কুমিল্লা-৮ আসন: নির্ভার বিএনপি, আ’লীগে কোন্দল চরমে
ডেস্ক রিপোর্টঃ পনেরোটি ইউনিয়ন, একটি পৌরসভা ও একটি উপজেলা নিয়ে কুমিল্লা-৮ (বরুড়া) সংসদীয় আসন। স্বাধীনতার পর এ আসনে আওয়ামী লীগ জয়লাভ করেছে ৪ বার, বিএনপি ৪ বার ও জাতীয় পার্টি ২ বার। এর মধ্যে ১৯৭৩ সালের প্রথম সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে এমপি নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল হাকিম। ১৯৭৯ সালে দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচনে এমপি হন বিএনপির আলী হোসেন। ১৯৮৬ সালে তৃতীয় সংসদ নির্বাচনে এমপি হন আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল হাকিম। ১৯৮৮ সালে চতুর্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে লাঙল প্রতীক নিয়ে এমপি হন জাপা নেতা ও বর্তমানে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সহসভাপতি মো. মাহবুবুর রহমান ভ‚ঁইয়া। ১৯৯১ সালে পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এমপি হন বিএনপির আবু তাহের। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচনেও আবু তাহের এমপি নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালের ১২ জুনের ৭ম সংসদ নির্বাচনে এমপি হন আওয়ামী লীগের আবদুল হাকিম। ২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আবার এমপি হন বিএনপির আবু তাহের। তিনি এমপি থাকা অবস্থায় ২০০৪ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর মারা গেলে একই বছরের ডিসেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত উপনির্বাচনে এমপি নির্বাচিত হন প্রয়াত আবু তাহেরের বড় ছেলে বর্তমানে বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক জাকারিয়া তাহের সুমন। ২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে এমপি হন আওয়ামী লীগের নাসিমুল আলম চৌধুরী নজরুল। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে মহাজোট থেকে জাপা নেতা অধ্যাপক নুরুল ইসলাম মিলন এমপি নির্বাচিত হন।
আওয়ামী লীগঃ বরুড়ায় আওয়ামী লীগ তিনভাগে বিভক্ত। এক গ্রুপে নেতৃত্ব দিচ্ছেন সাবেক এমপি ও উপজেলা আওয়ামী লীগ আহ্বায়ক নাসিমুল আলম চৌধুরী নজরুল। আরেক গ্রুপে আছেন কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের শিল্পবিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক মিয়াজী। তৃতীয় গ্রুপে আছেন আওয়ামী লীগের প্রয়াত এমপি আবদুল হাকিমের ছেলে ও কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম। ৩ জনই এলাকায় সক্রিয় এবং নির্বাচন করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। দল এবং মহাজোটের তারা সম্ভাব্য প্রার্থীও।
সম্ভাব্য প্রার্থী নাসিমুল আলম চৌধুরী নজরুল বলেন, কেন্দ্রের সবুজ সংকেত পেয়ে মাঠে সক্রিয় হয়েছেন। যে আসনগুলো জাপাকে ছাড় দেওয়া হয়েছে সেগুলোর অবস্থা বর্তমানে ভালো নয় দাবি করে তিনি বলেন, ‘জাতীয় পার্টি এখানে আমাদের জন্য সমস্যা নয়। তাদের সাংগঠনিক ভিত্তি নেই।’ ক্ষসতাসীন দলে বিভক্তির কথা স্বীকার করে মনোনয়নপ্রত্যাশী এই নেতা দাবি করেন, আহ্বায়ক কমিটি গঠনের পর কোন্দল কমেছে। সবাইকে নিয়ে কাজ করছেন বলেও জানান তিনি। আগামী নির্বাচন প্রসঙ্গে নজরুল বলেন, ‘২০০৮ সালে স্থানীয় আওয়ামী লীগের চিহ্নিত একটি পক্ষ বিএনপির সঙ্গে আঁতাত করে আমার বিরুদ্ধে নির্বাচন করেছে। এরপরও আমি এমপি নির্বাচিত হয়েছি। কারণ এলাকার মানুষ আমাকে আপন মনে করে।’
অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেন, মনোনয়ন পেলে নির্বাচন করবেন। সব প্রস্তুতি সম্পন্ন রয়েছে। মাঠেও সক্রিয়তা চালাচ্ছেন বলে জানান তিনি। বাবার উত্তরসূরি হিসেবে নিজেকে ‘মূল আওয়ামী লীগ নেতা’ বলেও দাবি করেন কামরুল।
আরেক সম্ভাব্য প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক মিয়াজী জানান, মাঠে সক্রিয় আছেন। দলীয় মনোনয়ন পেলে নির্বাচন করবেন।
বিএনপিঃ বিএনপি তথা ২০-দলীয় জোটের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় এগিয়ে রয়েছেন কেন্দ্রীয় বিএনপির আন্তর্জাতিক সম্পাদক, জেলা সহসভাপতি ও সাবেক এমপি জাকারিয়া তাহের সুমন। তার বাবা আবু তাহেরও এই আসন থেকে তিনবার ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত হয়েছিলেন। দল এবং জোটে তার ন্যূনতম প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। গত উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে শত প্রতিকূলতার মধ্যেও দলীয় প্রার্থীদের বিজয়ী করে বরুড়ায় নিজের অবস্থানকেই শুধু সুসংহত করেননি জাকারিয়া তাহের, তিনি আগামী নির্বাচনে যে একজন শক্ত প্রার্থী প্রতিপক্ষকে সেই বার্তাও দিয়েছেন। বিএনপি নেতাকর্মীদের বক্তব্য আমরা বিজয় নিয়ে কিংবা আওয়ামী লীগের গ্রুপিং নিয়ে চিন্তা করছি না। আমরা চাচ্ছি ন্যূনতম হলেও একটি সুষ্ঠু ভোট হোক। তা হলেই আমরা বিজয়ী হতে পারব।
জনগণের একচেটিয়া সমর্থন সঙ্গে আছে দাবি করে সুমন বলেন, দল চাইলে তিনি প্রার্থী হবেন। দলে সম্ভাব্য আর কোনো প্রার্থী আছেন বলেও তার জানা নেই।
বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইতে পারেন যুবদল কেন্দ্রীয় সহসভাপতি মোরতাজুল করিম বাদরু। তিনি বলেন, তৃণমূলের সমর্থন ও নিজের যোগ্যতাবলেই মনোনয়ন আশা করছেন। দল অন্য কাউকে মনোনয়ন দিলে তিনি দলের প্রতি অনুগত থেকেই তার পক্ষে কাজ করবেন বলে জানান।
এদিকে জাকারিয়া তাহের সুমনের ভাই আবু নাসের ইয়াহিয়াও মনোনয়ন চাইতে পারেন বলে গুঞ্জন রয়েছে।
জাতীয় পার্টিঃ ১৯৮৮ সালে জাপা থেকে নির্বাচিত এমপি মাহবুবুর রহমান ভুইয়া এখন জেলা বিএনপির সহসভাপতি। বর্তমানে জাপার এমপি অধ্যাপক নুরুল ইসলাম মিলন। উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান কামাল হোসেনও জাপা নেতা। দলটিতে এখানে গ্রুপিং নেই। অধ্যাপক নুরুল ইসলাম মিলন দলের একক সম্ভাব্য প্রার্থী। এ আসনে জাপার নিজস্ব ভোটব্যাংক নেই। তবে অধ্যাপক নুরুল ইসলাম মিলনের ব্যক্তি ইমেজের কিছু ভোট আছে। তিনি চাচ্ছেন আরেকবার মহাজোটের প্রার্থী হতে। আর মহাজোটের প্রার্থী হতে না পারলেও তিনি জাপা থেকে নির্বাচন করবেন।
এমপি মিলন বলেন, আগামী নির্বাচনে মহাজোট থাকলে তাকেই প্রার্থী করা হবে। জাপা এককভাবে নির্বাচনে গেলেও তিনিই দলীয় প্রার্থী হবেন। তিনি আরও জানান, দু’বারে সাত বছর উপজেলা চেয়ারম্যান থাকাকালে বরুড়ার যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে ২০০ কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছেন। আগামীতে বরুড়া-নিমসার হয়ে সরাসরি ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপন প্রকল্পের কাজও শুরু হবে। এমপি মিলন নিজেকে ‘জনতার লোক’ হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, সপ্তাহে তিন দিন এলাকায় থেকে জনগণের কল্যাণে কাজ করছেন। আগামী নির্বাচনে তাই মনোনয়নপ্রাপ্তি এবং বিজয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী তিনি। মহাজোটের এমপি হয়েও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে নুরুল ইসলাম মিলন সম্পর্ক রাখেননি বলে অভিযোগ রয়েছে। যদিও এমপি মিলন এ অভিযোগ অস্বীকার করেন।