কুমিল্লায় স্ত্রীর বিরুদ্ধে সুস্থ স্বামীকে রিহ্যাব সেন্টারে ভর্তির অভিযোগ

মো.জাকির হোসেনঃ কুমিল্লার ঐহিত্যবাহী ময়নামতির ফরিজপুর গ্রাম। এই গ্রামের প্রবাস ফেরত জাহাঙ্গীর। বিদেশে সংগৃহীত সব টাকা-পয়সা স্ত্রী নার্গিস আক্তারের কাছে পাঠিয়েছেন। দেশে আসার পর সম্পদের হিসেব চাইলে টালবাহানা করতে থাকে স্ত্রী। এঅবস্থায় নিজেকে নিরাপদ করতে বেছে নেয় প্রতারণার। সুস্থ্য স্বামীকে মাদকাসক্ত বানিয়ে রিহ্যাব সেন্টারে ভর্তির ফাঁদ পাতে। রাতের অন্ধকারে রিহ্যাব সেন্টারের কথিত লোকজন এসে জোর করে ধরে নিয়ে যায়। এসময় জাহাঙ্গীর বারবার নিজেকে মাদকাসক্ত নয় বলে জানালেও প্রতারকরা শুনেনি কোন কথা। পরে জাহাঙ্গীরের কিশোরী মেয়ে সাজিয়া সুলতানার অভিযোগের প্রেক্ষিতে টানা ৪৮ ঘন্টা বিভিন্নস্থানে অভিযান চালিয়ে উদ্ধার করে জাহাঙ্গীরকে। আটক করা হয় স্ত্রী নার্গিসসহ ৪ জনকে।

স্থানীয় বিভিন্ন সুত্র ও পুলিশ জানায়, জেলার বুড়িচং উপজেলার ময়নামতি ইউনিয়নের ফরিজপুর গ্রাম। প্রবাস জীবনে সংগৃহীত অর্থে স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে ভালোই চলছিল দিনকাল। সমস্যা দেখা দেয় প্রবাস জীবনে আয়কৃত অর্থের হিসেব চাওয়ায়।

স্থানীয় একাধিক সুত্র জানায়,প্রবাস জীবনের কষ্টার্জিত অর্থ স্ত্রী নার্গিসের কাছে পাঠায়। দেশে ফিরে হিসেব চাওয়ায় টালবাহানা করতে থাকে। সম্প্রতি এনিয়ে পারিবারিক দ্বন্ধ তীব্র হলে কৌশলের আশ্রয় নেয় স্ত্রী। এরই জের ধরে স্ত্রী নার্গিস স্বামী জাহাঙ্গীরকে মাদকাসক্ত বানিয়ে চুক্তি করে কুমিল্লা শহরতলীর নোয়াপাড়া এলাকায় সাইনবোর্ডবিহীন একটি মাদক নিরাময় কেন্দ্রের সাথে। চুক্তি মোতাবেক ৩১ জানুয়ারী গভীর রাতে মাইক্রোবাস নিয়ে ফরিজপুর গ্রামের জাহাঙ্গীরের বাড়িতে আসে রিহ্যাব সেন্টারের একটি দল। ডেকে দরজা খুলে মুহুর্তের মধ্যে কাবু করে ফেলে জাহাঙ্গীরকে। একপর্যায়ে হাত-পা বেধে নিয়ে যায় রিহ্যাব সেন্টারে। পরে তার মেয়ে সাজিয়া সুলতানা বিষয়টি জানালে নড়েচড়ে বসে থানা পুলিশ। ঘটনার পর মা নার্গিস পালিয়ে যায়। এরপর শুরু হয় পুলিশের তৎপরতা। পুলিশী অভিযানের খবর পেয়ে স্থান বদল করতে থাকে একের পর একস্থান। গত শুক্রবার রাত থেকে শুরু হওয়া অভিযানের এক পর্যায়ে গতকাল রোববার বেলা দুপুরে কুমিল্লা সদর উপজেলার দক্ষিণ দুর্গাপুর ইউনিয়নের দৌলতপুর মসজিদ সংলগ্ন এলাকা থেকে প্রথমে স্ত্রী নার্গিস বেগমকে আটকে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে সদর উপজেলার উত্তর দুর্গাপুর ইউনিয়নের নোয়াপাড়া আঞ্চলিক পাসপোর্ট সংলগ্ন সাহারা ম্যানশনের ৪র্থ তলায় “নিউযত্ন” রিহ্যাব সেন্টার থেকে জাহাঙ্গীরকে উদ্ধার এবং রিহ্যাব সেন্টারের লোকসহ আরো ৩ জনকে আটক করে।

বিষয়টি জানতে চাইলে অপহৃত জাহাঙ্গীরের মেয়ে ঘটনার সত্যতা সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেন। উদ্ধার অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া বুড়িচং দেব্পুর ফাঁড়ির এসআই মোহাম্মদ শাহীন কাদির জানান,ঘটনার পর কোন বিরতি ছাড়াই একটানা ৪৮ ঘন্টা অভিযান চালিয়েছি। বারবার স্থান পরিবর্তন করার কারণে অভিযান দীর্ঘ হয়। পরে স্ত্রীকে আটকের পর অপহৃত জাহাঙ্গীরকে উদ্ধার করি।

বুড়িচং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আকুল চন্দ্র বিশ্বাস ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, এঘটনায় ৪ জনতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে।

আরো পড়ুন