মুরাদনগরে ব্রীজ নেই তাই সাঁকোতেই ভরসা
মো: নাজিম উদ্দিনঃ ব্রীজ নেই তাই সাঁকোতেই ভরসা বিশ গ্রামের জন-সাধারনের। কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার বাঙ্গরা পশ্চিম ইউনিয়নের ধনপতিখলা-দৌলতপুর সড়কের পাশের আরশি নদীর উপর ব্রীজ না থাকায় চরম দুর্ভোগের মধ্যে রয়েছে উপজেলার বাঙ্গরা বাজার পশ্চিম অঞ্চলের প্রায় ২০টি গ্রামের প্রায় লক্ষাধিক মানুষ। নদীটি পারাপারের জন্য বাঁশ দিয়ে তৈরী প্রায় দুইশত ফুট লম্বা সাঁকোই একমাত্র ভরসা। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সাঁকু দিয়ে পারাপারের সময় পানিতে পড়ে আহত হওয়ার ঘটনাও ঘটছে অহরহ। যার ফলে যে কোন সময় ঘঠতে পারে প্রাণহাণির মতো ঘটনা।
এখানে একটি ব্রীজের জন্য এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে বহুবার বিভিন্ন স্থানে আবেদন নিবেদন করা হলে বিভিন্ন সময় আশ্বাসও পাওয়া গেলেও আজো তা বাস্তবায়িত না হওয়ায় চরম দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে এ পথে প্রতিদিন যাতায়াতকারীদের। ব্রীজটি নির্মান করা হলে যানবাহন যোগে অসুস্থ ব্যক্তিসহ লোকজন খুব সহজেই যাতায়াত করতে পারতেন এবং এ অঞ্চলের লোকজনের যাতায়াতে নতুন দিগন্ত তৈরি হবে বলে স্থানীয়দের আশা।
সরেজমিনে দেখা যায়, স্বাধীনতার পর থেকে কখনো নৌকা, কখনো বাঁশের সাঁকো দিয়ে নদীটি পার হচ্ছেন উপজেলার ধনপতিখোলা, কালারাইয়া, মোহাম্মদপুর, ঘোড়াশাল, সোনাকান্দা, যোগেরখিল, মেটংঘর, দৌলতপুর গ্রামের মানুষ। এছাড়া রোয়াচালা, কুড়–ন্ডী, পিপিড়িয়াকান্দা, চুলুড়িয়া, বড়িয়াচুড়া, কুড়াখাল, কালীসিমা, পেন্নই, দিঘির পাড়, পাজির পাড়, কাউইন্নামুড়ি, বৃষ্ণপুর, শ্রীকাইল, চন্দনাইল, রামচন্দ্রপুর, বি-চাপিতলাসহ উপজেলার উত্তর অঞ্চলের লোকজনের বাঙ্গরা বাজার থানা সদরের মধ্যে স্থলপথে যোগাযোগ করতে হলে প্রায় ছয় কিলোমিটার সড়ক ঘুরে আসতে হয়। আরশি নদীটি কালারাইয়া ও ধনপতিখোলা গ্রামের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়ায় খালের দুই পাশের ১০টি গ্রামের প্রায় অর্ধ লক্ষাদিক মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হচ্ছে এবং বাঙ্গরা বাজার থানা সদরে আসতে হচ্ছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী, কামার-কুমার, জেলে-তাঁতি, কৃষকসহ বিভিন্ন শ্রেনীর-পেশার মানুষসহ ব্যবসায়ীদের মালামাল আনা-নেওয়া, প্রায় ১০ একর কৃষি জমিতে কৃষকের উৎপাদিত ফসল বাজারজাতকরণ, গবাদি পশু পারাপার, মুমূর্ষু রোগীর জরুরি চিকিৎসা সেবাসহ সবকিছুর জন্য এলাকাবাসীকে ভেলার উপর নির্ভর হওয়া জীবনের ঝূঁকি নিয়ে যাতায়ত করছে। সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পোহাতে হচ্ছে স্থানীয় কয়েক হাজার শিক্ষার্থীদের। এমন ঝুঁকি নিয়েই প্রতিদিন কোমলমতি শিশু-কিশোর, স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা পড়ুয়া শিক্ষার্থী বাধ্য হয়ে সাঁকোতে করে দিনের পর দিন চলাচল করতে হচ্ছে। এ এলাকায় কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান না থাকায় খালের এপাড়ের ছেলে-মেয়েরা ওপাড়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে লেখা-পড়া করতে হয়। যার ফলে অভিভাবকদের থাকতে হয় আতংক এবং উৎকন্ঠার মধ্যে। কখনো পা ফসকে বই-খাতা পড়ে যায় খালে, আবার অনেকে আহত হয়ে ভয়ে লেখা-পড়া বন্ধ করে দিয়েছে। স্থানীয়দের দাবি অচিরেই সংশি¬ষ্ট কর্তৃপক্ষ এ দিকে নজর দিবে। এ অবস্থায় ব্রীজ নির্মাণ না হওয়া পর্যন্ত জনসাধারণের নিরাপদ পারাপারের জন্য প্রশাসনের কাছে একটি নৌকার দাবি জানিয়েছে এলাকাবাসী।
খোষঘর গ্রামের কলেজ পড়–য়া ছাত্র মহসিন ভূইয়া জানান, খালের জন্য আমাদের কয়েকটি গ্রামের মানুষদের দুর্ভোগের শেষ নেই। দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করে ভয়ে ভয়ে পাড় হতে হয়। বিভিন্ন সময় শিক্ষার্থীরা সাঁকো পারাপারের সময় থেকে পড়ে আহত হচ্ছে। এতে করে অনেক শিক্ষার্থীর স্কুলে যাওয়া বন্ধ হয়ে যায়।
পূর্বধইর পশ্চিম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রুহুল আমীন বলেন, এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি আরশি নদীর উপর একটি সেতু নির্মাণের। আমি অনেক বার এমপি-মন্ত্রীর কাছে গিয়েও বরাদ্দ পাইনি। সেতুটি নির্মিত হলে মুরাদনগর উপজেলা উত্তর অঞ্চলের প্রায় ২০ গ্রামের লোকদের দুর্ভোগ কমবে। তাদের জীবনমান আরও উন্নত হবে ।
মুরাদনগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সৈয়দ আবদুল কাইয়ুম খসরু বলেন, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার একটি জনবান্ধব সরকার, তাই জনগনের দুর্ভোগ লাগবের জন্য এখানে একটি ব্রীজ তৈরীর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।