কুমিল্লায় ঝড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ সারা দেশের ন্যায় কুমিল্লাতেও হানা দিয়েছে কালবৈশাখী ঝড়। যদিও বৈশাখ মাস আসতে আরও কিছু দিন বাকি। তথাপি শুরু হয়ে গেছে কালবৈশাখীর তান্ডবলীলা। ঝড়ের সাথে রয়েছে বৃষ্টি, সেই সাথে শিলাবৃষ্টিও। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে গত কিছু দিন ধরেই দেশের কোথাও কোথাও দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টি হচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার থেকে এর মাত্রা বেড়েছে কয়েক গুণ।
এদিকে কুমিল্লায় গতকাল হঠাৎ হানা দেয় কালবৈশাখী ঝড়। বিকালের পর থেকে কোথাও কোথাও হালকা বৃষ্টি হলেও সন্ধ্যা ৬টার পরে আকাশ একেবারে ঘনকালো রুপ ধারণ করে। ৭টার মধ্যে হঠাৎ ধূলিঝড় শুরু হয়। সড়কে চলাচল কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে।
দমকা বাতাসে অনেক হালকা যান ও মোটসাইকেল আরোহীকে রাস্তার পাশে দাঁড়াতে হয়েছে। সাধারণ পথচারীরা ছুটোছুটি করে দোকানের ছাউনি/ বিল্ডিংয়ের কার্নিশের নিচে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছেন। এরপর শুরু হয় তুমুল ঝড়ো হাওয়া। লন্ডভন্ড করে দেয় সব। উপরে ফেলে গাছপালা, বৈদ্যুতিক খুঁটি, মানুষের ঘরবাড়ি ও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে ফসলী জমির। মঙ্গলবার রাতের ঝড়ে কুমিল্লা সদর, সদর দক্ষিণ, বুড়িচং ও মুরাদনগর উপজেলায় ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতির খবর পাওয়া গেছে।
জানা যায়, বুড়িচংয়ে ঝড়ো হাওয়া আর বাতাসের তীব্রতায় কমপক্ষে ৩০টি অুাঁধা-পাকা ঘর, ছাত্রাবাস ও টিনের ঘরসহ শতাধিক ফলদ ও বনজ গাছসহ বিস্তীর্ণ এলাকার আবাদি ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে।
সদর উপজেলার বারোপাড়ায় বিরাট আকারের ২টি গাছ উপড়ে পড়ে এবং রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। গাছটি একটি অটোরিকশার উপর পড়লে লেপটে যায় অটোরিকশাটি। বারপাড়া, জগন্নাথপুর, দাউদেরখাড়া গ্রামে উপড়ে পরে ৪/৫টি বৈদি্যুতিক খুটি। বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে বৈদ্যুতিক লাইন। বিঘœ ঘটে ছাত্র-ছাত্রীদের লেখাপড়ায়। বিদ্যুতের কারণে ল্যাপটপ, মোবাইল ফোন বন্ধ হয়ে যোগাযোগ ব্যবস্থায় মারাত্মক বিপর্যয় ঘটেছে।
অন্যদিকে জগন্নাথপুর ইউনিয়নের দাউদের খাড়া রোডের চাপাপুর গ্রামে অবস্থিত দি গ্লোবাল প্যাকেজিং ইন্ডাস্ট্রিজ প্রাইভেট লি. এর ব্যাপক ক্ষতি পরিলক্ষিত হয়। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় কোম্পানিটির কেন্টিন ঝড়ে লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে উৎপাদন বন্ধ হয়ে আছে। বৃষ্টিতে ভিজে কোম্পানির কাঁচামাল রেজিম নষ্ট হয়ে গেছে। এছাড়া কোম্পানীর গোডাউন, ডরমেটোরি, শ্রমিকদের আবাসন পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে। এছাড়া সদ্য আমদানিকৃত কয়েক কোটি টাকার মেশিনের মারাত্মক ক্ষতি সাধিত হয়েছে। গোডাউনে পানি জমে নষ্ট হয়ে গেছে সব মালামাল।
কোম্পানির জেনারেল ম্যানেজার শিবলী সাদিক বাঁধন বলেন, আমাদের কোম্পানির আনুমানিক ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ২৫ কোটি টাকা হবে। ৯ জন শ্রমিক কেন্টিনে আটকা পড়লেও কারো কোন ক্ষতি হয়নি। তবে দুজন পথচারী আহত হয়েছেন। গোডাউনের শেড সম্পূর্ণ উড়ে গেছে। সবচেয়ে দামী জিনিস কোম্পানির কাঁচামাল রেজিম নষ্ট হওয়ায় উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। ঝড়ের কি যে তান্ডবলীলা এখান দিয়ে গেছে সিসি ক্যামেরা অন থাকলে দেখা যেত।
এছাড়া রেইসকোর্সে গ্যাসের লাইজার ছিদ্র হয়ে আগুন ধরে যায়। পরে অবশ্য আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। আগুন লেগে ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে মুরাদনগরে। কয়েক দিন আগেই কুমিল্লা ইপিজেডে আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে আর এন কোম্পানি। সর্বোপুরি বলা যায় প্রকৃতির বিরূপ আচরনে সাধারণ জন জীবন বিপর্যস্ত।