কুমিল্লায় মাংসের ভ্রাম্যমাণ হাটে ক্রেতার ভিড়, দামও নাগালে
কুমিল্লা নগরীর প্রাণকেন্দ্র কান্দিরপাড় এলাকায় প্রতিবছরের মত এবারও বসেছে কোরবানির পশুর মাংসের হাট। মূলত যাদের কোরবানি দেওয়ার সমর্থ নেই তারাই এই হাট থেকে মাংস কিনেন।
বৃহস্পতিবার দুপুরের পর থেকেই এই হাটে আসতে শুরু করেন শহরের নিম্নবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত মানুষ। এর পাশাপাশি কিছু হোটেল মালিকও কম দামে মাংস কেনার আশায় এখানে আসেন।
তবে সাধারণ ক্রেতাদের অভিযোগ, হোটেল মালিকদের কারণে এখানে মাংসের দাম বেড়ে যায়।
বিকালে কান্দিরপাড় এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, অনেক দরিদ্র মানুষ ব্যাগ ভরে মাংস নিয়ে সেখানে এসেছেন বিক্রির আশায়। আবার অনেকে ব্যাগ নিয়ে এসেছেন মাংস কিনতে। পুরুষের পাশাপাশি নারীদেরও দরদাম করে মাংস কিনতে দেখা গেছে।
এখানে অবশ্য মাংস মেপে বিক্রি করা হয় না; হাতের আন্দাজেই দরদাম করেন ক্রেতা-বিক্রেতা। মাংসের মানভেদে দামেরও পার্থক্য হয়।
মামুন মিয়া নামে এক হোটেল ব্যবসায়ী সাড়ে ৭ হাজার টাকায় ১৫ কেজি গরুর মাংস কিনেছেন।
তিনি বলেন, “আমার ছোট একটি ভাতের হোটেল আছে। কম দামে পাওয়ার জন্য গোশত কিনছি। আরেকটু অপেক্ষা করছি আরও কিছু কেনার জন্য।”
মনিরুজ্জামান নামে এক ব্যক্তি বলেন, “ছোট একটি চাকরি করি। বর্তমানে যা বেতন পাই, তা দিয়ে কোরবানি দেওয়া সম্ভব না। বাচ্চাদের মন খারাপ, তাই একটু গোসত কিনতে এখানে এসেছি।”
কুমিল্লায় মাংসের ভ্রাম্যমাণ হাটে ক্রেতার ভিড়, দামও নাগালে
হনুফা বেগম গৃহকর্মীর কাজ করেন। স্বামী মারা গেছেন বছরখানেক আগে। তিনি কান্দিরপাড় এসে এক হাজার টাকা দিয়ে প্রায় তিন কেজির মত মাংস কিনেছেন।
বাড়ি ফেরার পথে মাংসের ব্যাগ দেখিয়ে বলেন, “কম দামে কিনতে পারছি। আমি অনেক খুশি।“
কুমিল্লা ইপিজেডে শ্রমিকের কাজ করেন মনোয়ার হোসেন। বেতন পান ১২ হাজার টাকা। বাসা ভাড়া, ছেলের লেখাপড়ার খরচ দিয়ে হাতে তেমন টাকা থাকে না তার। বর্তমান বাজারে গরুর মাংস কিনে খাওয়া তার জন্য কঠিন।
মনোয়ার হোসেন কান্দিরপাড়ে এসে খোশ-মেজাজে আছেন। দেড় হাজার টাকায় প্রায় চার কেজির মত মাংস কিনেছেন।
মনোয়ার বলেন, “কান্দিরপাড় আসার সময় তেল আর মসলা কিনেছি। এখন গোশত নিয়ে বাসায় যাব। ছেলেটা কয়েকবার ফোন করেছে কখন বাসায় যাব। স্ত্রীকে বলেছি, রান্নার আয়োজন করতে। আজ সবাই মিলে গরুর গোশত দিয়ে ভাত খাব।”
ঈদের দিন একটি ব্যাগ নিয়ে বাসা থেকে বের হন ভ্যানচালক মাইদুর মিয়া। নগরীর ডুলিপাড়া এলাকায় একটি ছোট টিনের ঘরে ভাড়া থাকেন তিনি।
মাইদুর বলেন, “আজ কোনো কাজ নেই। ঘরে বসে থাকতেও ভালো লাগছে না। সকালে ঘরে পাঙাস মাছ আর ভাত রান্না হয়েছে।
“দুপুর থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বাড়ি বাড়ি ঘুরে অন্তত আট কেজির মত মাংস সংগ্রহ করেছি। হাতের ওজনে প্রায় চার কেজি মাংস দুই হাজার টাকায় বিক্রি করেছি। বাকিটা ঘরে নিয়ে যাব।”
বাসায় ফেরার আগে মাংস বিক্রির টাকায় রাজগঞ্জ বাজারে গিয়ে তেল আর মসলা কিনবেন বলেও জানালেন মাইদুর।
মহিউদ্দিন একটি মার্কেটে নিরাপত্তারক্ষীর কাজ করেন। দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত বাড়ি বাড়ি ঘুরে নয় কেজির মতো মাংস পেয়েছেন। এর মধ্যে ছয় কেজি ২৩০০ টাকায় বিক্রি করেছেন বলে জানালেন।