মন্ত্রিসভার ওয়েটিং লিস্টে কুমিল্লার দুই জন !

টানা তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা গত ৭ জানুয়ারি মন্ত্রিসভা গঠন করেন। এরপর থেকেই গুঞ্জন ছিল যে, মন্ত্রিসভার আকার বাড়বে, কাঠামো পরিবর্তন হবে ইত্যাদি। কিন্তু প্রায় সাড়ে চারমাস পর মন্ত্রিসভায় ছোট্ট একটু রদবদল ছাড়া তেমন কোনো পরিবর্তনই আনা হয়নি। যদিও মন্ত্রিসভায় রদবদলের বিষয়টি সবসময়ই আলোচিত হয়ে আসছে। আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো বলছে, মন্ত্রিসভার রদবদলের বিষয়টি তিনি রাজনৈতিক বিষয় হিসেবে বিবেচনা করেন। রাজনৈতিক একটা সুবিধাজনক সময়েই হয়তো এই রদবদলের ব্যাপারে চিন্তা ভাবনা করা হবে। সরকারও চায় মন্ত্রিসভার রদবদলের বিষয়টি সবসময় যেন আলোচিত থাকে। এর লাভ হলো দুটো। একটা হলো যে, মন্ত্রিসভায় যাবার আশায় যারা মন্ত্রী নন তারা অনেক তৎপর থাকেন। দলীয় কার্যক্রমেও তারা সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। বিভিন্ন অনুষ্ঠানেও তাদেরকে সক্রিয় দেখা যায়। দ্বিতীয় বিষয়টি হলো, মন্ত্রিসভা থেকে বাদ পড়ার ভয়ে যারা মন্ত্রী আছেন তারা বাদ পড়ার ভয়ে দায়িত্ব পালনে তৎপর থাকেন। দেখা গেছে যে, মন্ত্রিসভায় রদবদলের একটা আওয়াজ রাখলে সরকার পরিচালনা সহজ হয়।

২০০৯ সাল থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ যে সরকার পরিচালনা করছে এতে একটা নৈর্মন্তিক অনুষঙ্গ ছিল মন্ত্রিসভার রদবদলের গুজব-গুঞ্জন। তবে যেসব গুঞ্জন ছড়িয়েছিল তার অধিকাংশই ভুল প্রমাণিত হয়েছে। কিন্তু তারপরও এই গুঞ্জন রাজনৈতিক বাস্তবতারই একটা দিক।

মন্ত্রিসভার রদবদলের যে আওয়াজ ওঠে সে সবক্ষেত্রে সবসময়ই কতগুলো নাম বারবার আসে। এই নামগুলোর মধ্যে রয়েছে-

আবদুল মতিন খসরু

আবদুল মতিন খসরু ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের আইন প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। তারপর তাকে পূর্ণমন্ত্রী করা হয়েছিল। ওয়ান ইলেভেনের সময় তিনি সংস্কারপন্থিদের দলে ছিলেন না। আওয়ামী লীগ সভাপতির পক্ষে তিনি আইন লড়াইয়ে অংশগ্রহণ করেছিলেন। ২০০৯ এর মন্ত্রিসভা থেকেই তার নাম বারবার আসছিল। সোনা যাচ্ছিল যে, তিনি হয়তো মন্ত্রিসভায় যোগ দেবেন। কিন্তু তৃতীয় মেয়াদের মন্ত্রিসভাতেও তিনি যোগ দেননি। যদিও আওয়ামী লীগের প্রেসেডিয়াম সদস্য হিসেবে সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী সংস্থায় জায়গা পেয়েছেন। কিন্তু মন্ত্রিসভায় তার অন্তর্ভুক্তি না হওয়ায় বিষয়টি একটি অবাক হওয়ার মতো ঘটনাই বটে। একারণে যতবারই মন্ত্রিসভায় রদবদল হয় ততবারই তার নাম আলোচিত হয়।

