লাকসাম-শ্রীয়াং সড়ক দীর্ঘদিন ধরে বেহাল
আবদুর রহমানঃ দীর্ঘদিন ধরে বেহাল অবস্থায় পড়ে থাকার কারনে কুমিল্লার লাকসাম উপজেলার লাকসাম-শ্রীয়াং সড়কটি দিয়ে চলাচলকারী যানবাহন ও জনসাধারণ চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছেন। ওই সড়কে যাতায়াতকারী লাকসাম, মনোহরগঞ্জ ও চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলার মানুষের নিদারুণ ভোগান্তি পোহালেও সড়কে কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। এলজিইডি’র আওতাধীন ১২ কিলোমিটারের এই সড়কের অসংখ্য স্থানে রাস্তা পার্শ্ববর্তী পুকুরে ভেঙ্গে পড়েছে। রাস্তার বেশিরভাগ স্থানে পিচ ঢালাই উঠে গিয়ে সৃষ্টি হয়েছে ছোট-বড় গর্তের। ডাকাতিয়া নদীর কোল ঘেঁষে যাওয়ায় সড়কটির অনেক অংশ নদীতে ভেঙ্গে পড়ছে। ওই সড়কে শত শত গর্ত আর পুকুরে ভেঙ্গে পড়া অংশে ছোট-বড় যানবাহনে চলাচলকারী যাত্রীসাধারণ ও এলাকাবাসী প্রতিদিন যাতায়াত করছে মারাত্মক ঝুঁকি নিয়ে। সড়কটি সংস্কারের দাবিতে বেশ কয়েকবার সিএনজি চালিত অটোরিক্সা পরিবহন শ্রমিকরা গাড়ি বন্ধ রেখে অবস্থান ধর্মঘটও পালন করেছে।
করুণ অবস্থার দরুণ এই সড়কে যাতায়াতকারী যাত্রীসাধারণ ও এলাকাবাসী জানায়, লাকসাম পৌর শহর থেকে উপজেলার দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলসহ মনোহরগঞ্জ, শাহরাস্তি এবং আশপাশের কয়েকটি উপজেলার হাজারো লোকজন প্রতিদিন এই সড়ক দিয়ে যাতায়াত করে থাকেন। রাস্তাটির ছাল-বাকল উঠে যাওয়ায় স্কুল-কলেজে যাতায়াতকারী শিক্ষার্থী, হাসপাতাল-ক্লিনিকে যাওয়া রোগী সাধারণ, অফিস-আদালতগামী লোকজনসহ জনসাধারণ নিদারুণ ভোগান্তি পোহাচ্ছেন। বিশেষ করে সড়কের বেহাল অবস্থার কারনে বৃদ্ধরোগীসহ গর্ভবতী মায়েদের প্রসবকালীন অবস্থায় দ্রুত হাসপাতালে নিতে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।
এদিকে, গত দু’সপ্তাহ আগে সিএনজি চালিত অটোরিক্সা চালকরা নিজেদের অর্থে ওই সড়কে কিছু ইটের শুড়কি ফেলে সড়কটি সচলের উপযোগী করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। এছাড়া লাকসাম পৌর কর্তৃপক্ষও সড়কটির কিছু অংশে ইটের শুড়কি ফেলে। এতে যানবাহন চলাচলে কিছুটা উপযোগী হলেও সড়কের সিংহভাগ অংশেই বড় বড় গর্তের কারনে যানবাহন দুর্ঘটনায় পতিত হচ্ছে।
যাত্রীসাধারণের অভিযোগ, অতীতে এই সড়কটি নির্মাণে নি¤œমানের সামগ্রী ব্যবহার করা হয়েছে। তাছাড়া, রাস্তার পাশে অসংখ্য মৎস্য চাষের পুকুরের নিজস্ব পাড় না থাকায় রাস্তা গিলে খাচ্ছে পুুকুর। দিনরাত ওই রাস্তা দিয়ে শত শত ছোট-বড় যানবাহন ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করলেও রাস্তাটি দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার থেকে বঞ্চিত। দৃশ্যতঃ এটি দেখার যেন কেউ নেই।
