ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আ.লীগের তৃণমূলে ভরসা তাহের পরিবার
আগামী ১০ ডিসেম্বর ভোটেরদিন নির্ধারন করে ব্রাক্ষ্মনপাড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে উপনির্বাচনের তফশিল ঘোষণা করা হয়েছে। ঘোষিত তফশিল অনুযায়ী মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ তারিখ ১৫ নভেম্বর, মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের তারিখ ১৭ নভেম্বর, প্রার্থীতা প্রত্যাহার ২৩ নভেম্বর।
ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা পরিষদ উপ-নির্বাচনকে ঘিরে মনোনয়ন দৌঁড়ের তোড়জোর চলছে। নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে মাত্র এক বছর চার মাস পর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আওয়ামীলীগ নেতা আলহাজ মো. আবু তাহের মারা যাবার পর থেকেই আওয়ামীগ ও বিএনপির প্রার্থীরা মনোনয়নের জন্য দৌঁড়ঝাপ শুরু করেছেন। এ উপজেলায় আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির প্রায় সমান অবস্থান বলে নির্বাচনে যোগ্য প্রার্থী মনোনয়নও একটি বড় ফ্যক্টর বলে মনে করছেন ভোটার ও তৃণমূল নেতাকর্মীরা। যোগ্য প্রার্থী না হলে যে কোন দলেই ঘটতে পারে বড় দুর্ঘটনা।
এ উপজেলা পরিষদে উপ-নির্বাচন হলেও অনেক দিন মেয়াদ থাকায় নির্বাচনটি আওয়ামীলীগ ও বিএনপির কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
জানা গেছে, আলহাজ্ব মো. আবু তাহের মারা যাবার পরই নির্বাচনকে ঘিরে দুই দলেই জোর তৎপরতা শুরু হয়েছে। বিএনপি তাদের প্রার্থীকে উপজেলা পর্যায়ে মনোনীত করতে দফায় দফায় বৈঠক করছে। বিএনপির প্রার্থী হিসেবে উপজেলা বিএনপির সভাপতি সরকার জহিরুল হক মিঠুন ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক মহসীন কবীর সরকারের নাম জোর আলোচনা হচ্ছে। উপজেলা বিএনপির সভায় জহিরুল হক মিঠুনের নাম চুড়ান্ত করা হয়েছে। অপরদিকে মহসীন কবির ও কেন্দ্রে লবিং করছে। তবে বিএনপির কাছে আওয়ামীলীগের চাইতেও প্রয়াত চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মো. আবু তাহের পরিবারই মূল আতংক। আবু তাহের পরিবারের কেউ মনোনয়ন না পেলে তাদের কাছে অনেকটা পথ পরিস্কার বলে জানান নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একধিক শীর্ষ নেতা।
অপর দিকে উপজেলা আওয়ামীলীগও বর্ধিত সভা করে তাদের প্রার্থীর একটি তালিকা জেলায় প্রেরণ করেছে। জেলা থেকে তা কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে। গত ১৬ সেপ্টেম্বর আলহাজ্ব মো. আবু তাহের মারা যান। তিনি মারা যাবার ১৩ দিনের মাথায় উপজেলা আওয়ামীলীগ বর্ধিত সভা করে প্রার্থীর নাম পাঠায়। এতে আবু তাহের পরিবারের কাউকে রাখা হয়নি। উপজেলা আওয়ামীলীগের বর্তমান সভাপতি জাহাঙ্গীর খান চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক এড্.আবদুল বারী ও মনিরুল হকের নাম পাঠানো হয় বলে জানা গেছে। এ নিয়ে ওই বর্ধিত সভায়ই হট্টগোল হয়। সভার তৃণমূল নেতাকর্মীদের দাবি ছিল আবু তাহের পবিবার থেকে মনোনয়ন না দিলে বিজয় আনা কঠিন হবে। তাই আবু তাহেরর ছোট ভাই বিশিষ্ট শিল্পপতি, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক অর্থ সম্পাদক, সমাজ সেবক আলহাজ্ব মো. আবু জাহের অথবা আবু তাহের ছেলে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ক্লীন ইমেজের ছাত্রনেতা আবু তৈয়ব অপিকে মনোনয়ন দেয়ার দাবি ছিল। সেই দাবিকে উপেক্ষা করায় নেতাকর্মীদের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
নাম প্রকাশ না করারা শর্তে বেশ কয়েকজন শীর্ষপর্যায়ের নেতা জানান, উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর খান চৌধুরী নানা কারণে বিতর্কিত ব্যক্তি। এর আগেও তিনি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান থাকায় মাদক, দুর্নীতিসহ অনেক বিতর্কের সৃষ্টি করেছেন। তার চেয়ে বড় কথা চট্টগ্রাম বিভাগে মাদক, চোরাকারবারী ও তাদের পৃষ্ঠপোষককারীদের চিহ্নিত করতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের তালিকায় ১২ নম্বরে জাহাঙ্গীর খান চৌধুরীর নাম রয়েছে। এসব কারণে তিনি উপজেলাজুড়ে এক বিতর্কিত ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত। তার ইমেজও জনগণের কাছে তলানীতে রয়েছে। সে কারনে