বিএনপি নেতা মনিরুল হক চৌধুরীকে কেরানীগঞ্জ কারাগারে স্থানান্তর
সদর দক্ষিণ প্রতিনিধিঃ বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা এবং একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুমিল্লা-১০ সংসদীয় আসনে প্রতিদ্বন্দ্বি কারাবন্দি নেতা মনিরুল হক চৌধুরীর অবস্থা সংকটাপন্ন। গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় গতকাল শনিবার তাঁকে কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে কেরানীগঞ্জ কারাগারে স্থানান্তর করা হয়েছে এবং সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে আজ রবিবার বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হবে। কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগার ও মনিরুল হক চৌধুরীর পারিবারিক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। গত বছরের ২৪ অক্টোবর থেকে শনিবার বেলা ১২টা পর্যন্ত তিনি কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে ছিলেন।
কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগার সূত্র জানায়, সাবেক এমপি মনিরুল হক চৌধুরী ডায়াবেটিক, হৃদরোগ, দেহের বিভিন্ন জয়েন্ট, মেরুদ- ও মাজা ব্যথাসহ নানা রোগে অসুস্থ। এর আগে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে গত ২৫ নভেম্বর কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে হাড়, হৃদরোগ ও নিউরো মেডিসিনসহ হাসপাতালের ৩জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের মাধ্যমে তার চিকিৎসা দেয়া হয়েছিল এবং তার শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণের জন্য এক্স-রে, ইসিজিসহ বেশ কয়েকটি পরীক্ষা করা হয়েছিল। কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারের ডেপুটি জেলার কাজী মাজহারুল ইসলাম জানান, মনিরুল হক চৌধুরী বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে শারীরিকভাবে বেশ অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। উর্ধতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ অনুযায়ী শনিবার বেলা ১২টার দিকে কুমিল্লা কারাগার থেকে তাঁকে পুলিশের পাহারায় কেরানীগঞ্জ কারাগারের উদ্দেশ্যে নিয়ে যাওয়া হয়। উন্নত চিকিৎসার জন্য ওই কারাগার থেকে তাঁকে বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হবে। বিকাল সাড়ে ৪টায় মনিরুল হক চৌধুরীর ব্যক্তিগত সহকারী মো. আনোয়ার হোসেন জানান, ‘স্যার কেরানীগঞ্জ কারাগারে আছেন। রবিবার (৬ জানুয়ারি) সকালে স্যারকে বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হবে বলে কারা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন।’
মনিরুল হক চৌধুরীর মেয়ে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. চৌধুরী সায়মা ফেরদৌস বলেন, ‘আমার বাবা বয়োবৃদ্ধ। তাঁর দীর্ঘ ৫৫ বছরের রাজনৈতিক জীবনে কখনো প্রতিহিংসার রাজনীতিকে প্রশ্রয় দেননি। তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধের একজন সংগঠক, যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছেন। স্বাধীন দেশে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে আমরা আজ কী দেখছি। সম্পূর্ণ রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়ে একের পর এক মিথ্যা ও গায়েবী মামলায় তিনি গত বছরের ২৪ অক্টোবর থেকে কারাগারে বন্দি আছেন। নানান জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে তাঁর জীবন সংকটাপন্ন হয়ে পড়েছে, টানাহেঁচড়ায় যে কোনো সময় তিনি মারাও যেতে পারেন। এর বিচারটা আমরা কার কাছে চাইব, জবাব কে দেবে। আমরা অবিলম্বে তাঁর মুক্তির দাবি জানাচ্ছি।’
মনিরুল হক চৌধুরীর পক্ষের আইনজীবী অ্যাড. কাজী নাজমুস সা’দাত জানান, ‘২০১৫ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি জেলার চৌদ্দগ্রামে দুর্বৃত্তদের পেট্রোল বোমা হামলায় বাসের ৮ যাত্রী নিহতের ঘটনায় দু’টি মামলায় মনিরুল হক চৌধুরী হাইকোর্ট থেকে অন্তর্বর্তীকালীন জামিনে ছিলেন এবং কুমিল্লার আদালতে বিভিন্ন তারিখে তিনি হাজির ছিলেন। গত বছরের ২৪ অক্টোবর জেলা জজ আদালতের বিচারক তাঁর জামিন বাতিল করেন। পরে ওই দুটি মামলায় গত বছরের ৪ নভেম্বর হাইকোর্ট থেকে তাঁর জামিন আদেশ হয়। এরপর জেলার সদর দক্ষিণ মডেল থানার সন্ত্রাস বিরোধী ও বিশেষ ক্ষমতা আইনের পৃথক দুটি মামলায় গ্রেফতার দেখানোর কারণে তিনি জেলহাজতে আছেন। এসব মামলার এজাহারে তার নাম নেই।’