কুমিল্লা বরুড়ার লতি রপ্তানি হচ্ছে বিদেশে
সুজন মজুমদারঃ বিদেশেও জনপ্রিয় হয়ে উঠছে বরুড়ার কচুর লতি। কচুর লতি দিন বদলে দিয়েছে বরুড়ার উপজেলার কৃষকদেরকে। দেশের চাহিদা মিটিয়ে গত কয়েক বছর ধরে এই লতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, কানাডা, জার্মানি, ডেনর্মাক, সুইডেন ও মধ্যপ্রাচ্যসহ প্রায় ২৫টি দেশে রফতানি হচ্ছে। এছাড়াও দেশের কাপর তৈরীর কারখানায় রং এর সাথে ব্যবহার হয় কচুর লতির কস। সেদিক থেকেও রয়েছে ব্যাপক চাহিদা।
বরুড়া উপজেলার কচুর লতি অত্যন্ত সুস্বাদু হওয়ায় দেশ-বিদেশেও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে, বেড়েছে রফতানির চাহিদাও। এছাড়াও কম খরচে কম পরিশ্রমে বেশি লাভ হওয়ায় কৃষকদের মাঝেও লতি চাষের আগ্রহ দিন দিন বেড়েই চলচে। কৃষকরা জানান, এক বিঘা জমিতে কচু চাষে খরচ হয় প্রায় ২৪ থেকে ২৫ হাজার টাকা। আর লতি বিক্রি করেই ওঠে আসে সেই খরচ। লাভের বেশী অংশ হিসেবে প্রতি বিঘা জমির শুধু কচু বিক্রি করা যায় কমপক্ষে ৬৫ হাজার থেকে ৮০ টাকা। বর্তমানে লতি ও কচুর ব্যাপক চাহিদা থাকায় কৃষকরা লতি ও কচু তোলে স্থানীয় কাদবা দেওড়া, বরুড়া বাজার, বাতাইছড়ি বাজার, মন্তুর বাজার, কালির বাজার, শরাফিত পদুয়ার বাজার, হরিপুর বাজার, রামমোহন বাজার, ঝলম বাজার ও চান্দিনা উপজেলার নিমসারসহ বিভিন্ন বাজারে নিয়ে বিক্রি করেন।
বরুড়া উপজেলার ভবানীপুর, বিজয়পুর, মধুপুর, দরগাহ নামা, আদিনামুড়া, মোড়াবাজাল, বাতাইছড়ি, পোমতলা, ঝাঁলগাও, বরাইপুর, শরাফতি, পাক্কামোড়া, লইপুরা, মুগুজি, কসামি, নিশ্চিন্তপুর, পুরান কাদবা, যশপুর, পেনুয়া, করিয়াগ্রাম, হুরুয়া, পাঠানপাড়া, নয়নতলা, শাকপুর, লক্ষ্মীপুর, মহিতপুর, আমড়াতলী, ফলকামুড়ি, নলুয়া, লালমাই পাহার (বরুড়ার অংশে) খোশবাসসহ বিভিন্ন গ্রামে কচুর লতি চাষ হয়।
বরুড়ার বিজয়পুর গ্রামের কৃষক ইলিয়াছ কাঞ্চন জানান, বছরের ৬ মাস এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত লতি চাষের মৌসুম। কিন্তু এখন সারা বছর এর ফলন পাওয়া যায়। শুধু বরুড়ার বাতাইছড়ি ও পদুয়ার বাজার থেকে কারবারীরা মৌসুমে প্রতিদিন ৭০ থেকে ৮০ টন লতি ক্রয় করে দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠাচ্ছেন। প্রতি কেজি লতি বিক্রি হয় ২৫ থেকে ৪০ টাকায়। দাম সব সময় ভালো থাকে বলে জানান তিনি।
বরুড়া উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম জানান, এখানকার মাটি কচুর লতি চাষের জন্য উপযোগী হওয়ায় প্রায় প্রতিটি ইউনিয়নেই এর আবাদ হচ্ছে। গত বছর ১০০ হেক্টর জমিতে কচুর লতি আবাদ হয়। চলতি বছরে লক্ষমাত্রা ১৪০ হেক্টর থাকলেও ১২০ হেক্টর জমিতে কচুর লতি আবাদ হয়েছে। প্রতি বিঘা জমিতে গোবর, ডিএপি, পটাশ, জিপসাম, ইউরিয়া বাবদ ২৪ থেকে ২৫ হাজার টাকা খরচ করে লতি বিক্রি হচ্ছে ৪৮ থেকে ৫০ হাজার টাকায়। প্রতি বিঘা জমিতে ৩ থেকে ৪ হাজার কেজি কচুর লতি পেয়ে থাকেন কৃষকরা।