উপেক্ষিত কুমিল্লা বিমানবন্দরের দাবী

ডেস্ক রিপোর্টঃ দেশের পুরনো চারটি বিভাগ ছাড়া এর পরে যত বিভাগ হয়েছে আয়তন, জনসংখ্যা, উপজেলার সংখ্যা এবং সংসদীয় আসনের সংখ্যার দিক থেকে প্রায় সবগুলো থেকেই দুই বা তিন গুণ বড় জেলা হচ্ছে কুমিল্লা। দেশের অন্যতম প্রাচীন জেলাগুলোর একটি কুমিল্লা। সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা, ভৌগোলিক অবস্থান, বিদেশে বেশি লোক কুমিল্লার, কুমিল্লা ইপিজেড, চারটি বিশ্ববিদ্যালয়, চারটি মেডিকেল কলেজ, বাংলাদেশের একমাত্র সার্ভে ইনস্টিটিউট কুমিল্লায়, পর্যটনের অপার সম্ভাবনা ও অমূল্য প্রতœসম্পদ কোটবাড়ি, লালমাই ও ময়নামতি এলাকায়।

এরপরেও দীর্ঘদিন ধরে হচ্ছে হচ্ছে করেও হচ্ছে না কুমিল্লা বিভাগ। সিদ্ধান্ত নিয়েও ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে বিভাগ ঘোষণার সিদ্ধান্ত। ব্রিটিশ আমল থেকে কুমিল্লায় বিমানবন্দর চালু হয়। পাকিস্তান আমলে হাঠাৎ করে কুমিল্লা বিমানবন্দর বন্ধ করে দেয়া হয়। এখনো কলকাতা ও আগরতলার বিমানের সিগন্যাল দিয়ে মাসে মাসে রাজস্ব আয় হচ্ছে কুমিল্লা বিমানবন্দরের। কুমিল্লা বিমানবন্দরের জায়গার একাংশে তৈরি করা হয়েছে ইপিজেড। প্রতিদিনই বিদেশিরা আসছেন এবং যাচ্ছেন।

দীর্ঘদিন ধরে কুমিল্লার জনগণ বিমানবন্দরটি চালু করার দাবি জানিয়ে এলেও অদৃশ্য কারণে তা চালু করা যাচ্ছে না। মোটামুটি সংস্কার করলেই এ বিমানবন্দরটি চালু করা যায়। কিন্তু পুরনো একটি বিমানবন্দর সব দিক থেকে উপযোগী হওয়া সত্ত্বেও চালু না করে পার্শ্ববর্তী কম গুরুত্বপূর্ণ একটি ছোট জেলায় বিমানবন্দর চালু হচ্ছে খবরে বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠছেন কুমিল্লার রাজনৈতিক ও সুশীল সমাজের নেতারা। কুমিল্লার বিমানবন্দর নিয়ে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা ও সুশীল সমাজ কী ভাবছে তাদের বক্তব্য দিয়েই আজকের প্রতিবেদন।

আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার (এমপি কুমিল্লা-৬): কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও কুমিল্লা সদর আসনের এমপি আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার বলেছেন, কুমিল্লা বিমানবন্দর চালু না হয়ে নোয়াখালীতে নতুন বিমানবন্দর তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এটা তেমন কোনো বিষয় না। কুমিল্লা বিমানবন্দর চালুর দাবিটি কুমিল্লাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি হলেও আমি বিভাগ বাস্তবায়নের ওপরই কথা বলব। বিভাগ বাস্তবায়ন হলে আমাদের কাজের পরিধি বাড়বে। তার মধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফোরলেনে দ্রুতগতির ট্রেন চালু হওয়ার পথেই রয়েছে। তখন বিমানবন্দর না থাকলেও তেমন কোনো সমস্যা হবে না। কারণ তখন ট্রেনে আমরা যানজট ছাড়াই এক ঘণ্টায় কুমিল্লা থেকে ঢাকায় পৌঁছাতে পারব। বিমানে হয়তো ২০ মিনিট লাগবে, সঙ্গে বন্দরের আনুষ্ঠানিকতা পালনে আরো ৩০ মিনিট সময় লাগবে। বলা যায়, মোটামুটি ঘণ্টাখানেক সময় লাগবে। তাতে বিমান কিংবা ট্রেনে কুমিল্লায় পৌঁছাতে খুব বেশি সময়ের হেরফের হবে না। আমি চাই আগে বিভাগ বাস্তবায়ন হোক। তবে বিমানবন্দরের দাবিটিও করছি আমি।

