কুমিল্লা মেডিকেলে চিকিৎসকরা রক্ত দিয়ে অসহায় মুমূর্ষু রোগীর জীবন বাঁচালেন

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সেলিনা আক্তার (৩৫) নামের এক অসহায় ও মুমূর্ষু রোগীর জীবন বাঁচাতে ওই হাসপাতালের গাইনী বিভাগের দুই চিকিৎক রক্ত দিয়েছেন। ডাক্তারদের এমন মহতী উদ্যোগের খবর পেয়ে হাসপাতালে গিয়ে রোগীকে বাঁচাতে আরও রক্ত দিয়েছেন দৈনিক রূপসী বাংলার নিজস্ব প্রতিবেদক এম.এইচ মনির। ডাক্তারদের দীর্ঘ প্রচেষ্টায় ওই রোগীনির অপারেশন সফল হলেও সে এখনও আশংকামুক্ত নয় বলে চিকিৎকরা জানিয়েছেন।

জানা যায়, গতকাল মঙ্গলবার বেলা ১২টার দিকে জেলার চান্দিনা শ্রীমন্তপুর গ্রামের বর্গাচাষী সুলতান আহমেদের স্ত্রী সেলিনা আক্তারকে মুমূর্ষু অবস্থায় কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তখন রোগীর প্রচুর পরিমাণে রক্তপাত হচ্ছিল। শরীরের পালস্ এবং ব্লাড প্রেসার ছিল না। কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে পরীক্ষা করে দেখেন সে অন্ত:স্বত্বা। হাসপাতালে আনার আগেই তার জরায়ু সংলগ্ন টিউব ফেটে গিয়ে রোগীর শারীরিক অবস্থা সংকটাপন্ন অবস্থায় ছিল। এসময় রক্তশূন্যতার কারণে প্রচুর পরিমাণ ‘ও’ পজেটিভ রক্তের প্রয়োজন হয়। কিন্তু ওই রোগীর সাথে তার কোনো স্বজন না থাকায় ডাক্তাররা বিপাকে পড়েন। পরে বাধ্য হয়ে রোগীর জীবন বাঁচাতে তারা রক্ত সংগ্রহে নামেন। রক্ত না পেয়ে গাইনী বিভাগের ইন্টার্ন চিকিৎসক ডা. ওমর ফারুক ও ডা. আপন সাহা ওই রোগীর জন্য রক্ত প্রদান করে। পরে খবর পেয়ে ওই অসহায় রোগীকে রক্তদান করেন দৈনিক রূপসী বাংলার নিজস্ব প্রতিবেদক এম এইচ মনির। কুমেক হাসপাতালের গাইনী বিভাগের প্রধান ডা. করুনা রানী কর্মকারের পরামর্শে বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে ডাক্তার ইশান, ডা. আসমা ও ডা. ইসরাত এর তত্ত্বাবধানে অপারেশন সম্পন্ন করা হয়। কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. বাপ্পী জানান, অপারেশন সম্পন্ন হলেও রোগী এখনও আশংকামুক্ত নন। এ বিষয়ে রোগীর স্বামী সুলতান মিয়া জানান, তিন সন্তানের জননী সেলিনা আক্তারের মঙ্গলবার সকালে প্রচুর বুক ব্যথা শুরু হয়, বাড়িতেই সে অজ্ঞান হয়ে পড়ে। পরে তাকে চান্দিনা সেন্ট্রাল হাসপাতালে নিয়ে আসার পর সেখানকার ডাক্তাররা তাকে কুমিল্লা নিয়ে আসতে বলেন। তাই তাকে কুমিল্লা মুন হাসপাতালে নিয়ে গেলে তার অবস্থা খারাপ দেখে ডাক্তাররা কুমিল্লা মেডিকেল কলেজে নিয়ে আসার পরামর্শ দেন। তিনি আরও জানান, রোগীর জীবন রক্ষার মালিক আল্লাহ, কিন্তু আমার স্ত্রীকে বাঁচাতে ডাক্তাররা নিজের রক্ত দেয়ার পাশাপাশি যে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন এটাকে আমি আল্লাহর রহমত মনে করছি। আমি ডাক্তারদের কাছে কৃতজ্ঞ। তিনি আরো বলেন, সেলিনা তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী। প্রথম স্ত্রী রৌশনারা সন্তান প্রসবের সময় মারা গিয়েছিল। প্রথম স্ত্রীর ২ মেয়ে এক ছেলে রয়েছে। ছেলের জন্মের সময় প্রথম স্ত্রী মারা গিয়েছিল। দ্বিতীয় স্ত্রী সেলিনার ২ ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। ছোট ছেলে সিজানের বয়স ৮ মাস। স্ত্রী সেলিনা অসাবধনতাবশতঃ ্ অন্ত:স্বত্বা হয়েছে।

কুমেক হাসপাতালের গাইনী বিভাগের প্রধান ডা. করুনা রানী কর্মকার জানান, রোগীর গর্ভের সন্তান জরায়ুতে না হয়ে পাশের টিউবে জন্মেছিল, এতে টিউব ফেটে গিয়ে রক্তপাত শুরু হয়। মুমূর্ষু অবস্থায় আমাদের কাছে আসলে আমরা তৎক্ষনিভাবে তার অপারেশন করি। রোগী এখনও আশংকামুক্ত নয়।

আরো পড়ুন