দেবিদ্বারে ধুলায় বিপর্যস্ত জনজীবন
ডেস্ক রিপোর্টঃ কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়ক সংস্কার কাজে খুঁড়ে রাখা সড়কের ধুলাবালিতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন।
ধুলায় বিপন্ন সড়কে বিশেষ ব্যবস্থায় নিয়মিত পানি না ছিটানো, অপরিকল্পিতভাবে সড়ক খোঁড়াখুঁড়ি ও যেখানে সেখানে নির্মাণ সামগ্রী ফেলে রাখার মতো অনিয়ন্ত্রিত কর্মকাণ্ডের ফলে দেবিদ্বারে ‘ধুলা দূষণ’ নিত্যদিনের ঘটনা। অস্বাস্থ্যকর কর্মকাণ্ডের কারণে দেবিদ্বারে বায়ুদূষণ ভয়াবহ পর্যায়ে পৌঁছেছে বলে দাবি এলাকাবাসীর।
ধুলা ও বায়ুদূষণের মাত্রা দিন দিন বাড়ছে এবং এটি জনস্বাস্থ্যের জন্য বেশ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে বলে স্বীকার করেছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, ধুলায় উপজেলা সদরে সরকারি হাসপাতালসহ বিভিন্ন প্রাইভেট হাসপাতাল, এসএ সরকারি কলেজ, রেয়াজউদ্দিন স্কুল, মহিলা কলেজ, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কোমলমতী শিক্ষার্থীসহ রোগীদের দুর্ভোগ বাড়িয়েছে চরমে। ধুলার কবলে পড়ে এ সড়কে চলাচলকারী সাধারণ মানুষ ও শিক্ষার্থীদের নাকে হাত দিয়ে চলাচল করতে হয়।
চিকিৎসকরা বলছেন, জনস্বাস্থ্যের জন্য বড় হুমকি হয়ে উঠেছে ‘ধুলা দূষণ’। বিশেষ করে শ্বাসকষ্ট ও হৃদরাগের প্রকোপ দ্রুত বেড়ে যাওয়ার পেছনে বায়ুর সঙ্গে মিশে থাকা নানা রাসায়নিক দূষণই দায়ী।
এ ক্ষেত্রে ধুলা ও পরিবহন থেকে নির্গত ধোয়া অন্যতম। যানজটের সময় দূষণের মাত্রা থাকে সব চেয়ে ক্ষতিকর পর্যায়ে। সড়ক সংস্কারের কারণে থেমে থাকা পরিবহন থেকে নির্গত ধোঁয়ায় দূষণের মাত্রা বেশি থাকে। এর ওপর একই সময় একই স্থানে অনেক পরিবহনের ইঞ্জিন থেকে নির্গত বর্জ্য ধোয়া একই এলাকায় ঘুরপাক খেয়ে ওই এলাকার জনস্বাস্থ্যকে আরো বেশি ক্ষতির মুখে ঠেলে দেয়।
এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বায়ুদূষণের কারণে বাংলাদেশে বছরে এক লাখ ২২ হাজার ৪০০ মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। আর বায়ুদূষণের কারণে শিশুমৃত্যুর হারের দিক থেকে পাকিস্তানের পরেই বাংলাদেশের অবস্থান।
দেবিদ্বার উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আবুল কাশেম ওমানী বলেন, ধুলা ও ধোঁয়ার কারণে পরিবেশ বিপদের মুখে পড়েছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের তেমন কোনো ব্যবস্থা দেখা যাচ্ছে না। পরিবেশ বিষয়ে নাগরিক সচেতনতা তৈরির জন্য সরকার, বেসরকারি সংগঠন ও সচেতন মহলকে আরো দায়িত্বশীল হতে হবে।
বায়ুদূষণ বিশেষজ্ঞরা জানান, বাতাসে নাইট্রোজেন, অক্সিজেন, কার্বন ডাই-অক্সাইড, কার্বন মনোক্সাইড, হিলিয়াম, নিয়ন, আর্গন, সিসা, তামা, ক্যাডমিয়াম, নিকেল, ধুলিকণা থাকে। প্রতিটি উপাদানের একটি সহনীয় মাত্রা রয়েছে। কোনো উপাদান ওই মাত্রার বেশি বা ক্ষেত্রবিশেষে কম হলে তা বায়ুদূষণের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
পরিবেশবিদরা বলেন, ডিজেল- পেট্রল-অকটেন চালিত পরিবহন বা কলকারখানা থেকে নির্গত কালো ধোঁয়া বাতাসকে দূষিত করে। রাস্তাঘাটে জমে থাকা ধুলা, সড়ক মেরামতের সামগ্রী, নির্মাণসামগ্রী সময়মতো অপসারণ না করা বা সঠিকভাবে ঢেকে না রাখার কারণেও বায়ুদূষণ হচ্ছে। দূষণ জনস্বাস্থ্য ও অর্থনীতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
দেবিদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আহমেদ কবীর জানান, ধুয়া ও ধুলাজনিত দূষণের ফলে শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি, অ্যাজমা, শিশুদের নিউমোউনিয়া, চক্ষুরোগ প্রভৃতি রোগের জীবাণু ছড়ায়। রাস্তার পাশের বা ফুটপাতের দোকানে রাখা খাবারও ধোঁয়া-ধুলায় দূষিত বা বিষাক্ত হয়ে পড়ে। এসব খেয়ে মানুষ রোগাক্রান্ত হয়ে পড়ে। দূষণজনিত কারণে ক্যান্সারসহ নানা জটিল রোগ দেখা দিতে পারে।
দেবিদ্বারের ইউএনও রাকিব হাসান জানান, ধুলা পরিবেশের জন্য হুমকি। পৌরসভা থেকে মাঝে মাঝে পানি দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়।
সূত্রঃ ডেইলি বাংলাদেশ