দামি জামা-গাড়ি এসব অর্থহীন বলেছিলেন ডা. জাফরুল্লাহ

সাদাসিদে জীবনে অভ্যস্ত ছিলেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি, বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। জীবনের বেশিরভাগ সময় তিনি ব্যয় করে গিয়েছেন দেশের গরিব মানুষের জন্য। এমনি মরণোত্তর দেহদানের মাধ্যমে নিজের শরীরকেও মানুষের কল্যাণে বিলিয়ে দিয়েছেন।

তিনি প্রায়ই বলতেন, ‘দেশের মানুষ পেট ভরে খেতে পায় না, সবাই জামা-কাপড় পরতে পারে না। আমরা তো মুক্তিযুদ্ধ করেছি মানুষের খাওয়া-পরার সমস্যা না থাকার জন্য। এখানে আমরা ব্যর্থ হয়েছি। তাই আমাকে বিলাসিতা মানায় না।’ ছাত্রজীবনে বাম ধারার রাজনীতি করলেও পরবর্তী জীবনে সক্রিয় রাজনীতি করেননি জাফরুল্লাহ চৌধুরী। তবে সবসময়ই স্বাধীন রাজনৈতিক মতামতের মাধ্যমে জনমনে প্রভাব ফেলেছিলেন তিনি।

সামরিক শাসকদের সময়েই স্বাস্থ্যনীতি, ওষুধনীতি ও নারী শিক্ষা— এমনকি সে সময়ে সহজে দেশের মানুষের জন্য পাসপোর্টের ব্যবস্থা করতে সরকারকে রাজি করানো এবং প্রশাসনের বিকেন্দ্রীকরণে সরকারকে প্রভাবিত করতে তার ভূমিকা আলোচনায় এসেছে সবসময়। এছাড়া কয়েক হাজার কোটি টাকার গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রটিও কিন্তু ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর নয়। তিনি একবার বলেছিলেন, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের সবকিছুর মালিক বাংলাদেশের জনগণ। একজন রোগী বা অন্য ১০ জন মানুষের গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ওপর যে অধিকার, ডা. জাফরুল্লাহর অধিকারও তারচেয়ে বেশি ছিল না।

একবার ডা. জাফরুল্লাহ বলেছিলেন, আমি ধনসম্পদ দিয়ে কী করব। দেশের মানুষের জন্যে আরও অনেক কিছু করার ছিল। তিনি দীর্ঘদিন সাদা ও হালকা বেগুনি চেকের একটি শার্ট পড়তেন। এই সাদামাটা লোকটিকে প্রশ্ন করা হয়েছিল এক শার্ট এতোদিন কেন পড়ছেন। উত্তরে তিনি বলেছিলেন, শার্ট ছেঁড়ে নাই, একটা বোতাম ছিঁড়ে গেছে (হাত দিয়ে টানতে টানতে বললেন)। আমার ৩০ বছর আগের শার্টও আছে। না ছিঁড়লে ফেলব কেন?

এসময় তিনি আরও বলেছিলেন, লন্ডনে থাকাকালীন আমি সবচেয়ে দামি ব্র্যান্ডের স্যুট-টাই, জামা-জুতা পরতাম। দামি গাড়ি চালাতাম। বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী আমার গাড়ি ছাড়া অন্য কারও গাড়িতে উঠতে চাইত না। পরে চিন্তা করে দেখালাম, এসব অর্থহীন। শুধু শুধু এসবের পেছনে টাকা খরচ করার মানে হয় না। স্বাধীনতার পর থেকেই আমার চিন্তায় এই পরিবর্তন এলো।

উল্লেখ্য, মঙ্গলবার (১১ এপ্রিল) রাত সোয়া ১১টায় রাজধানীর ধানমন্ডির গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে এই মহান মানুষটি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তিনি দীর্ঘদিন কিডনি জটিলতায় ভুগছিলেন। কিছু দিন ধরে বার্ধক্যজনিত রোগেও ভুগছিলেন। রাতে মোহাম্মপুরের আল মারকাজুলে গোসল শেষে লাশ বারডেমের হিমঘরে রাখা হয়।

সমাজসেবার স্বীকৃতি হিসাবে জীবনে অসংখ্য পুরস্কার পেয়েছেন এই গুণী ব্যক্তি। জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখায় ১৯৭৭ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৮৫ সালে ফিলিপাইন সরকারের র্যামন ম্যাগসাইসাই পুরস্কার, ১৯৯২ সালে সুইডেনের বিকল্প নোবেল হিসাবে পরিচিত রাইট লাভলিহুড পুরস্কার, ২০০২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের বার্কলি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘ইন্টারন্যাশনাল হেলথ হিরো’ পুরস্কার এবং মানবতার সেবার জন্য ২০২১ সালে কানাডা থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন।

আরো পড়ুন