শেখ ফজলুল করিম সেলিম

শেখ ফজলুল করিম সেলিমও ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তারপর থেকে তিনি আর মন্ত্রিসভায় নাই। গত তিনবারের গঠিত মন্ত্রিসভায় তিনি বারবার আলোচিত ছিলেন। কিন্তু কোনোবারই তিনি মন্ত্রীত্ব পাননি। ধারণা করা হয় যে, আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা দ্বিতীয় দফায় ২০০৯ সালে সরকার গঠন করে একটা নীতি গ্রহণ করেছিলেন যে, তার নিজস্ব আত্মীয় স্বজন কাউকে তিনি মন্ত্রী করবেন না। সে বিবেচনা থেকেই হয়তো শেখ ফজলুল করিম সেলিম মন্ত্রিসভা থেকে বাদ পড়ছেন বারবার, তবে যখনই মন্ত্রিসভার রদবদলের কথা আসে, তখনই তার নাম আলোচনায় আসে।

ইউসুফ হোসেন হুমায়ূন

ইউসুফ হোসেন হুমায়ূন আওয়ামী লীগের প্রেসডিয়াম সদস্য ছিলেন। এখন তিনি উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য। যদিও নির্বাচনে মনোনয়ন পাননি। কিন্তু ওয়ান ইলেভেনে তার ভূমিকার কারণে তাকে মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি বিভিন্ন সময় আলোচিত হয়েছে। যদিও তিনি কখনৈ মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত হননি। তবে তিনি যে শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ তার প্রমাণ হিসেবে তিনি আওয়ামী লীগের প্রেসেডিয়াম সদস্য হয়েছিলেন একবার।

আবুল বাসেত মজুমদার

আবুল বাসেত মজুমদার সুপ্রিম কোর্টে আওয়ামী আইনজীবীদের নেতা। বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। বিভিন্ন সময় মন্ত্রোসভায় রদবদলের ক্ষেত্রে তার নামও গুঞ্জন হিসেবে আসে। কিন্তু তিনি কখনোই মন্ত্রিসভায় স্থান পাননি।

ডা. হাবিবে মিল্লাত

ডা. হাবিবে মিল্লাত হলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের নন্দাই অর্থাৎ ননদের স্বামী। ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফের মেয়েজামাই তিনি। ২০১৪ এবং ২০১৮ দুবারই তিনি এমপি হয়েছেন। এবারের মন্ত্রিসভায় রদবদলের সময়ও তার নাম আলোচনায় এসেছিল। কিন্তু তিনি মন্ত্রীত্ব পাননি। এবার ডা. মুরাদ হাসানকে যখন স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয় থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় তখন আবারও আলোচনায় এসেছেন ডা. হাবিবে মিল্লাত। শেষ পর্যন্ত তিনি সত্যিই মন্ত্রী হবেন নাকি গুঞ্জনই থেকে যাবেন তা সময়ই থেকে যাবে।

অ্যারোমা দত্ত

অ্যারোমা দত্ত এবার মহিলা সাংসদ হিসেবে আলোচিত হন। তিনি এমপি হওয়ার পর থেকেই আলোচনা চলছিল যে, তিনি হয়তো মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাবেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত তিনি মন্ত্রীত্ব পাননি। তবে তিনি প্রধানমন্ত্রীর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

এছাড়াও মন্ত্রিসভায় রদবদলের সময় শামীম ওসমান, মনোনয়নবঞ্চিত জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, বাহাউদ্দিন নাসিম এবং বিএম মোজাম্মেলের নাম আসে। কিন্তু তারা কেউই এখন পর্যন্ত মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত হননি। তাদেরকে চাঙা রাখার জন্যই মন্ত্রিসভার ওয়েটিং লিস্টে তাদের নাম রয়েছে বলে গুঞ্জন ছড়ানো হয় নাকি তারা সত্যিই ওয়েটিং লিস্টে আছেন সেটা জানেন একমাত্র আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।

সূত্রঃ বাংলা ইনসাইডার

আরো পড়ুন