স্থানীয় এলাকাবাসী জানায়, ওই সড়কের পশ্চিমগাঁও গাজী সোহেদা (রহ.) মাজারের অদূরে জোড়পুকুরের পূর্ব ও দক্ষিণ পাড়, বাতাখালি পূর্বপাড়া, সিংজোড় পূর্বপাড়ার অবস্থা খুবই খারাপ। বিশেষ করে শ্রীয়াং থেকে সিংজোড় খেয়াঘাট এবং সাতবাড়িয়া থেকে পশ্চিমগাঁও পর্যন্ত সড়কের অবস্থা খুবই নাজুক। অনেক স্থানে গাড়ি থেকে যাত্রীদের নেমে গিয়ে ওইসব স্থান পার হতে হয়। তাছাড়া, চিতোষী-শ্রীয়াং রাস্তার অবস্থা আরো খারাপ। চিতোষী বাজার থেকে শ্রীয়াং পর্যন্ত রাস্তাটি যানবাহন ও জনসাধারণের চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
এলাকাবাসী আরো জানায়, ওই সড়কের পাশে অনেকগুলো মৎস্য চাষের পুকুর রয়েছে। পুকুরগুলোর নিজস্ব পাড় না থাকায় রাস্তাকেই পাড় হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। ফলে রাস্তা ভেঙ্গে পুকুরে পড়ে যাত্রীসাধারণের ভোগান্তি বাড়লেও চাষীদের কোনো মাথাব্যাথা পরিলক্ষিত হয় না। এ বিষয়ে প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ কামনা করেন তারা।
ওই সড়ক দিয়ে চলাচলকারী সিএনজি অটোরিক্সা চালক খোরশেদ আলম, আবু ইউসুফ, আবু তাহেরসহ বেশ কয়েকজন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এ সড়কটি সংস্কার না করায় অত্র এলাকার মানুষ অতি কষ্টে যাতায়াত করছে। প্রায়ই সিএনজির যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়ে গাড়ি বিকল হয়ে পড়ছে। জরুরী প্রয়োজন ছাড়া কেউ এ পথ দিয়ে চলাচল করতে চায় না।
উপজেলার শ্রীয়াং গ্রামের বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম বলেন, যানবাহনে ওই রাস্তায় যাতায়াতের সময় ভেঙ্গে পড়া পুকুরপাড় অংশ অতিক্রমকালে পেটের ভেতর মোচড় দিয়ে ওঠে। মনে হয় এখনি গাড়ি সমেত পুকুরে পড়ে ডুববে। রাস্তার খানা-খন্দে ঝাঁকুনি খেতে খেতে শরীর ব্যথা হয়ে যায়। জরুরী কোনো রোগী এই পথে গেলে তার অবস্থা আরো শোচনীয় রূপ ধারণ করে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে লাকসাম উপজেলা প্রকৌশলী খন্দকার গোলাম শওকত জানান, ইতিমধ্যে ১ কোটি ৯৩ লাখ টাকা ব্যয়ে লাকসাম উপজেলা সদর থেকে বাতাখালি পর্যন্ত ৩.৫ কিলোমিটার রাস্তা সংস্কার কাজের টেন্ডার হয়েছে। বর্ষার পরপরই কাজ শুরু হবে। এছাড়া সাড়ে ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে বাকি ৪.৫ কিলোমিটার রাস্তা সংস্কারের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। আশা করি চলতি বাজেটেই বরাদ্দ পাওয়া যাবে। আর শ্রীয়াং থেকে মুদাফরগঞ্জ পর্যন্ত ৪ কিলোমিটার রাস্তার সংস্কার কাজ ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে।