কুমিল্লায় মানা হচ্ছে না লকডাউন, নিশ্চিত হচ্ছে না সামাজিক দূরত্ব
মহামারী করোনা ভাইরাস থেকে বাঁচার জন্য সামাজিক দূরুত্ব নিশ্চিত করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু কুমিল্লা নগরীর কাঁচাবাজারগুলোতে মানা হচ্ছে না সামাজিক দূরত্ব। আজ দুপুরে সরেজমিনে তিনটি বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। অপরদিকে শহরে চলছে বিভিন্ন ধরনের যানবাহন। কেউ আবার ঘুরছেন হ্যান্ড গ্লাভস ও মাস্ক ছাড়াই। দুপুর সাড়ে বারোটায় কুমিল্লা নগরীর বাদশা মিয়া বাজার এলাকায় শাসনগাছা রেল ওভারপাসের নিচের কাঁচাবাজারে প্রচুর মানুষের ভিড় লক্ষ করা গেছে। এদের মধ্যে অনেকেই গ্লাভস ও ফেস মাস্ক ছাড়া বাজারে আসতে দেখা গেছে। তাছাড়া, সামাজিক দূরত্বের যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল তা কোনোভাবেই মানা হচ্ছে না। রাজগঞ্জ মাছ বাজারেও একই চিত্র লক্ষ করা গেছে। মাছ ব্যবসায়ীদের আগের মতই এলোমেলোভাবে বসে মাছ বিক্রি করতে দেখা গেছে। অল্প জায়গা হওয়াতে সেখানে মানুষের ভির লেগে যায়। যার কারণে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না।
নগরের রানীরবাজার এলাকাতেও একই অবস্থা। তবে, নগরীর কান্দিরপাড় সিটি মার্কেট এর সামনে স্থানান্তরিত নিউমার্কেটের কাঁচাবাজারে তেমন ভিড় দেখা যায়নি। অপরদিকে, বাদশা মিয়ার বাজার এলাকায় যে লেবুর হালি ১৫ টাকা সেই লেবু নিউ মার্কেট ৩০ টাকা এবং রাজগঞ্জ বাজারে ২৫ টাকা করে বিক্রি করতে দেখা গেছে। নগরীর ফৌজদারি মোড়, সিটি কর্পোরেশনের সামনের সড়ক, কান্দিরপাড় থেকে রানির বাজার সড়কে প্রচুর যানবাহন দেখা গেছে। শাসনগাছা বাস টার্মিনাল এলাকায় প্রচুর ব্যাটারিচালিত অটোরিক্সা এবং ব্রাহ্মণপাড়া বুড়িচং রোডের মাথায় প্রচুর সিএনজি চালিত অটোরিকশার দেখা গেছে।
কুমিল্লা প্রেসক্লাব ও শিল্পকলা একাডেমির সামনে পুলিশের চেকপোস্ট, শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়াম এর সামনে সেনাবাহিনীর টহল গাড়ি থাকায় ওই এলাকায় জনসাধারণ ও যানবাহনের উপস্থিতি খুবই কম ছিল। অপরদিকে বাদশা মিয়া বাজার এলাকার জুতার দোকান সহ কুমিল্লা নগরীর বিভিন্ন সড়কের পাশে বিভিন্ন ইলেকট্রনিক্স সহ দোকানপাট খোলা থাকতে দেখা গেছে। কিছু কিছু দোকানের সামনে শাটার নামিয়ে ক্রেতাদের জন্য ব্যবসায়ীদের অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। ক্রেতা আসলে দোকানের শাটার খুলে পণ্য বিক্রি করছেন তারা।
বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাস থেকে মুক্ত থাকার জন্য সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করার জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও বাংলাদেশ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সহ স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলছেন, করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধ করার জন্য সোশ্যাল ডিসট্যান্স বা সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। কিন্তু সামাজিক দূরত্ব ব্যাপারটা কী? বিশেষজ্ঞদের মতে এটা হলো নিজের বাসায় থাকা, ভিড়ে না যাওয়া, একজন আরেকজনকে স্পর্শ না করা।
কুমিল্লা জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করার জন্য শুরু থেকে প্রচারপত্র বিলি ও মাইকিং করা হয়েছে। বিশেষ জরুরী কাজ ছাড়া ঘর থেকে বের না হওয়ার জন্য আহবান জানানো হয়েছে। কিন্তু জনসাধারণ কিছুতেই সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করে চলাচল করছেন না। সামাজিক দূরুত্ব না মানলে করোনা ভাইরাস এর ঝুঁকি অনেকটাই বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের ৩ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সরকার মাহমুদ জাবেদ বলেন, বাদশা মিয়ার বাজার সড়কটি অনেকটা সরু হওয়ায় সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করা যেত না। যার কারণে কুমিল্লা সদর আসনের সংসদ সদস্য আকম বাহাউদ্দিন বাহার, ব্যবসায়ী সমিতি ও প্রশাসনের সিদ্ধান্তক্রমে বাদশা মিয়ার বাজারের কাঁচা বাজার টি স্থানান্তরিত করে ওভারপাসের নিচের মূল সড়কে নিয়ে আসা হয়। এখানেও সামাজিক দূরত্ব আইন মানা হচ্ছে না। প্রশাসনের পাশাপাশি আমি নিজেও প্রতিদিন বাজার পরিদর্শন ও মাইকিং করে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করার আহ্বান জানাচ্ছি কিন্তু জনসাধারণ তা কিছুতেই মানছেন না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কুমিল্লা নগরীর বিশিষ্ট মেডিসিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও কুমিল্লা সান মেডিকেল হসপিটালের স্বত্বাধিকারী প্রফেসর ডাক্তার মোঃ আব্দুল লতিফ বলেন, আমরা এখন করোনা পরিস্থিতির স্টেজ-৪ এ অবস্থান করছি। এখন করোনা ভাইরাস এর কমিউনিটি ট্রান্সমিশন হচ্ছে। লকডাউন ও সামাজিক দূরত্ব মেনে না চললে করুণায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা জ্যামিতিক হারে বেড়ে যাবে। যার কারণে করোনা পরিস্থিতি দেশে মহাদুর্যোগ আকারের পরিণত হতে পারে। তিনি আরো বলেন সরকারের ছুটি ঘোষণা মানে হাটাহাটি অবাধ চলাচল করা নয়। সাধারণ ছুটি না বললে সরকারের উচিত লকডাউন বলা।