কুমিল্লা জেলার প্রার্থীদের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ
ডেস্ক রিপোর্টঃ ভোটের আগের রাতে ভোট ও নির্বাচনে কালো টাকা-পেশিশক্তির ব্যবহার বন্ধ করতে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতা চেয়েছেন কুমিল্লা উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী প্রার্থীরা। এ ছাড়া ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে প্রচারণা এবং উদ্বুদ্ধকরণ কার্যক্রম হাতে নিতে নির্বাচন কমিশন ও সংশ্লিষ্টদের প্রতি অনুরোধ জানান তারা। কুমিল্লায় উপজেলা পরিষদ নির্বাচন উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতিনিধি ও নির্বাচন সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থীরা এসব কথা জানান। অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে কুমিল্লার জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে সম্প্রতি এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। চতুর্থ দফায় আগামী ৩১ মার্চ কুমিল্লার ১৩টি উপজেলার মধ্যে ৮টি উপজেলায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৮২ জন প্রার্থী অংশ নিচ্ছেন এ নির্বাচনে।
মতবিনিময় সভায় মেঘনা উপজেলার চেয়ারম্যান প্রার্থী রতন শিকদার অভিযোগ করে বলেন, এ উপজেলার বর্তমান চেয়ারম্যান নিজেও একজন প্রার্থী। তিনি প্রচারণার কাজে সরকারি গাড়ি ব্যবহার করছেন এবং চেয়ারম্যান কার্যালয়ে দলীয় কার্যক্রম চালাচ্ছেন। পাল্টা অভিযোগে মেঘনার চেয়ারম্যান প্রার্থী ও বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুস সালাম বলেন, তার প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থীরা বিভিন্ন এলাকায় রঙিন পোস্টার ও ফেস্টুন ব্যবহার করছেন এবং নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করে প্রচারণা চালাচ্ছেন। মুরাদনগর উপজেলার চেয়ারম্যান প্রার্থী আহসানুল আলম কিশোর বলেন, নির্বাচনকে বানচাল করতে বিএনপি-জামায়াতের সমর্থকরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অংশ নিচ্ছেন। অবৈধ টাকা ব্যবহার করে সাধারণ ভোটারদের ভয়-ভীতি প্রদর্শন করছেন। মুরাদনগরের অপর এক চেয়ারম্যান প্রার্থী গোলাম কিবরিয়া সরকার বলেন, এ পর্যন্ত দুবার তার নির্বাচনী প্রচারণায় বাধা দিয়েছেন প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থীর সমর্থকরা। লিফলেট এবং পোস্টার পোড়ানোর অভিযোগও তোলেন তিনি। বুড়িচং উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. আবুল হাসেম খান বলেন, নির্বাচনের আগে এলাকায় প্রশাসনের বাড়তি নজরদারি প্রয়োজন। শুধু নির্বাচনের দিন নয়, এখন থেকেই যদি প্রশাসন নজরদারি বাড়ায় ভোটাররা শতভাগ উপস্থিত থাকবেন ভোটের সময়। ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী আবু তাহের বলেন, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ভোট রক্ষায় নিশ্চয়তা দিতে হবে। নির্বাচন সংশ্লিষ্টরা যদি নির্বাচনের আগে মাইকিং করে ভোটারদের উদ্বুদ্ধ করেন তাহলে ভোটাররা নির্ভয়ে উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট দিতে আসবেন। এ ছাড়া বিভিন্ন উপজেলার চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীরা মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন।
প্রার্থীদের বক্তব্য শেষে রিটার্নিং অফিসার ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক কায়জার মোহাম্মদ ফায়াবি বলেন, নির্বাচন আচরণবিধি পর্যবেক্ষণে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা মাঠে রয়েছেন। তবে প্রার্থীরা তাদের নিজ নিজ নির্বাচনী দায়িত্ব মেনে চললে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব।
রিটার্নিং অফিসার ও জেলা সিনিয়র নির্বাচন অফিসার জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, প্রার্থীদের যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের এজেন্ট হিসেবে নিয়োগ দিতে হবে। সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন কমিশন ধারাবাহিক কার্যক্রম চালাচ্ছে। র্যাব কুমিল্লার ভারপ্রাপ্ত কমান্ডার শেখ বিল্লাল হোসেন বলেন, নির্বাচনে কারো কোনো অভিযোগ থাকলে ০১৭৭৭-৭৩৩৩২৮ নম্বরে ফোন করে র্যাবের সহযোগিতা নিতে পারেন। কেউ কোনো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করলে তা শক্ত হাতে দমনের হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
বিজিবি-১০ ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক লে. কর্নেল আবু মোহাম্মদ মহিউদ্দিন তার বক্তব্যে বলেন, নির্বাচনের আগে নির্ধারিত সময়ে বিজিবি মোতায়েনের জন্য প্রস্তুত রয়েছে। এ ছাড়া মোবাইল স্ট্রাকিং ফোর্স হিসেবেও বিজিবি নির্বাচনী মাঠে থাকবে। কুমিল্লা জেলা পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলাম বলেন, বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে বদ্ধপরিকর। কাউকে কোনো ধরনের প্রভাব বিস্তার করতে দেয়া হবে না। নির্বাচনী আচরণবিধি সম্পূর্ণ বাস্তবায়নে পুলিশ সব সময় প্রস্তুত রয়েছে।
সবশেষে কুমিল্লা জেলা প্রশাসক আবু ফজল মীর বলেন, প্রার্থীদের কোনো অভিযোগ থাকলে তা লিখিত আকারে নির্বাচন কমিশন বা সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের জানাতে হবে। অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। প্রশাসনের অবস্থা স্পষ্ট রাখতে নির্বাচনী আচরণবিধি যেন কেউ লঙ্ঘন করতে না পারে সে ব্যাপারে কঠোর অবস্থান নেয়া হয়েছে। সব প্রার্থী সমান সুযোগ পাবে। তবে কেউ নির্বাচন নিয়ে কোনো ধরনের গুজব ছড়ানোর চেষ্টা করলে ছাড় দেয়া হবে না।
ভোটাররা নিরাপদে উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট দিতে পারবেন- এই নিশ্চয়তা দিচ্ছে প্রশাসন। এ ছাড়া নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা যেন না ঘটে সে ব্যাপারেও লক্ষ্য রাখা হচ্ছে। এ ছাড়া সভায় বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।