৪৫টি অভিযানে ১৩৯টি প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা
বিল্লাল হোসেন রাজুঃ ২০১৭ সালের জানুয়ারী থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত ৪৫টি অভিযান পরিচালনা করে ১৩৯টি প্রতিষ্ঠানকে ৩লাখ ৭৬ হাজার ৫শ টাকা জরিমানা করা করে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর কুমিল্লা জেলা। অন্যদিকে ভোক্তা অধিকার আইন অনুযায়ী কুমিল্লা জেলা কার্যালয়ে ১৩৭টি অভিযোগ দায়ের করে ভোক্তারা। অভিযোগগুলোর মধ্যে আমলযোগ্য ৪৩টি অভিযোগ আমলে নিয়ে ৩৭টি প্রতিষ্ঠানকে ১ লাখ ৪৮ হাজার ৫শ টাকা জরিমানা করা অধিদপ্তর। ভোক্তা অধিকার আইনের ৭৬(৪) ধারা অনুসারে দায়েরকৃত আমলযোগ্য অভিযোগ তদন্ত করে প্রতিষ্ঠানগুলোকে জরিমানা করা হয়। আদায়কৃত জরিমানার ২৫ শতাংশ তাৎক্ষণিকভাবে ৪৩জন অভিযোগকারীকে ৩৭ হাজার ১শ ২৫ টাকা প্রদান করা হয়। অভিযোগকৃত আরো ১৯টি অভিযোগ তদন্ত প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
এদিকে আরো জানা যায়, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৫২টি অভিযোন পরিচালনা করে ১০৭টি প্রতিষ্ঠান ৪লাখ ৮২ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। সব শ্রেণির নাগরিকদের কাছে ভোক্তা অধিকার আইন পৌঁছে দিতে বৃহৎ প্রচারের জন্য ৯হাজার প্যাম্পলেট, ৯হাজার লিফলেট ও ১ হাজার পোষ্টার বিতরণ করা হয়। জেলা কার্যালয়ে ১টি ও প্রত্যেক উপজেলা পর্যায়ে ১৭টি সেমিনার ও ১৭টি আলোচনা সভার আয়োজন করে কুমিল্লা জেলা ভোক্তা অধিদপ্তর। ভোক্তা অধিকার আইন অনুসারে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর কুমিল্লা কার্যালয়ে ২০১৫ সালে অভিযোগ জমা হয় ১টি, ২০১৬ সালে অভিযোগ জমা হয় ৮টি ও শুধু ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত ১৩৭টি অভিযোগ দায়ের করে ভোক্তারা।
অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ভোক্তারা কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলে ঘটনা সংঘটনের ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে অধিদপ্তরে লিখিতভাবে, ফ্যাক্সের মাধ্যমে, ই-মেইলের মাধ্যমে অথবা এসএমএসের মাধ্যমে অভিযোগ জানাতে পারবেন। তবে অভিযোগকারীর কাছে প্রমাণ থাকা লাগবে। যেমন বাজার থেকে কোনো পণ্য কিনে রসিদ না নিলে সেটার প্রমাণ থাকে না। ফলে বিক্রেতা যে নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি নিয়েছেন, সেটি প্রমাণ করা অসম্ভব হয়ে যায়। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনের অনেকগুলো ধারায় অধিদপ্তর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য অপরাধগুলো হলো ধার্যকৃত মূল্যের অধিক মূল্যে পণ্য বিক্রি করা, ভেজাল পণ্য বা ওষুধ বিক্রি করা, খাদ্যপণ্যে নিষিদ্ধদ্রব্যের মিশ্রণ, অবৈধ প্রক্রিয়ায় পণ্য উৎপাদন বা প্রক্রিয়াকরণ, মিথ্যা বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রতারিত করা, ওজনে কারচুপি, বাটখারা বা ওজন পরিমাপক যন্ত্রে কারচুপি, মেয়াদ উত্তীর্ণ কোনো পণ্য বা ওষুধ বিক্রি ইত্যাদি।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর কুমিল্লা জেলা কার্যালয়ের নির্বাহী পরিচালক মোঃ আছাদুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা অভিযোগ পেলে দুই সপ্তাহের মধ্যে নিষ্পত্তি করি। তবে জটিল কিছু হলে একটু সময় লাগে।’ কোন প্রতিষ্ঠান অভিযুক্ত হলে জারিমানা করার ক্ষেত্রে প্রথমবার আমরা সহনশীল অবস্থায় থাকি। একই অপরাধ ২য় বার করলে জরিমানার পরিমান দ্বিগুন হয়। একই প্রতিষ্ঠান যদি একই অভিযোগে ৩য় বার অভিযুক্ত হয় তবে ওই প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা সহ সিলগালা করার আইন রয়েছে। তিনি আরো বলেন, কুমিল্লার স্বনামধন্য বেশ কয়েটি প্রতিষ্ঠানকে ২য় বার জরিমানা করা হয়েছে। আমাদের কাজই হচ্ছে প্রতিকার, প্রতিরোধ ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ করা। কোন ব্যবসায়ী আমাদের শত্রু না । ভোক্তার অধিকার নিশ্চিত করা আমাদের দায়িত্ব।
উল্লেখ্য, ২০০৯ সালে সরকার ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন করার পর এর অধীনে গঠিত হয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। ২০১০ সালের ৬ এপ্রিল বাজারে অভিযান চালিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যক্রম শুরু হলেও এ সংস্থাটি কার্যক্রম কুমিল্লায় শুরু হয় ২০১৫ সালে।