কুমিল্লা ১০ আসনে আ’লীগের প্রার্থী চূড়ান্ত খবরে এলাকায় তোলপাড়

শাহাজাদা এমরানঃ বৃহস্পতিবার একটি জাতীয় দৈনিকে কুমিল্লার ১১টি সংসদীয় আসনের মধ্যে ১০টি আসনসহ দেশের ১৫১টি সংসদীয় আসনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা(!) প্রকাশ হওয়ার পর কুমিল্লার বিভিন্ন সংসদীয় আসনে চলছে তোলপাড়। বর্তমানে যারা এসব আসনে এমপি হিসেবে আছেন এবং যাদের নাম এ চূড়ান্ত তালিকায় নেই এবং যারা সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে বেশ কয়েক বছর ধরে কাজ করে আসছেন তাদের নামও এই তালিকায় নেই। গত দু’দিন ধরে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে এ রিপোর্টের সত্যতা যাচাই করার চেষ্টা করছেন বর্তমান এমপিদের সমর্থকরা। কুমিল্লার ১০টি সংসদীয় আসনের প্রার্থী তালিকা পত্রিকায় প্রকাশিত হলেও কুমিল্লা-৮ বরুড়া আসনের প্রার্থীর নাম প্রকাশ করা হয়নি। এ আসনে বর্তমান এমপি হলেন জাতীয় পার্টির অধ্যাপক নুরুল ইসলাম মিলন।

কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সূত্রের বরাত দিয়ে পত্রিকায় প্রকাশিত কুমিল্লার ১১টি সংসদীয় আসনের আগামী নির্বাচনের আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থীরা হলেন দাউদকান্দি ও মেঘনা উপজেলা নিয়ে গঠিত কুমিল্লা-১ আসনে বর্তমান এমপি মেজর জেনারেল (অব.) সুবিদ আলী ভূইয়া, হোমনা ও তিতাস উপজেলা নিয়ে গঠিত কুমিল্লা-২ আসনে সেলিমা আহমদ, মুরাদনগর উপজেলা নিয়ে গঠিত কুমিল্লা-৩ আসনে বর্তমান এমপি ইউসুফ আবদুল্লাহ হারুন, দেবিদ্বার উপজেলা নিয়ে গঠিত কুমিল্লা-৪ আসনের বর্তমান এমপি রাজী মোহাম্মদ ফখরুল, বুড়িচং ও ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা নিয়ে গঠিত কুমিল্লা-৫ আসনে বর্তমান এমপি আবদুল মতিন খসরু, আদর্শ সদর উপজেলা ও কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নিয়ে গঠিত কুমিল্লা-৬ আসনে বর্তমান এমপি হাজী আকম বাহা উদ্দিন বাহার, চান্দিনা উপজেলা ও পৌরসভা নিয়ে গঠিত কুমিল্লা-৭ আসনে নবাগত প্রার্থী বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত, লাকসাম ও মনোহরগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত কুমিল্লা-৯ আসনে বর্তমান এমপি তাজুল ইসলাম, নাঙ্গলকোট ও সদর দক্ষিণ উপজেলা নিয়ে গঠিত কুমিল্লা ১০ আসনে পরিকল্পনামন্ত্রী ও বর্তমান এমপি আ হ ম মুস্তফা কামাল ওরফে লোটস কামাল, চৌদ্দগ্রাম উপজেলা ও পৌরসভা নিয়ে গঠিত কুমিল্লা-১১ আসনে রেলমন্ত্রী ও বর্তমান এমপি মুজিবুল হক।

কুমিল্লার এই ১১টি সংসদীয় আসনের মধ্যে চমক রয়েছে মাত্র দুটি আসনে। হোমনা ও তিতাস উপজেলা নিয়ে গঠিত কুমিল্লা-২ আসনে সেলিমা আহমদ ও চান্দিনা উপজেলা ও পৌরসভা নিয়ে গঠিত কুমিল্লা-৭ আসনে প্রাণ গোপাল দত্ত। দুটি আসনের মধ্যে কুমিল্লা-২ আসনের প্রার্থী সেলিমা আহমেদ শুধু ভোটার নয় নির্বাচনী এলাকার অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের প্রথম সারির নেতাদের কাছে একেবারেই অপরিচিত বলে জানা গেছে।