হাজি আমিন-উর-রশীদ ইয়াছিন (কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক): কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক এমপি হাজি আমিন-উর-রশীদ ইয়াছিন বলেছেন, রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে নয়, আমি একজন ব্যবসায়ী হিসেবে বলব নতুন করে বিমানবন্দর স্থাপন করতে গেলে সরকারের বড় একটি বিনিয়োগ করার দরকার হবে। তার চেয়ে অনেক বেশি ভালো হতো সামান্য বিনিয়োগে সংস্কারের মাধ্যমে কুমিল্লা বিমানবন্দরটি চালু করা গেলে এতদঞ্চলের শিল্পের প্রসার আরো বিস্তৃত হতো। ব্যবসায়ী হিসেবে বলি, বিদেশি ডেলিগেটরা লম্বা জার্নির জন্য কুমিল্লায় আসতে চান না। সেক্ষেত্রে বিমানের সুবিধা পেলে এ জনপথের সার্বিক উন্নয়ন ঘটত এবং সরকারের রাজস্বে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা জমা হতো। আর যৌক্তিকভাবেই দেশের কিছু লোকের সুবিধার জন্য বিমানবন্দর তৈরি করে সরকার ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে। সে ক্ষেত্রে কুমিল্লার বিমানবন্দরটি সংস্কার করে চালু করলেই নোয়াখালীর মানুষও উপকৃত হতো।

আলহাজ মো. ওমর ফারুক (কুমিল্লা জেলা পরিষদের সাবেক প্রশাসক): কুমিল্লা জেলা পরিষদের সাবেক প্রশাসক ও কেন্দ্রীয় কৃষক লীগের সহসভাপতি আলহাজ ওমর ফারুক কুমিল্লা বিমানবন্দর চালু না হয়ে নতুন করে নোয়াখালীতে বিমানবন্দর চালু করার বিষয়ে নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে লিখেন, কুমিল্লা বিমানবন্দর চালু করার পক্ষে সবাই সোচ্চার হউন। কুমিল্লা বিমানবন্দর বাংলাদেশের সবচেয়ে পুরনো বিমানবন্দরের একটি। যেখানে সবকিছু প্রস্তুত, সেখানে কেন বিমানবন্দর চালু হবে না? তা জানার অধিকার নিশ্চয়ই আমাদের আছে। বাংলাদেশে প্রয়োজনে আরো নতুন বিমানবন্দর হোক। আগে কুমিল্লা বিমানবন্দর চালু করেন।

আফতাবুল ইসলাম মঞ্জু (এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি): বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক ও এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি আফতাবুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, রাজনৈতিকভাবে বিবেচনা না করে যদি অর্থনৈতিকভাবে চিন্তা করি তাহলে অবশ্যই কুমিল্লা বিমানবন্দর চালু করা সময়ের দাবি।

শুধু তাই নয়, কুমিল্লা বিমানবন্দর কুমিল্লার ইতিহাস ঐতিহ্যের একটি বড় অংশ। এটাকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় কুমিল্লা এ্যারো ড্রাম হিসেবে চেনা হতো। পরবর্তী সময়ে পাকিস্তান আমলে এটা কুমিল্লা এয়ারপোর্টে নাম চালু হয়। আমি মনে করি অর্থনৈতিকভাবে প্রাগ্রসরমান কুমিল্লা জেলায় বিমানবন্দরটি পুনরায় চালু করা হোক। কারণ গত ১৮ বছর ধরে কুমিল্লা জেলা বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে পুরো দেশের মধ্যে এগিয়ে রয়েছে। বিমানবন্দর চালু করলে ইপিজেডের কার্যক্রম আরো প্রসারিত হতে পারবে, তাতে দেশেরই লাভ। আরো একটা বিষয়, নোয়াখালীতে ওই রকম শিল্পকারখানা নেই। রয়েছেন কয়েকজন শিল্পপতি। এখন তাদের জন্য যদি বিমানবন্দর চালু করা হয় তাহলে অদূর ভবিষ্যতে এটা সরকারের লস প্রজেক্ট হিসেবে পরিগণিত হতে পারে। তাই আশা করছি, সরকারের নীতিনির্ধারকরা বিষয়টি ভেবে দেখবেন।

দিলনাঁশি মোহসেন (জেলা গভর্নর, রোটারি ইন্টারন্যাশনাল): কুমিল্লা বিমানবন্দর চালু না হয়ে অন্য জেলায় নতুন বিমানবন্দর চালু হওয়া খুবই দুঃখজনক ঘটনা। খেয়াল করে দেখলাম কুমিল্লাকে পিছিয়ে রাখার একটা মানসিকতা কাজ করছে। আমি মনে করি অর্থনৈতিক জোন হিসেবে খ্যাত ইতিহাস ঐতিহ্যের ধারক-বাহক কুমিল্লায় বিমানবন্দর চালু করলে শুধু কুমিল্লা নয়, পুরো দেশের অর্থনীতির চাকা ত্বরান্বিত হবে।

কারণ এখানে আছে স্থলপথে উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থাসম্পন্ন ইপিজেড ও বিবিরবাজার স্থলবন্দর। এ ছাড়া গত ১৮ বছর ধরে সবচেয়ে বেশি বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয় কুমিল্লা থেকে। এখন দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি বিবেচনার জন্য সংশ্লিষ্টরা নিশ্চয়ই বিষয়টি অনুধাবন করবেন বলে আমি বিশ্বাস করি। কুমিল্লার বিমানবন্দর পুনরায় চালু হোক এ আশা ব্যক্ত করি।

আরো পড়ুন