কুমিল্লা-৬ বিএনপিতে ইয়াছিন, আওয়ামী লীগে বাহার

ডেস্ক রিপোর্টঃ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে কুমিল্লা-৬ সদর আসনের সম্ভাব্য প্রার্থীরা তাদের তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন। কুমিল্লা দেশের বৃহৎ জেলা। এখানে বর্তমানে ১১টি সংসদীয় আসন। সদর আসনকে কেন্দ্র করেই জেলার অন্য আসনের রাজনীতির সূচক ওঠানামা করে। সদর আসনের শহরাঞ্চলের বৃহদাংশ সিটি করপোরেশনে। শহরের বাইরে বাকি ৬টি ইউনিয়ন।

এই আসনে এখন পর্যন্ত বিএনপি পাঁচবার, আওয়ামী লীগ তিন বার ও জাতীয় পার্টি দুই বার জয়ী হয়।

আওয়ামী লীগঃ এখানে শহরাঞ্চলে আওয়ামী লীগের ভোট বেশি থাকলেও দলীয় কোন্দলে ১৯৭৩ সালের পর ২০০৮ সাল পর্যন্ত টানা পরাজয়বরণ করে আওয়ামী লীগ। ১৯৭৩ সালের নির্বাচনে জেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সভাপতি অধ্যাপক খোরশেদ আলমের পর ২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার আওয়ামী লীগ থেকে সদর আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। দশম সংসদ নির্বাচনে দলের রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী অধ্যক্ষ আফজল খানের ছেলে ব্যবসায়ী নেতা মাসুদ পারভেজ খান ইমরানের সঙ্গে নির্বাচন করে এমপি হন আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আওয়ামী লীগের আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার মনোনয়ন প্রাপ্তিতে অনেকটাই এগিয়ে।

সম্প্রতি মহানগর আওয়ামী লীগ, যুবলীগ কমিটি এসেছে আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের অনুকূলে। কমিটির সভাপতি তিনি, সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন তার ডান হাত বলে খ্যাত আরফানুল হক রিফাত। এ ছাড়া কমিটির অধিকাংশ গুরুত্বপূর্ণ পদ তার পছন্দের লোকদের দখলে। অধ্যক্ষ আফজল খানের মেয়ে গত সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আঞ্জুম সুলতানা সীমাকে করা হয়েছে কমিটির সহসভাপতি।

সদরের ইউনিয়নগুলোতে এমপি বাহার সমর্থিত চেয়ারম্যান, মেম্বার এবং গেল সিটি নির্বাচনে তার সমর্থিত কাউন্সিলরের সংখ্যাও অনেক।

তবে কুমিল্লা আওয়ামী লীগে সাংগঠনিক ও ব্যক্তি দ্বন্দ্ব অনেক পুরনো। এসব দ্বন্দ্ব কখনো চুপসে থাকে, কখনো মাথাচাড়া দেয়। নির্বাচন এলে হাজী বাহার ও আফজল খান দ্বন্দ্বের বিষয়টিই বেশি চাউর হয়। যার প্রভাব পরে গত সিটি ও দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে।

আগামী সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চাইতে পারেন এমন নেতাদের মধ্যে রয়েছেন- কেন্দ্রীয় কৃষক লীগের সহ-সভাপতি ও কুমিল্লা জেলা পরিষদের সাবেক প্রশাসক আলহাজ ওমর ফারুক, আওয়ামী লীগ নেতা আফজল খানের জ্যেষ্ঠপুত্র মাসুদ পারভেজ খান ইমরান ও ভিক্টোরিয়া কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি নূর-উর রহমান মাহমুদ তানিম।

নির্বাচনসহ সার্বিক বিষয়ে আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার এমপি জানান, নির্বাচন করার সম্পূর্ণ প্রস্তুতি তার রয়েছে। তিনি বলেন, বিএনপির সাবেক নৌপরিবহনমন্ত্রী আকবর হোসেন পাঁচবার নির্বাচিত হয়ে যা করতে পারেননি, তিনি আট বছরে তার আট গুণ কাজ করেছেন। আকবর হোসেন গোমতী নদীর ওপর একটি ব্রিজ করতে পারেননি, তিনি তিনটি ব্রিজ করেছেন। আরও একটি ব্রিজ করার পরিকল্পনা রয়েছে। দলীয় প্রতিদ্বন্দ্বীর বিষয়ে বলেন, ‘যারা প্রতিদ্বন্দ্বী তাদের থেকে গত নির্বাচনে দ্বিগুণ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছি। নেত্রী আমাকে কুমিল্লা মহানগরীর দায়িত্ব দিয়েছেন, তাই এখানে কেউ কোনো সমস্যার সৃষ্টি করতে পারবে না।’ তিনি তার দলের প্রতিদ্বন্দ্বীর দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, ‘কুমিল্লায় আর ভাইয়ের রাজনীতি চলবে না, চলবে আপার (দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা) রাজনীতি।’

