কুমিল্লায় সোনালী ব্যাংকের শাখা স্থানান্তর নিয়ে প্রশ্ন
মো. জাকির হোসেনঃ দেশের বৃহত্তম রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংক সোনালী ব্যাংকের কুমিল্লার ইলিয়টগঞ্জ বাজার শাখা ব্যস্ত ও জনবহুল এলাকা থেকে জনবিচ্ছিন্ন ও অনিরাপদ এলাকায় সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ব্যাপারে শাখার ৫০ হাজার গ্রাহক ও এলাকাবাসীর কোনো আপত্তিই কাজে আসছে না। জানা গেছে, ব্যাংকের উচ্চ পর্যায়ের একটি স্বার্থান্বেষী মহল সম্পূর্ণ ‘মনগড়াভাবে’ বর্তমান ভবনটিকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে নতুন ভবনে শাখা স্থানান্তরের উদ্যোগ নিয়েছে। অথচ ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণার আগে কোনো স্বীকৃত কর্তৃপক্ষের মতামত নেয়া হয়নি। গতকাল মঙ্গলবার সকালে ইলিয়টগঞ্জ বাজারে সোনালী ব্যাংকের শাখা স্থানান্তর না করার দাবীতে এক প্রতিবাদ ও মানববন্ধন করে স্থানীয় ব্যবসায়ীবৃন্দ। ব্যবসায়ীরা জানান, ব্যাংকের বর্তমান শাখাটি ইলিয়টগঞ্জ মধ্য বাজার ব্যবসায়িক কেন্দ্রস্থলে প্রায় ২৬ শ’বর্গফুটের ওপর অবস্থিত। কিন্ত হঠাৎ করে ‘রহস্যজনক’ কারণে শাখাটিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ‘মাদকের আখড়া’ সস্ত্রাসীদের আড্ডাস্থল হিসেবে পরিচিত মুরাদনগর রোড নির্জন গলির মধ্যে। উক্ত এলাকায় প্রায় সময় নানা ধরনের অপরাধমূলক ঘটনা ঘটে থাকে। তাই গ্রাহকেরা ইলিয়টগঞ্জ বাজার সোনালী ব্যাংক শাখাটি পূর্বের স্থানেই রাখার জন্য জোর দাবি জানায়। জানা গেছে, ১৯৭৩ সালে ইলিয়টগঞ্জ বাজারে সোনালী ব্যাংকের শাখাটি খোলা হয়। বর্তমানে ওই শাখাটি লাভজনক হলেও বর্তমান শাখাটির যাতায়াত ব্যবস্থা ভালো না বলে উল্লেখ করে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ সেটিকে সরিয়ে অন্য স্থানে স্থানান্তর করার চেষ্টায় লিপ্ত রয়েছেন। এই খবরে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা ক্ষুব্দ হয়ে এক প্রতিবাদসভা ও মানববন্ধন করেন। মানবন্ধনে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মামুনুর রশিদ মামুন, ব্যবসায়ী ফটিক লাল সাহা, আলমগীর হোসেন, যুবরাজ দত্ত, মোঃ আমির হোসেন, স্কুলের প্রধান শিক্ষক সহিদ উল্লাহসহ ইলিয়টগঞ্জ বাজারের সর্ব-স্তরের ব্যবসায়ীরা মানববন্ধনে অংশে নিয়ে শাখা স্থানান্তর না করার দাবি জানায়।
