বুড়িচংয়ের আতঙ্কের নাম সাজ্জাদ চেয়ারম্যান, ভীত সন্ত্রস্ত সাধারণ ভোটাররা (ভিডিও)
ডেস্ক রিপোর্টঃ কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলা সাবেক চেয়ারম্যান, জেলা আ.লীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা আ.লীগের যুগ্ন-আহ্বায়ক সাজ্জাদ হোসেন স্বপন ও তার পালিত বাহিনীর অত্যাচার-নির্যাতনে অতিষ্ঠ বুড়িচংয়ের মানুষ। এ বাহিনীর অত্যাচার-নির্যাতনে শুধু প্রতিপক্ষের রাজনৈতিক নেতাকর্মীরাই নন, নিজ দল আ.লীগের নেতাকর্মীরাও এখন অতিষ্ঠ বিরক্ত। তার দাপটে অনেক পরীক্ষিত আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী রাজনীতি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন।
সম্প্রতি উপজেলা নির্বাচনী প্রচার কালে তার কিছু বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। যেখানে দেখা যায় তিনি প্রকাশ্যে ভোটার এবং প্রতিপক্ষ প্রার্থীকে হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন। যা নির্বাচনী আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। এতে করে ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছে সাধারণ ভোটাররা।
তাছাড়া সম্প্রতি উপজেলা আ.লীগের বেশ কিছু নেতা কর্মী বহিস্কারের পেছনেও তার হাত রয়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয় নেতা কর্মীদের।
সাজ্জাদ হোসেন স্বপন সামান্য একজন পুলিশ কনস্টেবলের ছেলে হয়ে ক্ষমতার হালুয়া-রুটির স্বাদ নিয়ে এখন হয়েছেন কোটি কোটি টাকার মালিক। আর এজন্যই তিনি কাউকে পরোয়া করেন না বলে জানিয়েছেন বুড়িচং উপজেলার বিভিন্ন স্তরের দলীয় নেতাকর্মীরা।
বুড়িচং উপজেলার বাকশিমুল গ্রামের পুলিশ কনস্টেবল আয়েত আলীর ছেলে সাজ্জাদ হোসেন স্বপন কুমিল্লা সরকারি কলেজে ভর্তি হয়েই ছাত্রলীগের রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। আনুকূল্য পান তৎকালীন জেলা আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা অধ্যক্ষ আফজল খানের। ছাত্র রাজনীতিতে থাকাকালেই তার বিতর্কিত বিভিন্ন ভূমিকা দলকে বেশ কয়েকবার চরম বিব্রত অবস্থায় ফেলে দেয়। ১৯৮৬ সালে শিক্ষাগত যোগ্যতা গোপন করে কলেজ ছাত্র সংসদের নির্বাচনে ভিপি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। পরে এ ঘটনা ফাঁস হয়ে গেলে কলেজের নির্বাচন বন্ধ হয়ে যায়।
২০০১ সালে উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক, সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান, বর্তমানে বুড়িচং উপজেলা আ.লীগের যুগ্ন-আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম খোকনকে ষোলনল ইউনিয়নের নানুয়া বাজারে প্রকাশ্যে গুলি করে তার বাহিনী। কিন্তু ভাগ্যক্রমে খোকন বেঁচে যান। এ নিয়ে তৎকালীন সময়ে থানায় মামলা হলেও তার দাপটের কাছে সব কিছু মুছে যায়।
২০১২ সালে বুড়িচংয়ের প্রথম রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের শিকার সারোয়ার আলম পলাশ হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে জানতে গিয়ে জানা গেছে, পলাশ একসময় সাজ্জাদ চেয়ারম্যানের গ্রুপে ছিলেন। হত্যার কয়েক মাস আগে রাসেল বাহিনী রাজাপুর ইউনিয়নের শংকুচাইল বাজারে প্রকাশ্যে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে পলাশের ওপর হামলা করে তাকে মারাত্মক আহত করে। এর বিচার পলাশ সাজ্জাদ চেয়ারম্যানের কাছে দিলে সাজ্জাদ চেয়ারম্যান রাসেলদের পক্ষ নেন। এতে সাজ্জাদ চেয়ারম্যানের গ্রুপ থেকে বের হয়ে আসেন পলাশ। এই বিরোধকে কেন্দ্র করেই ২০১২ সালের ৩ ডিসেম্বর সাজ্জাদ বাহিনীর হাতে নির্মমভাবে খুন হন পলাশ। তখন নিহত পলাশের মা আমিরচান্দ বেগম বাদী হয়ে সাজ্জাদ হোসেন স্বপনকে প্রধান আসামি করে ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছিলেন।
জানা যায়, উপজেলা চেয়ারম্যান থাকা কালে বুড়িচংয়ে টেন্ডারের সব কাজ হত তার বাসা কিংবা অফিসে বসে। তিনি যাদের পছন্দ করতেন তাদের টেন্ডার ভাগ করে দিতেন। কোনো নিয়ম-নীতির ধারেকাছেই তিনি যান না বলে জানালেন দলীয় কর্মীরা।
২০১৬ সালের কুমিল্লা জেলা পরিষদ নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্তের বাহিরে যেয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে পরাজয় বরণ করেন।
খোঁজ নিয়ে আরো জানা যায়, মাদক ব্যবসায়ও পিছিয়ে নেই সাজ্জাদ হোসেন স্বপন। ২০১৮ সালের জুলাই মাসের ২৫ তারিখে ভোরের কাগজ পত্রিকায় “প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের প্রতিবেদন, মাদক ব্যবসায় রাজনীতিবিদ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী!” শিরোনামে যে খবর প্রকাশিত হয় সেখানে কুমিল্লা অঞ্চলে মাদকের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে উঠে আসে সাজ্জাদ হোসেন স্বপনের নাম।
সরেজমিনে বুড়িচং গিয়ে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের কাছে এসব কাহিনী জানা গেছে। উপজেলা আওয়ামী লীগের একাধিক সিনিয়র নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, তার কারণে দলের অনেক পরীক্ষিত আওয়ামী লীগ নেতারা এখন নিষ্ক্রিয় হয়ে আছেন। এমন কোনো হীন ঘৃণিত কাজ নেই, যা সাজ্জাদ চেয়ারম্যান করেন না।
তাঁরা আরো বলেন, সত্য কথা বললে দলের বিরুদ্ধে যাবে। তাই সব কথা বলতে চাই না। শুধু এতটুকু বলতে চাই, গত দশ বছরে দল ক্ষমতায় আসার পর এমন কোনো অনৈতিক কাজ নেই, যা সাজ্জাদ চেয়ারম্যান করেনি। দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, তার বাহিনী দিয়ে মাদক নিয়ন্ত্রণ, বালুমহাল লুটপাট, কমিশনবাণিজ্য, নিয়োগ বদলি-এমন কিছু নেই, যা সে করেনি। তার বিরুদ্ধে কথা বললেই নেমে আসে চরম নির্যাতন।
কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং মহানগর আ.লীগ নেতা অ্যাডভোকেট আনিছুর রহমান মিঠু বললেন, একজন কনস্টেবলের ছেলে কীভাবে মাত্র কয়েক বছরে ঢাকা-কুমিল্লায় একাধিক বিলাসবহুল ফ্ল্যাটের মালিক হয়, কোটি কোটি টাকার গাড়ির ব্যবসা করে, এলাকায় ৩০ একরের ওপর জমি কী করে হয়, তা আমার জানা নেই।