কুমিল্লা বিমানবন্দরে সবই আছে, নেই শুধু ফ্লাইট
মূল ফটকের পাশে মনোরম পরিবেশসহ আনুষাঙ্গিক প্রায় সুবিধাই রয়েছে কুমিল্লা বিমানবন্দরে। যেখানে কর্মরত রয়েছেন ২৪ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীও।
তবে নগরীর ঢুলিপাড়া, নেউরা ও রাজাপাড়ায় অবস্থিত ৭৭ একর আয়তনের এ বিমানবন্দর দীর্ঘদিন অব্যবহৃত ও পরিত্যক্ত থাকায় রানওয়ের পিসিএন (পেভমেন্ট ক্ল্যাসিফিকেশন নম্বর) নষ্ট হয়ে গেছে। ভেঙে গেছে পিস ঢালাই ও ব্লক। বিভিন্ন দেশের সিগন্যাল ব্যবহার করে এখান থেকে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ২৫-৩০ লাখ টাকার রাজস্ব আয় করছে সরকার।
যাত্রী সংকটে এক সময় বিমান ওঠানামা বন্ধ করা হলেও ইপিজেড ও রেমিট্যান্স আয়ে কুমিল্লার শক্ত অবস্থানের কারণে এটি সচল করা এখন সময়ের দাবি।
বিমান সূত্রে জানা গেছে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় অনেকটা তড়িঘড়ি করেই ১৯৪১-৪২ সালে কুমিল্লা শহরতলীর দক্ষিণে এ বিমানবন্দর স্থাপন করে যুক্তরাষ্ট্র। মাঝে পাকিস্তান আমলসহ ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত অভ্যন্তরীণ রুটে এখান থেকে বিমান চলাচল করতো। অজ্ঞাত কারণে এ বিমানবন্দরের কার্যক্রম শিথিল হলেও ১৯৯৪ সালে আবার চালু করা হয়। কিন্তু তখন পর্যাপ্ত যাত্রী না থাকায় দুই সপ্তাহের মধ্যেই বন্ধ হয়ে যায়।
তবে বিমান উঠা-নামা না করলেও এটি এখনো চালুই আছে। সক্রিয় রয়েছে সট টেক অব ল্যান্ড ল্যান্ডিং (স্টক)। প্রতিদিনই এ বন্দরের সিগন্যাল ব্যবহার করছে দেশ-বিদেশের কমপক্ষে ৪০টি এয়ার বাস। যা থেকে মাসে কমপক্ষে ২৫-৩০ লাখ টাকার রাজস্ব পাচ্ছে সরকার।
এখান থেকে আন্তর্জাতিক রুটে সবচেয়ে বেশি সিগন্যাল ব্যবহার করে ভারতের অভ্যন্তরীণ রুট, ব্যাংকক ও সিঙ্গাপুরের বিমান। এ বিমানবন্দরের নেভিগেশন ফ্যাসিলিটিস, কন্ট্রোল টাওয়ার, ভিএইচএফ সেট, এয়ার কমিউনিকেশন যন্ত্রপাতি, ফায়ার স্টেশন ও ফায়ার সার্ভিসসহ সব সুবিধাই রয়েছে। কর্মরত রয়েছেন ২৪ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী। কর্তৃপক্ষ জানায় এটি চালু করতে খুব বেশি অর্থেরও প্রয়োজন নেই। মাত্র ২০ থেকে ২৫ কোটি টাকা বরাদ্দই যথেষ্ট।
ইপিজেড ও বিসিক শিল্প নগরীসহ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে রয়েছে শতাধিক কলকারখানা। যেখানে ব্যবসায়িক কাজে প্রতিনিয়তই বিভিন্ন দেশের ব্যবসায়ী ও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে আসা-যাওয়া করতে হয়। ইউরোপসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কর্মরত রয়েছেন এ জেলার অর্ধলাখের বেশি জনশক্তি।
এখানেই রয়েছে বার্ডসহ রাষ্ট্রীয় সব ধরনের প্রতিষ্ঠান। এটি চালু হলে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোর সঙ্গেও যোগাযোগ ব্যবস্থার নতুন দ্বার উন্মোচিত হবে। কুমিল্লা ছাড়াও উপকৃত হবেন চাঁদপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ফেনী, নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুরের বাসিন্দারা।
কুমিল্লা চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি ডা. আজম খান নোমান বলেন, কুমিল্লায় দিন দিন ব্যবসা ক্ষেত্রের পরিধি বাড়ছে। ঢাকা-চট্টগ্রামের মাঝামাঝি হওয়ায় দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের নজর এখন কুমিল্লার দিকে। তাছাড়া ইউরোপসহ বিভিন্ন উন্নত দেশে কর্মরত কুমিল্লার জনগোষ্ঠীর সংখ্যাও ১৩ শতাংশের বেশি। তাই বন্ধ বিমান ফ্লাইট ফের চালু করা এখন সময়ের দাবি।
কুমিল্লা বিমানবন্দরের সিএনএস প্রকৌশলী নাসির উদ্দিন আহমেদ বলেন, ফ্লাইট স্থগিত থাকলেও এটি এখনও সরকারের লাভজনক প্রতিষ্ঠান। কারণ সিগন্যাল ব্যবহার করে প্রতিদিনই রাজস্ব আয় হচ্ছে। আর ফ্লাইট চালু হলে কুমিল্লার গুরুত্ব আরও বেড়ে যাবে। পরিকল্পিত উদ্যোগ নিলে এটি আবারও প্রাণ ফিরে পাবে।
কুমিল্লা বিমানবন্দরের এমডি তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ফ্লাইট চালু না থাকলেও প্রতিদিন এখান থেকে সিগন্যাল ব্যবহার করে আন্তর্জাতিক রুটের ৩৫-৪০টি বিমান। এতে প্রতি মাসে এখান থেকে সরকারের রাজস্ব আয়ও হয়। রানওয়ে মেরামতসহ কিছু যন্ত্রপাতি স্থাপনের পাশাপাশি আরও ২০-২২ জন লোকবল নিয়োগ দিলে যে কোনো সময় ফ্লাইট চালু করা সম্ভব। এ বিষয়ে আমরাও চেষ্টা করছি।