এ বিষয়ে স্থানীয় চেয়ারম্যান মামুনুর রশিদ মামুন বলেন, আমি স্থানীয় ব্যবসায়ীদেরকে সঙ্গে নিয়ে কুমিল্লা জেলা সোনালী ব্যাংক কর্পোরেট শাখার কর্মকর্তাদের সাথে একাধিক বৈঠক হলেও তাতে কোনো সুরাহা হয়নি। এলাকাবাসীর পক্ষে বাবুল আহম্মেদ, আমির হোসেন, শাহাজউদ্দিন, সাইফুল ভূঁইয়া আরো বলেন, আমরা ব্যাংকের শাখাটি পূর্বের স্থানে রাখার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক ও সোনালী ব্যাংকের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আবেদন করেছি। সোনালী ব্যাংক ইলিয়টগঞ্জ বাজারের এই শাখায় সঞ্চয়ী, চলতিসহ সকল ধরনের আমানত, ঋণ, বৈদেশিক বাণিজ্য, সরকারি চালান, সঞ্চয়পত্র ক্রয়-বিক্রয়, স্কুল-কলেজের লেনদেন, সরকারি প্রতিষ্ঠানের বেতন ভাতা, মুক্তিযোদ্ধা, প্রতিবন্ধী, বিধবা ও বয়স্ক ভাতার টাকা আদান প্রদান করে আসছে। এ কারণে প্রতিদিন ওই শাখায় হাজার হাজার গ্রাহকের সমাগম ঘটে যার মধ্যে অসংখ্য বয়স্ক, প্রতিবন্ধী ও বিধবা নারী রয়েছেন। শাখাটি নির্জন এলাকায় সরিয়ে নেয়া হলে এ ধরনের গ্রাহকদের অনেক সমস্যা হতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন। এছাড়া অন্যান্য গ্রাহককে ছিনতাইকারীর খপ্পড়ে পড়ে সর্বস্ব হারাতে হতে পারে। গ্রাহক দুর্ভোগের পাশাপাশি ব্যাংকটিকে ভাড়া বাবদ প্রতিমাসে প্রচুর টাকা গুনতে হবে। স্বার্থান্বেষী মহল এভাবেই সরকারি টাকার অপচয়ের মিশনে নেমেছে বলে ব্যাংকের গ্রাহকরা অভিযোগ করেন।
অভিযোগ পাওয়া গেছে, নতুন ভবন ভাড়া নেয়ার পেছনে সোনালী ব্যাংকের কুমিল্লা কর্পোরেট শাখার এক কর্মকর্তাকে লোভনীয় প্যাকেজ উপহার দেয়া হয়েছে। ওই কর্মকর্তাসহ কয়েকজনের যোগসাজশে শাখাটি স্থান্তরের করার অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছেন। ব্যাংকের একাধিক গ্রাহক সাংবাদিকদের বলেন, বর্তমান ইলিয়টগঞ্জ বাজারের মুন্সী মার্কেটের দ্বিতীয় তলা ভবনটি বুয়েটের মাধ্যমে পরীক্ষা করে সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হলে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ লাভবান হবে। এছাড়া গ্রাহকদের সুবিধা-অসুবিধার কথা বিবেচনা না করে এ জাতীয় হঠকারী সিদ্ধান্ত নেয়া হলে ব্যাংকের সুনামও ক্ষুন্ন হবে। বর্তমান ভবনে বাণিজ্যিক ও সামাজিক কর্মকান্ড যাতে পরিচালনা করা হলে রাষ্ট্রায়ত্ত এই ব্যাংকটি প্রতি মাসে বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পাবে।
এ বিষয়ে সোনালী ব্যাংক কুমিল্লার প্রধান কার্যালয়ের উপ-মহাব্যবস্থাপক মো. আশরাফুল বলেন, পুরাতন শাখা ভবটির সংস্কার প্রয়োজন ভবন মালিককে সংস্কাররের জন্য বলা হলেও ভবন মালিক কাজ না করার কারনে ভবন স্থানাস্তরের ব্যাপারে আমরা চিন্তা ভাবনা করছিলাম। তবে লোভনীয় প্যাকেজ এর বিষয়ে তিনি কিছু জানে না বলে জানান। এ বিষয়ে ভবন মালিক মুন্সী আনোয়ার সাহাদাত জানান, ভবন সংস্কারের ব্যাপারে আমাকে চিঠি বা মৌখিক ভাবেও ব্যাংক কর্তৃপক্ষ জানায়নি।