কুমিল্লার রাস্তায় শতকরা ৮০ ভাগ বাস লক্কর-ঝক্কর
মাসুদ আলমঃ কুমিল্লার রাস্তায় শতকরা ৮০ ভাগ যাত্রীবাহী বাসই লক্কর-ঝক্কর। বডিতে চড়-চামড়া নেই, ইঞ্জিনের তাঁর বেরিয়ে ঝুলে আছে, গাড়ির গ্লাস-সিট ভাঙা, ছাদ ফুটো, ইঞ্জিন খারাপ। চাকায় গ্যাটিস মারা, চালকের বসার নেই সু-ব্যবস্থা, নেই ব্যাক লাইট-ইন্ডিকেটর। পথে গিয়ে এসব গাড়ি বন্ধ হচ্ছে। কিংবা যাত্রী দিয়ে ঠেলে চালু করা হচ্ছে। রুট পারমিট, ফিটনেসের কাগজ এবং ডিজিটাল লাইসেন্স ছাড়াই বাসগুলো পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশ ও বিআরটিএ‘র যোগসাজসে চলছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
রাজধানীতে যাত্রীবাহী বাসের ধাক্কা দুই কলেজ শিক্ষার্থী মৃত্যুর ঘটনায় ঢাকাসহ সারাদেশে ফিটনেসবিহীন গাড়ি এবং লাইসেন্সবিহীন চালকদের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামে বিভিন্ন স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এরপর ঈদ-উল আযহার আগ-পরে আশঙ্কাজনক হারে দুর্ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় ফিটনেসবিহীন ও লাইসেন্সবিহীন গাড়ি আটকে অভিযানে নামে পুলিশ।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ফিটনেসবিহীন ও লাইসেন্সবিহীন গাড়ি আটকের ঘোষণা দিয়ে পুলিশের অভিযানের সত্ত্বেও কুমিল্লা থেকে জেলার বিভিন্ন রুটে ঝুঁকি নিয়ে চলছে শতকরা ৮০ ভাগ লক্কর-ঝক্কর বাস।
কুমিল্লা বাস-মালিক সমিতির সূত্রে জানা যায়, কুমিল্লার জাঙ্গালিয়া, শাসনগাছা এবং চকবাজারে তিনটি বাস টার্মিনাল থেকে জেলা এবং আন্তঃজেলার বিভিন্ন রুটে ২৫টি সার্ভিসের প্রায় আড়াই হাজার বাস চলাচল করে। তারমধ্যে শহর থেকে জেলার ভিতরে বিভিন্ন রুটে প্রায় ৫ শতাধিক বাস চলাচল করে। এদের মধ্যে শাহ-আলী সুপার, শাপলা সুপার, দোয়েল সুপার, কুমিল্লা সুপার, যমুনা, বলাকা, মিনি তিশা, পাপিয়া, স্বাধীন সুপার, উপহার, মায়ের দোয়াসহ আরও একাধিক বাস এবং মিনিবাসের সার্ভিস রয়েছে।
কুমিল্লা বিআরটিএ দেওয়া তথ্য সূত্রে অনুসারে দেখা যায়, জেলার ভিতরে ৫ শতাধিক যাত্রীবাহী বাসের মধ্যে মাত্র ৩২টি বাসের রুট পারমিট রয়েছে। তবে বিআরটিএ লক্কর-ঝক্কর, জরাজীর্ণ ও কোন ফিটনেসবিহীন বাসের তালিকা নির্দিষ্ট ভাবে তাদের কাছে নেই। এছাড়া গত দুইবছরেও বিআরটিএ সড়কে চলাচলকৃত রুট পারমিট, ফিটনেসবিহীন ও লাইসেন্সবিহীন বাসের বিরুদ্ধে অভিযান করতে পারননি লোকবল সংকটে।
সরেজমিনে আরও দেখা যায়, জাঙ্গালিয়া, শাসনগাছা এবং চকবাজারে তিনটি বাস টার্মিনাল থেকে কুমিল্লার বিভিন্ন রুটি চলাচলকৃত এইসব সার্ভিসের অধিকাংশ গাড়ি পুরাতন লক্কর-ঝক্কর। বাসগুলোর চড়-চামড়া তুলে গায়ে নতুন রং লাগানো হচ্ছে, কোনোটিকে আবার জোড়া-তালি দিয়ে আইনের চোখে ধোঁকা দেওয়ার চেষ্টা চলছে। এইসব বাসগুলো কোনোকিছু তোয়াক্কা না করে রাস্তায় নির্বিঘেœ চলছে।
শাহ-আলী সুপারের চালক মাহমুদ উল্লাহ বলেন, আমার গাড়ির রুট পারমিট নেই। আমি দীর্ঘদিন এভাবে সড়কে গাড়ি চালিয়ে আসছি। তবে গত কয়েকদিন যাবত পুলিশ আমাদেরকে গাড়ি নিয়ে সড়কে নামতে দেয় না। কারণ গাড়ির নাকি ফিটনেস এবং লাইসেন্স নেই। এতোদিন যে পুলিশের সামনে দিয়ে গাড়ি চালিয়েছি, এখন তারাই গাড়ি আটক করছে।
কুমিল্লা জেলা বাস-মালিক সমিতির সচিব তাজুল ইসলাম বলেন, কুমিল্লার তিনটি টার্মিনাল থেকে জেলা-আন্তঃজেলার বিভিন্ন রুটে ২৫টি সার্ভিসের আড়াই হাজার বাস চলাচল করে। এরম ধ্যে জেলার ভিতরে ৫শতাধিক বাস চলাচল করছে। এসব বাসের মধ্যে যেগুলো ফিটনেস বা লাইসেন্স নেই দেশের স্বার্থে আমরা বাস মালিক ও চালকদের নিষেধ করেছি সড়কে বাস না নামাতে। সড়কে দুর্ঘটনা রোধে আমরাও চালক ও শ্রমিকদের সচেতন করছি।
কুমিল্লা জেলা বিআরটিএ এর সহকারী পরিচালক মো. নূরুজ্জামান বলেন, আমাদের কাছে কিছু সংখ্যক বাসের রুট পারমিটের তালিকা রয়েছে। তবে কতগুলো বাসের ফিটনেস বা লাইসেন্স নেই সেই তথ্য আমরা নির্দিষ্ট করে বলতে পারবো না। আমাদেরকে নির্দিষ্ট করে বাসের নম্বর বললে আমরা বলতে পারবো ওই বাসের রুট পারমিট বা ফিটনেস লাইসেন্স আছে কিনা।
হাইওয়ে কুমিল্লা রিজিওনের পুলিশ সুপার নজরুল ইসলাম বলেন, পুলিশ কোন বাসকে ফিটনেস লাইসেন্স এবং রুট পারমিট দেয় না। তাই পুলিশ বলতে পারবে না জেলার কয়টি বাসের রুট পারমিট এবং লাইসেন্স নেই। তিনি বলেন, সড়কে দুর্ঘটনা রোধে ফিটনেস এবং লাইসেন্সবিহীন বাসের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এই অভিযান অব্যাহত থাকবে।