কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ার কৃতি মুখ, বিদেশ যাচ্ছিলেন মাহফুজ
আলাউদ্দিন আজাদঃ কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ৭ জন শিক্ষার্থী এবার ৩৬-তম বিসিএসে সফলতা পেয়েছেন্ তাদের অধিকাংশই উঠে এসেছেন নিম্নিবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবার থেকে। তাদের মধ্যে উল্লেখেযাগ্য লাকসামের মোহাম্মদ মাহফুজুল আলম। তাঁর সাফল্যগাঁথা নিয়ে লিখেছেন আলাউদ্দিন আজাদ।
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ইসলামী শিক্ষা বিভাগের ২০০৭-২০০৮ শিক্ষাবর্ষ অনার্স ও ২০১১-২০১২ শিক্ষাবর্ষ মাস্টার্স ১ম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হয় মোহাম্মদ মাহফুজুল আলম। তিনি সম্প্রতি ৩৬তম বিসিএস এর চূড়ান্ত ফলাফলে শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশ প্রাপ্ত হন। তার পিতা মো. জাফর আহমেদ ও মা মনোয়ারা বেগম। তিনি লাকসাম উপজেলার দোগাইয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। জন্মসূত্রে গ্রামে বসবাস করা মাহফুজ লাকসাম দোগাইয়া আশরাফিয়া ইসলামীয়া সুন্নিয়া মাদ্রাসা হতে দাখিল ও আলিম পাস করেন। প্রাথমিক অবস্থায় তার একাডেমিক ফলাফল খুব একটা ভাল না হলেও স্নাতক ও স্নাতকোত্তর প্রথম শ্রেণি লাভ করে। এই সফলতার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার বিসিএস ক্যাডার বা উত্তীর্ণ হওয়ার পেছনে যার উৎসাহ-উদ্দীপনা অনুপ্রেরণা দিক-নির্দেশনা কাজ করেছে তিনি আমার বিভাগের সকল শিক্ষক, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ভিক্টোরিয়া কলেজের ইসলামী শিক্ষা বিভাগের প্রাক্তন প্রভাষক বর্তমানে কুমিল্লা সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজের সহকারী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আবুল কাশেম। আমি গ্রাম থেকে উঠে আসা শূন্যে থাকা একজন শিক্ষার্থী ছিলাম, গ্রামেই থাকতাম। অনার্স এর প্রথম দিকে মেসে থাকলেও পরে আবার গ্রামে চলে যাই। অনেকদিন পরে স্যারের উৎসাহ পেয়ে আবার পুনরায় কুমিল্লায় ফিরে আসি। এরই মধ্যে জীবনে অনেক হতাশা ও নেমে এসেছিল। যার ফলশ্রুতিতে বিদেশ চলে যাব বলে পাসপোর্টও করেছি। যেটি এখনোও স্যারের কাছে আছে। কিন্তু সকল ঘটনার অবসান ঘটানো সম্ভব হয়েছে স্যারের আন্তরিক সহযোগিতার কারণে। আমার সবচেয়ে দুর্বল জায়গা ছিল সাধারণ গণিতে, তাই মোটামুটি হাল ছেড়েই দিয়েছিলাম। মনে হয় আমাকে দিয়ে কোন কিছুই হবে না! কিন্তু স্যার নিজের বাসায় বাচ্চাদের মত হাতে ধরে আমার গণিত এর দুর্বলতা কাটিয়েছেন। এমনিভাবে কখন কিভাবে কোন বইটা পড়তে হবে তাও স্যারের পরামর্শে পড়তাম।
এই বিষয়ে ড. আবুল কাশেম জানান, আমি তখন ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ এর ইসলামী শিক্ষা বিভাগের প্রভাষক হিসেবে নিয়োজিত ছিলাম। যার ফলে ইসলামী শিক্ষা বিভাগের আয়োজিত শিক্ষা সফরে অংশগ্রহণ করি। শিক্ষা সফরে গিয়েই মাহফুজ এর সাথে আমার ঘনিষ্ঠতা হয়। চারদিনের শিক্ষা সফরে ছেলেটির কর্মচাঞ্চলতা, বিন¤্রতা, মেধা ও প্রজ্ঞা দেখে আমার মনে হয়েছিল তাকে দিয়ে অনেক অসম্ভবকে সম্ভব করা সম্ভব। শিক্ষাসফরে থাকাকালীন তার পারিবারিক খোঁজ-খবর নিয়েছি এবং জীবনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানতে চেয়েছি। মাহফুজকে দেখেই আমার সম্ভাবনাময়ী মনে হয়। তার একটা বড়গুণ ছিল সে আমার কাছে কোন কিছুই গোপন করত না। অর্থাৎ একটি জামা কিনতে চাইলেও আমার পরামর্শ নিয়ে সেটি করত। যার ফলে তাকে সঠিক পথ দেখানো আমার পক্ষে সম্ভব হয়েছে। সে গণিতে দুর্বল ছিল। আমি চেষ্টা করেছি তার দুর্বলতাগুলো কাটিয়ে তুলতে। তার গণিতে বেসিকগুলোকে আরও শাণিত করার জন্য আমার কলিগ গণিতের সহকারী অধ্যাপক মো. আব্দুল করিম এর কাছে পাঠাই। যার কারণে একসময় তার গণিতের দুর্বলতা কেটে যায়। এই দীর্ঘ পথচলার মধ্যে তার জীবনে অনেকগুলো প্রতিবন্ধকতা এসেছে, অনেক সময় তার মাঝে হতাশা কাজ করেছে। কিন্তু আমি তাকে সাহস দেওয়ার চেষ্টা করেছি। সবচেয়ে বড় বিষয় নিজেকে একটা গতিবেগে ধরে রাখতে পারা। একটা সময় এসে বিদেশ চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কিন্তু তার পাসপোর্ট নিয়ে আমি রেখে দেই। কারণ তার উপর আমার অনেক আত্মবিশ্বাস ছিল। শেষ ৩৭তম বিসিএস এর প্রিলি দেওয়ার পরে অনেকটা হতাশ হয়ে পড়ে। বন্ধুদের অনেকেই চারদিকে প্রাইভেট ফার্ম এর চাকরি হচ্ছে। এইগুলি দেখে সে প্রাইভেট ফার্ম এ চাকরি নেওয়ার চিন্তা করে। আমি জানতাম যদি তাকে একবার ছেড়ে দেই তাহলে তাকে আর এই অবস্থান ফিরে আনা যাবে না। কিন্তু প্রাইভেট ফার্ম সুযোগগুলো তার জীবনে বারবার আসবে। আমি তাকে বললাম তুই শেষ ৩৬ এর ভাইবা পর্যন্ত থাক। এরপর কিছু না হলে আমি আর তোকে ধরে রাখবো না। এটা ছিল আমার জন্য বড় একটা চ্যালেঞ্জ, কারণ ইসলামী শিক্ষা বিভাগে শিক্ষার্থীদের সামনে কোন আইকন ছিল না, যাকে দেখে পরবর্তী শিক্ষার্থীরা উৎসাহ পাবে। তাই মাহফুজ এর বিসিএস হওয়াটাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করেছিলাম। আজ সে সফল হয়েছে, তাই আমি খুব গর্বিত। আমি আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া জ্ঞাপন করি, আল্লাহ তাকে আরো সফলতা দান করুন।