দ্বিতীয় মেঘনা-গোমতী সেতু খুলছে, দেড় ঘন্টায় ঢাকা-কুমিল্লা!
ডেস্ক রিপোর্টঃ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে কুমিল্লার দাউদকান্দিতে গোমতী নদীর ওপর নির্মিত দ্বিতীয় সেতুর উদ্বোধন করা হবে আগামীকাল শনিবার। এদিন মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় মেঘনা নদীর ওপর নির্মিত দ্বিতীয় সেতুও উন্মুক্ত হবে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে চলাচলকারী যানবাহনের চালক ও যাত্রীদের আশা, এর মধ্য দিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকে থাকার দুর্ভোগ থেকে মুক্তি মিলবে।
শনিবার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সেতু দু’টির উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর এর মধ্য দিয়ে সেতু দুটির ওপর দিয়ে যানবাহন চলাচল শুরু হবে।
চালক ও যাত্রীরা জানান, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক দেশের ব্যস্ততম সড়ক। এ মহাসড়কে প্রায় সময় দীর্ঘ যানজট লেগে থাকে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকা পড়ে ভোগান্তিতে পড়েন চালক ও যাত্রীরা। চারলেনের মহাসড়কের যানবাহনগুলো দুই লেনের গোমতী ও মেঘনা সেতুতে ওঠার সময়ই মূলত সেতুর দুই পাশে যানজটের সৃষ্টি হয়। অনেক সময় অতিরিক্ত মালবোঝাই যানবাহন সেতুতে ওঠে বিকল হয়ে তা দীর্ঘ যানজটের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ছুটির দিন (শুক্রবার-শনিবার) এবং ঈদ-পূজাসহ বিভিন্ন উৎসবকে ঘিরে যানবাহনের চাপ বাড়লেও এখানে যানজট সৃষ্টি হয়। এ ছাড়া, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে অতিরিক্ত মালবাহী যানবাহনের চাপ বাড়লে জটলা সৃষ্টি হয়ে যানজটের আকার ধারণ করে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকে রোগী, নারী, শিশু, বৃদ্ধা ও সাধারণ যাত্রীরা চরম দুর্ভোগে পড়েন।
কুমিল্লার চান্দিনার মহসিন কবির নামে এক যাত্রী বলেন, নতুন দুই সেতু চালু হলে এই মহাসড়কে যানজটের তীব্রতা কমবে। এতে অল্প সময়ে যাত্রীরা পৌঁছাতে পারবেন গন্তব্যে। ঈদ উপলক্ষে দু-একদিনের মধ্যেই বাড়িতে যাত্রা শুরু করবে ঘরমুখো মানুষ। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দ্বিতীয় মেঘনা ও গোমতী সেতু দুটি খুলে দিলে দেশের পূর্বাঞ্চলের মানুষের এবারের ঈদ আনন্দেই কাটবে বলে তিনি মনে করেন।
কুমিল্লা বাস মালিক সমিতির মহাসচিব মো. তাজুল ইসলাম বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চারলেনের হলেও যানবাহনের চাপ বাড়লে দুইলেনের মেঘনা ও গোমতী সেতুর দুইপাশে যানজট সৃষ্টি হয়। এতে আমাদের ব্যবসার ক্ষতি হয়। দুর্ভোগে পড়েন চালক ও যাত্রীরা। আগামী শনিবার দ্বিতীয় মেঘনা ও গোমতী সেতু চালু হলে মহাসড়কে যানবাহনের জট সৃষ্টি হবে না। সাধারণ মানুষ স্বস্তিতে নিজ নিউ গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবেন।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ কুমিল্লার নির্বাহী কর্মকর্তা ড. মো. আহাদ উল্লাহ জানান, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক দিয়ে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ২৫ হাজার যানবাহন চলাচল করে। এর মধ্যে ৬০ শতাংশ বাণিজ্যিক এবং বাকি ৪০ শতাংশ গাড়ি যাত্রীবাহী। নতুন নির্মিত দ্বিতীয় মেঘনা সেতুর দৈর্ঘ্য ৯শ’ ৩০ মিটার আর দ্বিতীয় গোমতী সেতুর দৈর্ঘ্য ১ হাজার ৪শ’ ১০ মিটার। সেতু দুইটি যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত হলে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানজট থাকবে না। যাত্রীদের ভোগান্তি দূর হবে এবং ঈদে ঘরমুখো মানুষ স্বস্তিতে বাড়ি ফিরতে পারবে।
এদিকে, দ্বিতীয় মেঘনা ও গোমতী সেতু প্রকল্পের পরিচালক আবু সালেহ মো. নুরুজ্জামান জানান, বাংলাদেশ সরকার ও জাইকার অর্থায়নে মহাসড়কের ২৫তম কিলোমিটারে সাড়ে ১৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ১২টি স্প্যানের ৯৩০ মিটার দৈর্ঘ্য, ১৭ দশমিক ৭৫ মিটার প্রস্থের মেঘনা নদীর ওপর মেঘনা সেতু এবং ৩৭তম কিলোমিটারে সাড়ে ১৯ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৭টি স্প্যানে ১ হাজার ৪১০ মিটার দৈর্ঘ্য, ১৭ দশমিক ৭৫ মিটার প্রস্থের গোমতী নদীর ওপর গোমতী দ্বিতীয় সেতু নির্মাণ করা হয়। ২০১৬ সালের ৩ জানুয়ারি সেতু দুইটির নির্মাণকাজ শুরু হয়। ৪১ মাসে এর কাজ সম্পন্ন হয়।