গতকাল শুক্রবার হোমনা ও তিতাসের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে আলাপ করলে পদবীধারী কোনো নেতাই নাম প্রকাশ করে আপাতত বক্তব্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করে প্রায় অভিন্ন সুরে জানান, সেলিমা আহমেদ নামে যে মহিলা দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন বলে বাজারে শোনা যাচ্ছে তার একমাত্র আর একক পরিচয় হচ্ছে তিনি নিটল টাটা গ্রুপের চেয়ারম্যান মাতলুব আহমেদের স্ত্রী। এই ভদ্র মহিলাকে কেউ চেনেন বলে আমরা জানি না। মনোনয়ন পাচ্ছেন এই খবরে গত ২/৩ মাস ধরে তিনি এলাকায় আসছেন। নিজের মতো করে ঘুরছেন। দলের কোনো পর্যায়ের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক রাখেন না। বিক্ষুব্ধ দলীয় নেতাকর্মীরা জানান, যারা সারাজীবন দল করল, দলের জন্য জীবন শেষ করল তাদের বাদ দিয়ে একজন শিল্পপতির স্ত্রীকে যদি দল মনোনয়ন দেয় তাহলে ভবিষ্যতে আর কেউ আওয়ামী লীগ করবে বলে আমাদের জানা নেই।

অপরদিকে, কুমিল্লা-৭ চান্দিনা থেকে গত ৪ বার এমপি হয়েছেন বর্তমান এমপি অধ্যাপক আলী আশরাফ। তিনি সর্বশেষ সংসদের ডেপুটি স্পিকারও ছিলেন। কিন্তু হঠাৎ করে তার জায়গায় বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত মনোনয়ন পেয়েছেন এই খবরে বিনা মেঘে বজ পাতের মতো দুমড়ে-মুচড়ে পড়েছেন অধ্যাপক আলী আশরাফের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা। ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত মনোনয়ন পাওয়ার চেষ্টা করছেন কিন্তু তিনি পেয়ে যাবেন এটা এখনো বিশ্বাস করতে চান না আশরাফ সমর্থকরা।

অধ্যাপক আলী আশরাফ এমপির ডান হাত ও বাম হাত বলে পরিচিত দু’জন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি এই প্রতিবেদককে বলেন, ভাই, নির্বাচনের এখনো অনেক বাকি। দল থেকে আমাদের ৫ বারের নির্বাচিত এমপি মহোদয়কে এখনো কিছু বলা হয়নি। তাই এখনো নাম ম্যানসন করে বক্তব্য দিয়ে হাই কমান্ডের বিরাগভাজন হতে চাই না। আমরা সর্বশেষ খবরের অপেক্ষায় আছি। চান্দিনার আসন পেতে হলে এখানে আলী আশরাফ সাহেবের যে কোনো বিকল্প নেই আশা করি আমাদের নেত্রী সেটা অনুধাবন করবেন।

বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা নিয়ে গঠিত কুমিল্লা-৫ নির্বাচনী এলাকায় পত্রিকার খবর অনুযায়ী এবারো মনোনয়ন পেয়েছেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও বর্তমান এমপি আবদুল মতিন খসরু। এখানে দীর্ঘদিন ধরে গণসংযোগ করে যাচ্ছেন সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম মুক্তিযুদ্ধ ৭১ ’ঢাকা বিভাগের আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার সোহরাব খান চৌধুরী। তার সমর্থকরা এবার আশা করেছিলেন এবার তিনি মনোনয়ন পাবেন। কিন্তু একাধিকবার নির্বাচিত এমপি আবদুল মতিন খসরুই এবারো মনোনয়ন পাচ্ছেন এই খবরে তার কর্মী সমথর্করাও হতাশ বলে জানা গেছে। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য মনোনয়নপ্রত্যাশী ব্যারিস্টার সোহরাব খান চৌধুরী বলেন, নির্বাচনের এখনো অনেক সময় বাকি আছে। মিডিয়াতে অনেক সময় অনেক খবর বের হয়। মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়টি এটাও একটা খবর। মনোনয়ন দেবেন দলীয় সভানেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আমি আমার মতো করে কাজ করে যাচ্ছি। আশা করি নির্বাচন এলে নেত্রী আমাকে মূল্যায়ন করবেন।

এ ছাড়াও মনোনয়ন পেয়ে যাওয়ার খবরে আরো ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন, কুমিল্লা-৩ মুরাদনগর, কুমিল্লা-৪ দেবিদ্বার ও কুমিল্লা-৬ সদরসহ আরো কয়েকটি সংসদীয় আসনের মনোনয়ন না পাওয়া দলীয় সম্ভাব্য প্রার্থী ও তার কর্মী সমর্থকরা। তাদের বক্তব্য, আগে তো দল থেকে মনোনয়ন ফরম বিক্রি করা হতো। সম্ভাব্য প্রার্থীরা ফরম ক্রয় করে দলের কাছে তাদের আগ্রহের কথা জানাতে পারত। আমরা বিশ্বাস করি না যে, পত্রিকায় প্রকাশিত খবর সত্য। বিতর্কের খাতিরে যদি ধরে নেই সত্য তাহলে এটা দলের জন্য যেমন ক্ষতি তেমনি আগামী দিনে ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাকর্মী সৃষ্টি হওয়ার ক্ষেত্রে এক বিশাল প্রতিবন্ধক বলে মনে করেন তারা।

সূত্রঃ মানবকণ্ঠ

আরো পড়ুন