কুমিল্লায় বকেয়া ছাড়াই বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন, কয়েক লক্ষ টাকার ক্ষয়ক্ষতি
আশিকুর রহমানঃ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা শাখা অফিসের গত কয়েকদিনের আচরণে ক্ষুব্ধ উপজেলাবাসী। পল্লী বিদ্যুতের সদস্যদের বিভিন্ন কর্মকান্ডে ক্ষতিগ্রস্থ্য উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের একাধিক পরিবারের লোকজন ও ব্যবসায়ী। বিনা নোটিসে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার কারণে এক পল্ট্রি ব্যবসায়ী সর্ব শান্ত হয়ে পথে বসার উপক্রম হয়েছে। অন্যদিকে এক কনফেকশনারী ব্যবসায়ীর আইসক্রীম ও অনান্য মালামাল নষ্ট হয়ে অর্ধলক্ষ টাকার ক্ষতি অভিযোগও রয়েছে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ ব্রাহ্মণপাড়া শাখার বিরোদ্ধে।
সরজমিনে ঘুরে এলাবাসী সূত্রে জানা যায়, উপজেলার দুলালপুর পশ্চিমপাড়া গ্রামের রসুলের বাড়ীর মৃত রুস্তম মিয়ার ছেলে ও সাহেবাবাদ ডিগ্রি কলেজের স্নাতক ২য় বর্ষের ছাত্র মোঃ আসাদুজ্জামান অনিক এর বয়লার মুরগী ফ্রামে ১৫০০ মুরগী ছিল। যার প্রত্যেকটির আনুমানিক ওজন দেড় থেকে ২ কেজি এবং বিক্রয়ের উপযোগী। গত ১১ জুন দুপুরে পূর্বে কোন নোটিস বিহীন আকষ্মিক ভাবে তার বাড়ীতে গিয়ে অনিকের বয়লার মুরগী ফ্রামের বিদ্যুৎ সংযোগ বিছিন্ন করে দেয়। এতে তার প্রায় ৫০০ মুরগী মারা যায়। যার বর্তমান বাজার মুল্যে প্রায় ২লক্ষ টাকা ক্ষতি হয়। এই ব্যাপারে বয়লার মুরগী ফ্রামের মালিক আসাদুজ্জামান অনিক জানান, তার বাবা মারা যাওয়ার পর সংসারের হাল ধরার জন্য লেখাপড়ার পাশাপাশি যুব উন্নয়ন ও গ্রামীণ ব্যাংক সহ বিভিন্ন এনজিও থেকে লোন নিয়ে বাড়ীর পাশে বয়লার মুরগীর ফ্রাম করে। ফ্রামের আয় দিয়ে পরিবার দৈনন্দিন ব্যায় ও তার লেখাপাড়ার খরচ চলত। এছাড়াও সে তার প্রতি মাসের খরচ মিটিয়ে পল্লী বিদ্যুতের বিলও পরিশোধ করে আসে। এর মধ্যে মুরগীর বয়লারে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ায় পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ ব্রাহ্মণপাড়া অফিস তার কাছ থেকে প্রতি মাসে জরিমান বাবদ বিদ্যুৎ বিলের পাশাপাশি ভাড়তি ৩ হাজার ১০ টাকা নিয়ে আসছে। গত ১১ জুন সোমবার দুপুরে পল্লী বিদ্যুতের লোকজন পূর্বের এক মাসের বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকায় কোন রকম নোটিস বিহীন তার বয়লার মুরগী ফ্রামের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। এতে তার ফ্রামের প্রায় ৫০০ মুরগী মরে ২ লক্ষ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়।
অপরদিকে উপজেলা সাহেবাবাদ গ্রামের মৃত শাহ আলম মাস্টারের ছেলে ব্রাহ্মণবাড়ীয়া পুলিশ লাইনে কর্মরত পুলিশ সদস্য শাহ আলীমুল রাজিব জানান, উপজেলার সাহেবাবাদ ডিগ্রি কলেজের সামনের কুমিল্লা মিরপুর সড়কে ব্রাহ্মণপাড়া পল্লী বিদ্যুতের পিক্যাপ ভ্যানেটি আমার মটর সাইকেলে চাপা দেয়। এসময় মটর সাইকেলে আমি ও আমার বড় বোন সায়মা সুলতানা ছিল। আমি ও আমার বোড় বোনকে চাপা দেওয়ায় এই নিয়ে পুল্লী বিদ্যুতের লোকজনের সাথে আমার কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে উভয় পক্ষের মাধ্যে হাতা হাতি হয় এবং আমি ও আমার বড় বোনকে বিভিন্ন ভাবে নাজেহাল করে ও বিভিন্ন অশালিন ভাষায় কথাবার্তা বলে পল্লী বিদ্যুতের এজিএম প্রকৌশলী দিপক কুমার সিংহ, জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ার আনোয়ারুল হক, লাইনম্যান মিজানুর রহমান, মিটার রিডার কাম ম্যাসেঞ্জার মোয়াজ্জেম হোসেন ও পিক্যাপ ভ্যানের চালক মোঃ শাহ আলম। পরে পল্লী বিদ্যুতের লোকজন ক্ষোব্ধ হয়ে কোন বকেয়া বিল না থাকলেও আমার বাড়ীর বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। পাশাপাশি আমার ছোট ভাই সাহেবাবাদ বাজারের ব্যবসায়ী শাহ আলীমুল রাকিব এর কনফেকশনারী দোকানের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। এতে আমার ছোট ভাইয়ের দোকানের ফ্রিজে থাকা প্রায় অর্ধলক্ষ টাকার আইসক্রীম এবং দধি ও বিভিন্ন মালামল নষ্ট হয়ে যায়। এছাড়াও উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বিনা নোটিসে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার কারণে উপজেলার সাধারণ মানুষ পল্লী বিদ্যুতের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করছে।
এই ব্যাপারে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ ব্রাহ্মণপাড়া শাখার এজিএম কম দিপক কুমার সিংহ বলেন, আমাদের পিক্যাপ ভ্যানটির সাথে পুলিশ সদস্য রাজিবের মটর সাইকেল লাগায় সে ক্ষুব্ধ হয়ে আমাদের সাথে খারাপ আচরন করে। এই নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে হট্টোগুল হয়। আমাদের সাথে তারা আচরণ খারাপ করায় আমরা দাপ্তরিক ভাবে তাদের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেই এবং রাজিবের বিরোদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ প্রদান করি। অপরদিকে পল্লী বিদ্যুতের ডিজিএম মোঃ ইউনুছ বলেন, দুলালপুরের বয়লার মুরগী ফ্রামের ঘটনাটি আমি শুনেছি। কিন্তু দাপ্তরিক কাজে অনুমতি থাকায় এবং তার এক মাসের বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকায় তার বিদ্যুৎ সংযোগটি বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে।