প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা কুমিল্লার লালমাই পাহাড়

ডেস্ক রিপোর্টঃ কুমিল্লার ঐতিহ্য ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের প্রতীক লালমাই পাহাড়। কুমিল্লা সদর, সদর দক্ষিণ ও বরুড়া উপজেলা জুড়ে এই লালমাই পাহাড়টি অবস্থিত। এটি উত্তর- দক্ষিণে ১১ মাইল লম্বা এবং পূর্ব-পশ্চিমে ২ মাইল চওড়া। এ পাহাড়ের মাটি লাল হওয়ায় এর নাম লালমাই। এ পাহাড়ের সর্বোচ্চ উচ্চতা ৫০ ফুট।

কথিত আছে, রাম-রাবণের যুদ্ধে রামের ছোট ভাই লক্ষণ গুরুতর আহত হলে বৈদ্যের নির্দেশ অনুযায়ী বৈশল্যকরণী পাতার রস ক্ষতস্থানে লাগালে লক্ষণ ভালো হয়ে যাবে বলা হয়। কিন্তু বেচারা হনুমান গাছ চিনতে না পেরে হিমালয় পর্বত পুরোটা গাছ তুলে হাতে করে নিয়ে আসে। চিকিৎসার পর আবার পর্বতটা যথাস্থানে নিয়ে যেতে রওয়ানা দেন হনুমান। কিন্তু পথে পর্বতের কিছু অংশ ভেঙ্গে কুমিল্লা সংলগ্ন লমলম সাগরে পড়ে যায়। আর তখন থেকেই এ স্থানের নাম রাখা হয় লালমাই।

এছাড়া শোনা যায় এক রাজার নাকি দুই মেয়ে ছিল। একজনের নাম ছিল লালমতি অন্যজনের নাম ময়নামতি। তাদের নামানুসারেই নাকি এই লালমাই ও ময়নামতি পাহাড়ের নামকরণ করা হয়েছে। লালমাই পাহাড়েরই একটি স্থানের নাম সালমানপুর। এই সালমানপুরেই ২০০৬ সালে চালু হয় ঐতিহ্যবাহী কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়। একই এলাকায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সিসিএন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটও। এখানে রয়েছে শালবন বিহার। পূর্বে এই প্রত্নস্থানটি ‘শালবন রাজাবাড়ি’ নামে পরিচিত ছিল। এর আসল নাম ‘ভবদেব মহাবিহার’। এই বিহারটি খননে পাওয়া গেছে বিপুল পরিমাণ প্রত্নবস্তু, যা এখন ময়নামতি জাদুঘরে শোভা পাচ্ছে। রয়েছে ময়নামতি বৌদ্ধবিহার। এখানে অষ্টম শতকের পুরাকীর্তি রয়েছে। এখানকার বিভিন্ন স্পটের মধ্যে শালবন বিহার ও বৌদ্ধ বিহার অন্যতম। ৩ বৌদ্ধ বিহার থেকে ৩ মাইল উত্তরে দেখতে পাবেন কুটিলামুড়া ও রূপবান মুড়া। এরও উত্তর-পশ্চিমে কুমিল্লা সেনানিবাস এলাকায় অবস্থিত চারপত্র মুড়া। এখানে বনবিভাগ ২টি পিকনিক স্পট চালু করেছে। এখানেই রয়েছে দৃষ্টিনন্দন বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমি (বার্ড)। বার্ডের ভিতরের নয়নাভিরাম রাস্তা দিয়ে সামনে এগুলেই দেখতে পাওয়া যাবে নীলাচল পাহাড়। দু’পাহাড়ের মাঝখানে দেখতে পাওয়া যাবে অনিন্দ্যসুন্দর বনকুটির। চন্ডী মন্দিরদ্বয়ও অবস্থিত এখানে। আর এই চন্ডি মন্দিরদ্বয়ের নামানুসারে এলাকাটি চন্ডিমুড়া নামে বেশ পরিচিত।

লালমাইয়ের পাশেই রয়েছে নূরজাহান ইকো পার্ক, রাজেশপুর ফরেস্ট, সম্রাট আওরঙ্গজেবের ভাই শাহজাদা সুজার নাম অনুসারে নির্মিত শাহ সুজা বাদশাহ্ মসজিদ, রাজা ধর্মমানিক্যের খননকৃত ২৩.১৮ একর আয়তনের ধর্মসাগর, ভাষাসৈনিক ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের বাড়ি, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত ময়নামতি ওয়ার সেমিট্রি, রাণীর বাংলো, ত্রিশ আউলিয়ার মাজার, নারী জাগরণের অন্যতম পথিকৃত নবাব ফয়জুন্নেছার বাড়ি, পাশেই রয়েছে কুমিল্লার সুখ-দুঃখ গাঁথা গোমতী নদী। এছাড়াও রয়েছে কুমিল্লা পৌর শিশু পার্ক, চিড়িয়াখানা ও ঐতিহ্যবাহী কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ।

ঢাকা থেকে কুমিল্লা যাওয়ার জন্য যে কেউ রেলপথ অথবা সড়কপথ বেছে নিতে পারেন। কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে ট্রেনে করে অতি সহজে সরাসরি চলে যেতে পারেন কুমিল্লায়। অথবা সায়েদাবাদ থেকে বাসে করেও যেতে পারেন অনায়াসে।

আরো পড়ুন