কুমিল্লায় বৈশাখী মেলা না জুয়াড়ীদের উৎসব!
মো. জাকির হোসেনঃ বাঙ্গালী সংস্কৃতির প্রাণ ভ্রোমরা ১ বৈশাখ,আর মেলা হচ্ছে বীণা। কখন বৈশাখ আসবে আর কখন মেলা শুরু হবে এনিয়ে বাংলার ঘরে ঘরে লক্ষ কোটি মানুষের প্রতীক্ষার অবসান ঘটে বাংলা বছরের প্রথম দিন থেকেই। সুপ্রাচীন কাল থেকে সনাতন ধর্মাবলম্বী সম্প্রদায়ের লোকেরা বৈশাখকে কেন্দ্র করে উৎসকেবর প্রহর গুণে আসছে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে সংস্কৃতি থেকে মেলা যেন হারিয়ে গেছে। জেলার সবখানেই বৈশাখী মেলাজুড়ে এখন দেখা মেলে জুয়ার আসর। শিশু থেকে বৃদ্ধ সবাই যেখানে বৈশাখী মেলাকে সংস্কৃতির একটা অংশ বলে আনন্দ করছে, সেখানে প্রতিটি জনপদের মেলাজুড়ে জুয়াড়ীদের পদচারণা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে সংস্কৃতি কতটা নিরাপদ !
এমনই কয়েকটা মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে জেলার কোটবাড়ি সংলগ্ন কালিরবাজার, ময়নামতির হরিণধরা, চান্দিনার মাধাইয়াসহ জেলার বেশ কিছুস্থানে। সকাল থেকে বিভিন্ন পসরা নিয়ে দোকানীরা ভীড় করার পর বেলা বাড়ার সাথে সাথে জুয়াড়ীরাও উপস্থিতি জানান দেয় এসব মেলাজুড়ে।
সরেজমিন ঘুরে গতকাল রোববার সকালে কালিরবাজার এলাকায় বৈশাখী মেলাকে কেন্দ্র করে নানা পসরা নিয়ে ভীড় করে দোকানীরা। বাশি, মাটির তৈরী বিভিন্ন জিনিস,চুরি, জিলাপী, বাদাম অনেক কিছুই মেলার দোকানীদের দোকানে শোভা পায়। দুপুরের পর থেকে দর্শণার্থীর সংখ্যাও বাড়তে থাকে। মেলার আশপাশে ভীড় করে জুয়াড়ীরা।
স্থানীয় দায়িত্বশীল একাধিক সুত্র জানায়, মেলার আশপাশে বেশ ক’টি জুয়ার বোর্ড বসেছে। আর এতে হুমড়ী খেয়ে পড়েছে তরুণ কিশোররা। মেলায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারীবাহিনীর উপস্থিতি খুব একটা চোঁখে পড়েনি। ময়নামতির হরিণধরা গ্রামে অনুষ্ঠিত মেলায় সকাল থেকেই বিভিন্নস্থান থেকে বিক্রেতারা বিভিন্ন ধরণের মালামাল নিয়ে মেলায় ভীড় করে। কেউবা মাটির তৈরী হাঁড়ি-পাতিল,পশু-পাখি, বাশেঁর বাশি বেলুণ, কাগজের খেলনা, চুড়ি, মিষ্টি, বিভিন্ন প্রসাধনী, বাদাম, বুটসহ বিভিন্ন পণ্য বিক্রির জন্য নিয়ে আসে। বেলা বাড়ার সাথে সাথে মেলায় আগত দর্শনার্থীর সংখ্যাও বাড়তে থাকে। মেলায় দেখতে এবং কিছু ক্রয় করতে আসে স্থানীয় বিভিন্ন গ্রামের অনেক শিশু-কিশোর,তরুণরা। গ্রামের সহজসরল এসব শিশু-কিশোররা বৈশাখকে বলতে গেলে মেলা দিয়েই বরণ করে আসছে সুপ্রাচীন কাল থেকে। তবে বিগত সময়ে বৈশাখী মেলা আমাদের যে সংস্কৃতির জানান দেয়,সেটা যেন এখন হারিয়ে গেছে । শিশু কিশোররা এখন আর মেলার পসরা দেখা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার না করে জুয়ার আসরকে ঘিরে থাকা ভীড়ে নিজেদের উপস্থিতি জানান দেয়। এবারের গতকাল রোববার ময়নামতির হরিণধরা মেলায় এমনই চিত্র দেখা গেছে। মেলাজুড়ে দেখা মেলেনি কোন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারীবাহিনীর সদস্যদের। ফলে দুপুর থেকেই মেলার একপাশজুড়ে বসিয়েছে ৪ টি জুয়ার বোর্ড। আর বাড়তে থাকে লোকজনের ভীড়। কেউবা জুয়া খেলে কিছুটা লাভবান হচ্ছে। কেউবা পকেটের সব টাকা খোয়াচ্ছে জুয়ার বোর্ডে। বৈশাখী মেলার আনন্দ বেদনা সব মিলে মিশে একাকার জুয়ার বোর্ডকে ঘিরে।
স্থানীয়রা বলেন, সন্তানদের সংস্কৃতির সাথে পরিচয় করতে আমাদের মেলার এই আয়োজন। তবে শিশু-কিশোররা ঝুঁকছে জুয়া খেলায়। এতে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম বিপদগামী হচ্ছে বলেও তার অভিমত। কালিরবাজার মেলায় কথা হয় রকিব (ছদ্মনাম)নামের এক যুবকের সাথে। তিনি বলেন, প্রকাশ্যে এখানে জুয়া হচ্ছে। কেউ যেন দেখার নেই। তিনি আরো বলেন, প্রতি বৈশাখে মেলার নামে জুয়া খেলাই দেখে আসছি। এথেকে আগামী প্রজন্ম সংস্কৃতির নামে কি শিক্ষা লাভ করছে সেটা বোধগম্য হচ্ছেনা। উল্লেখ্য প্রতিবছরই জেলার প্রতিটি উপজেলার বিভিন্নস্থানে বৈশাখী মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এর সবগুলোতেই জুয়া হচ্ছে আবাধে। জেলার উল্লেখযোগ্য মেলা সদর উপজেলারঃ শাসনগাছা,কালিরবাজার বুড়িচং উপজেলারঃ ময়নামতি, কোরপাই, মোকাম, রাজাপুর, ফকিরাবাজার, ভান্তি চান্দিনারঃ খোশবাস, বেলাশহর, মাধাইয়া, ফাওই, পিরাল্লা, বাংলাবাজার, ব্রাহ্মণপাড়ারঃ শাহেবাবাদ, চান্দলা, দেবিদ্বারেরঃ পোনরা, গুনাইঘর, বরুড়ার পিলগিরি, আগানগর, গইনখালী ইত্যাদি স্থানে বৈশাখকে কেন্দ্র করে মেলা অনুষ্ঠিত হয়।