বিএনপিঃ এই আসন থেকে কেন্দ্রীয় বিএনপির ত্রাণবিষয়ক সম্পাদক ও দক্ষিণ জেলা বিএনপিরও সাধারণ সম্পাদক আমিন-উর রশিদ ইয়াছিন মনোনয়নপ্রাপ্তিতে সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন। তার সাথে দ্বন্দ্ব রয়েছে বিএনপি নেতা ও সিটি মেয়র মনিরুল হক সাক্কুর সঙ্গে। এক পক্ষ সকালে সভা করলে আরেক পক্ষ বিকালে সভা করে।

১৯৭৯ সালের দ্বিতীয় জাতীয় নির্বাচনে লে. কর্নেল (অব.) আকবর হোসেনের জয়ের মধ্যদিয়ে কুমিল্লা সদর আসনটিতে বিএনপির যাত্রা শুরু হয়। ৮৬ এবং ৮৮ সালের দু’টি নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নেয়ায় জাতীয় পার্টির প্রার্থী আনসার আহমেদ আসনটিতে এমপি নির্বাচিত হন। তারপর ৯১, ৯৬ এবং ২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী আকবর হোসেনের টানা বিজয়ের পথ ধরে কুমিল্লা সদর আসন বিএনপির ঘাঁটিতে পরিণত হয়। আর সেই ঘাঁটি বিএনপির অন্তর্কোন্দলের কারণে ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হাতছাড়া হয়। দলীয় কোন্দলের কারণে ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী হাজী ইয়াছিন আওয়ামী লীগের প্রার্থীর কাছে প্রায় ২০ হাজার ভোটের ব্যবধানে হেরেছেন।

কুমিল্লা সদরে বিএনপির বড় শক্তি সিটি মেয়র মনিরুল হক সাক্কু। দলের হাইকমান্ডসহ স্থানীয় সিনিয়র ও দায়িত্বশীল নেতারা মেয়র সাক্কু ও ইয়াছিনের ঐক্য আগামী নির্বাচনে সদরে বিএনপির জন্য বড় ধরনের ফ্যাক্টর বলে মনে করছেন।

আগামী সংসদ নির্বাচনে বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইতে পারেন এমন নেতাদের মধ্যে রয়েছেন- বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক এমপি আলহাজ্ব মনিরুল হক চৌধুরী, তরুণ শিল্পপতি ও এবিএস গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাওসার জামান বাপ্পি, কুমিল্লা জেলা জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের সদস্য ও সাবেক রুলস অ্যান্ড পাবলিকেশন কমিটির চেয়ারম্যান কাইমুল হক রিংকু।

বিএনপি নেতা আমিন-উর রশিদ ইয়াছিন বলেন, ‘কুমিল্লার মানুষ বিএনপিকে ভোট দিতে মুখিয়ে আছে। শুধু সুষ্ঠুভাবে মানুষকে তার ভোট দেওয়ার সুযোগ করে দিতে হবে।’ দলের কোন্দলের বিষয়ে বলেন, ‘কুমিল্লা বিএনপিতে কোনো বিভেদ নেই। সবাই একসঙ্গে কাজ করছি।’

কাওসার জামান বাপ্পী বলেন, ‘বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইব। ম্যাডাম আমাদের পরিবারকে জানেন। দলের মনোনয়ন পেলে অবশ্যই কুমিল্লার আসন আবার বিএনপিতে ফেরত আসবে।’

ন্যাপ (মোজাফফর) থেকে দলের জেলা সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা জাকির হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী ফারুকের নাম শোনা যাচ্ছে। জাসদ থেকে দলের জেলা সাধারণ সম্পাদক কাজী সাইমুল হক ও সিপিবি থেকে জেলা সাধারণ সম্পাদক পরেশ কর মনোনয়ন চাইবেন বলে জানা গেছে। কল্যাণ পার্টি থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী দলের ভাইস চেয়ারম্যান সাহিদুর রহমান তামান্না। সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য এয়ার আহমেদ সেলিম রাজনীতি থেকে দূরে থাকায় সদরে জাতীয় পার্টির আর কারও নাম শোনা যাচ্ছে না।

আরো পড়ুন