বিগত নির্বাচনে বিপুল ভোটে পরাজিত হন। গত নির্বাচনের পর তিনি এলাকায় তেমন আসেননি। আর বাকি দুই প্রার্থী বিএনপির প্রার্থীদের চাইতে কম পরিচিত বলে আওয়ামীলীগের তৃণমূল নেতাকর্মীদের কাছেই তাদের ইমেজ সংকট রয়েছে। নির্বাচনী বৈতরনী পার হতে তাদের সেই সক্ষমতাও নেই বলে অনেকে জানান। তাছাড়া তাহের পরিবারের পক্ষে আওয়ামী লীগের একাংশ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ছাত্রলীগ, মৎসজীবি লীগ সহ অংগ সংগঠনের নেতারা সরাসরি রয়েছে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, ব্রাহ্মণপাড়ায় যে কোন নির্বাচনে প্রয়াত উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মো. আবু তাহের পরিবার একটি বড় ফ্যাক্টর। স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, এতিমখানা, মসজিদ, মক্তব প্রতিষ্ঠাসহ সামাজিক কাজে এ পরিবারের বিশাল ভূমিকা থাকায় উপজেলায় এ পরিবার ব্যাপক জনপ্রিয়। আওয়ামী লীগের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের কাছে আবু তাহের পরিবার একটি আস্থা ও ভরসার নাম। এ পরিবার থেকে প্রয়াত চেয়ারম্যানের ছোটভাই আলহাজ্ব মো. আবু জাহের অথবা চেয়ারম্যানের ছেলে আবু তৈয়ব অপিকে মনোনয়ন দিলে খুব সহজেই বিজয় আনা যাবে বলে নেতাকমীদের দাবি।
নেতাকর্মীরা বলেন, গত ২০১৪ সালের ১৫ মার্চ আওয়ামীলীগ থেকে মনোনয়ন না পেয়ে আলহাজ্ব মো. আবু তাহের স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলেন। তখন তিনি ২০ হাজার ভোট পেয়েছিলেন। ওই নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী ভোট পান ২৪ হাজার আর আওয়ামীলীগ প্রার্থী ভোট পান ২৬ হাজার। স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েও পরিবারিক ইমেজে আবু তাহের প্রায় সমান্তরাল প্রতিদ্বন্দ্বীতায় ছিলেন। আর গত ২০১৯ সালের ৩১ মার্চের নির্বাচনেও মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করে আলহাজ্ব মো. আবু তাহের ভোট পান ৪০ হাজার ৬৭৩ আর আর আওয়ামীলীগ প্রার্থী জাহাঙ্গীর খান চৌধুরী ভোট পান ২৪ হাজার ৯৭৮টি। ওই নর্বাচনে তিনি আওয়ামীলীগের প্রাথীকে বিশাল ব্যবধানে হারিয়ে প্রায় ১৫ হাজার ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হন। তার পরিবার থেকে ওই দুইজনের যে কাউকেই প্রার্থী দিলে ক্লিন ইমেজের কারণে তারা সহজেই নির্বাচনী বৈতরনী পার হতে পারবেন বলে মনে করেন নেতাকর্মীরা।
এদিকে দলীয় মনোয়নের জন্য এবং কেন্দ্রে নাম পাঠাতে আবু তৈয়ব অপি উপজেলা ও জেলা আওয়ামীলীগের মাধ্যমে কেন্দ্রিয় আওয়ামীলীগ ও প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষন করে লিখিত আবেদন করেছেন।
এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা যুবলীগের সভাপতি সুলতান আহমেদ বলেন, ব্রাহ্মণপাড়ায় আলহাজ্ব মো. আবু তাহের পরিবারের বিকল্প এখনো সৃষ্টি হয়নি। তাদের সততা ও আদর্শই তাদেরকে তৃণমূলের প্রাণের গভীরে পৌঁছাতে পেরেছে। এ পরিবার থেকে যে কউকে মনোনয়ন দিলেই বিএনপি নির্বাচনে ভড়াডুবি খাবে। এ পরিবার বিএনপির কাছে এক আতংকের নাম। তাদের আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তার কাছেই হেরে যাবে বিএনপি। তৃণমূলের ৮০ ভাগ মানুষের কাছে তাহের পরিবারটি জনপ্রিয়।
ব্রাহ্মণপাড়া সদর ইউনিয়নের তিনবারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান, আওয়ামীলীগের নেতা হাজী জসীম উদ্দিন বলেন, সত্যিকথা বলতে কি ! দলের ভেতরে বাইরে এমনকি সাধারণ জনগণের কাছেও তাহের পরিবার খুব জনপ্রিয়। এ জনপ্রিয়তায় দলের কতিপয় নেতা ঈর্ষান্বিত হয়ে তাদের নাম কেন্দ্রে পাঠায়নি। তবে এ উপজেলায় আওয়ামীলীগকে আরো শক্ত অবস্থানে নিতে হলে ওই পরিবারের বিকল্প নেই।
এ ব্যাপারে সাবেক রেলপথমন্ত্রী, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুল হক এমপি বলেন, আওয়ামীলীগে কেন্দ্রিয়ভাবে স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ড রয়েছে। ওই বোর্ডের প্রধান দলের সভাপতি ও মাননীয় প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা। উনার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। উনি যাকে মনোনিত করবেন তার পক্ষেই সকলে কাজ করে। উনি ব্রাহ্মণপাড়ায় কাকে মনোনয়ন দেন একমাত্র উনিই বলতে পরেন। জেলা পর্যায়ের যা কাজ আমরা তা করছি।