুব শীঘ্রই নদী রক্ষা কমিটির সাথে জেলা প্রশাসনের বৈঠক হবে। সেখানে নির্ধারণ করা হবে কিভাবে নদী তীর সংরক্ষণ করা হবে।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন কুমিল্লা শাখার সভাপতি ডাঃ মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন,প্রভাবশালীরা শুধু মাটি কাটা বা বালু উত্তোলনই করছে না। এরফলে শত শত হেক্টও জমি অনাবাদী হয়ে পড়ে আছে। তাছাড়া অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলনের কারণে নদীর গতিপথ পরিবর্তন হচ্ছে। কুমিল্লায় সদ্য যোগদান করা জেলা প্রশাসকের সাথে আমরা বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছি। তিনি আমাদের আশ্বস্থ করেছেন,নদীর প্রতীরক্ষাবাধেঁর উপর দিয়ে ট্রাক,ট্রাক্টর চলাচল বন্ধ করে দিবেন।

আরো পড়ুন