কুমিল্লার মনোহরগঞ্জ থানার আনসারের দাপটে তটস্থ এলাকাবাসী
ডেস্ক রিপোর্টঃ কুমিল্লার মনোহরগঞ্জ থানায় কর্মরত আনসার সদস্য নায়েব আলীর দাপটে এলাকার লোকজন ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছে। থানার ওসির বিশ্বাসভাজন হওয়ায় পুলিশ কর্মকর্তাদেরও পাত্তা দিচ্ছেন না তিনি। থানায় জব্দ করা মোটরসাইকেলে চড়ে পুরো এলাকা দাবড়ে বেড়ান। মাঝেমধ্যে তিনি নিজেকে বড় পুলিশ কর্মকর্তা বলেও পরিচয় দেন। অভিযোগ রয়েছে, ওসির নাম ভাঙিয়ে সাধারণ মানুষকে পুলিশি হয়রানির ভয় দেখিয়ে বিপুল পরিমাণ টাকা আদায় করছেন তিনি।
গত বৃহস্পতিবার পুলিশের কোনো সদস্য ছাড়াই থানায় জব্দ করা মোটরসাইকেলযোগে উপজেলার বাইশগাঁও গ্রামের চিহ্নিত মাদক কারবারি জহিরুল ইসলাম জহিরের বাড়িতে যান নায়েব আলী। অভিযোগ রয়েছে, অভিযানের নামে ওই মাদক কারবারিকে ছেড়ে দিয়ে ৫০০ ইয়াবাসহ এক লাখ টাকা আদায় করেন তিনি। বিষয়টি জানতে পেরে এসআই মজিদের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল ওই মাদক কারবারির বাড়ি গিয়ে ঘটনার সত্যতা পান। প্রথমে এ ঘটনা অস্বীকার করলেও পরে থানার ভেতরে বসেই তল্লাশি চালিয়ে নায়েব আলীর কাছে ১০০ পিস ইয়াবা পাওয়া যায়। এ ঘটনায় থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হলেও তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়নি।
মাদক কারবারি জহিরুল ইসলাম জহিরের মা জহুরা বেগম বলেন, ওসি সাহেবের লোক নায়েব আলী জহিরকে প্রথমে মারধর করেন। পরে তাকে গ্রেপ্তারের ভয় দেখিয়ে এক লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়।
মনোহরগঞ্জ থানা পুলিশের একাধিক সদস্য ও ভুক্তভোগী সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ওসির বিশ্বস্ত লোক হওয়ায় নায়েব আলী এলাকায় একের পর এক অপকর্ম করে বেড়াচ্ছেন। আইন-কানুনের কোনো তোয়াক্কা না করে তিনি থানার মালখানার জব্দ করা মোটরসাইকেলে চড়ে পুরো এলাকা দাবড়ে বেড়ান। মোটরসাইকেলের মালখানার পিআর নম্বর ২৭/১৮, যা বাহনের পেছনেই লেখা আছে।
চলতি বছরে উপজেলার সরসপুর এলাকায় পুলিশের ওপর হামলার ঘটনার পর থেকে বিভিন্ন বাড়ি গিয়ে মামলার ভয় দেখিয়ে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে টাকা আদায় করছেন নায়েব আলী। তা ছাড়া তিনি উপজেলার বিভিন্ন বাজারে গিয়েও ওসির নাম ভাঙিয়ে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদা তুলছেন।
এ প্রসঙ্গে জানতে মনোহরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার হোসেনের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। পরে মনোহরগঞ্জ থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) জামির হোসেন জিয়া বলেন, ‘নায়েব আলীর কাছ থেকে ১০০ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে। এরই মধ্যে বিষয়টি আমার ওসি, সার্কেলের সিনিয়র এএসপি, অতিরিক্ত এসপিকে (দক্ষিণ) জানিয়েছি।’ অভিযুক্ত আনসার সদস্য নায়েব আলীর বলেন, ‘ওসি সাহেবের নির্দেশেই আমি ওই মাদক কারবারির বাড়িতে অভিযানে গিয়েছি। আর ওসি সাহেবের অনুমতি নিয়ে জব্দ করা মোটরসাইকেলটি মাঝেমধ্যে চালাই। সেদিন আমার কাছে পাওয়া ইয়াবাগুলো আমি এক মাদক কারবারির কাছ থেকে জব্দ করেছি। তবে তাঁর কাছ থেকে টাকা নেওয়ার অভিযোগটি মোটেও সত্য নয়।’
এ বিষয়ে জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (দক্ষিণ) আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ঘটনাটি তাঁর জানা নেই। তবে এমন ঘটনা ঘটলে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আমরা আনসার কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানাব।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কুষ্টিয়ার সদর উপজেলার মাছপাড়া গ্রামের প্রয়াত আব্দুস সত্তারের ছেলে নায়েব আলী। তিনি ৯০-এর দশকে চরমপন্থী বাহিনীর সদস্য ছিলেন। পরে সরকারের আহ্বানে অস্ত্রসহ আত্মসমর্পণ করায় অন্যদের মতো তাকেও পুলিশের সহযোগী হিসেবে বিশেষ আনসার সদস্য হিসেবে নিয়োগ দিয়ে পুনর্বাসন করা হয়।
সূত্রঃ কালের কণ্ঠ