দৈনিক ১৭ ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হচ্ছেন কুমিল্লা মেডিকেলে
জহির শান্তঃ প্রতিদিন গড়ে ১৭ জনেরও বেশি ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হচ্ছেন কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ (কুমেক) হাসপাতালে। কুমেকের ভর্তি নিবন্ধন খাতার সর্বশেষ ৬দিনের হিসেবে উঠে এসেছে এ তথ্য। সব মিলিয়ে জুলাইয়ের ২২ তারিখ থেকে গতকাল ২ আগস্ট পর্যন্ত হাসপাতালটিতে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে চিকিৎ নিতে আসেন ১৩৩ জন রোগী । এর মধ্যে ২৮ জুলাই থেকে গতকাল পর্যন্ত ৬ দিনেই ভর্তি হয়েছেন ১০৫ জন। ২৭ জুলাই পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা ছিলো ২৭ জনে। গতকাল শুক্রবারও ১২জন ডেঙ্গু রোগী কুমেক হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন বলে জানা যায়।
কুমেক হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ডেঙ্গু রোগী আছেন ৭৮ জন। আর ৫৫জন রোগী বিভিন্ন সময়ে চিকিৎসা শেষে ছাড়পত্র নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন। এছাড়াও তিতাস উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একজন এবং হোমনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৫ জন ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসা নেয়ার খবর পাওয়া গেছে। তবে চিকিৎসাধীন সবাই ঢাকায় আক্রান্ত হয়েছেন।
এদিকে কুমিল্লায় ভয়াবহভাবে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকায় বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন নগরবাসীসহ জেলার বাসিন্দারা। তবে কুমেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, কুমিল্লায় চিকিৎসাধীন ডেঙ্গু রোগীদের সকলেই ঢাকা থেকে আক্রান্ত হয়েছেন। তাই উদ্বিগ্ন না হয়ে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। যেহেতু কুমিল্লায় এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেছে, সবাইকে সর্বোচ্চ সচেতন থাকতে হবে।
কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের রেকর্ড সূত্রে জানা যায়, ২৩ জুলাই পর্যন্ত কুমিল্লায় ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ছিলো মাত্র চারজন। এরপর ২৭ জুলাই এসে এ সংখ্যাটা দাঁড়ায় ২৭জনে। মূলত ২৮ জুলাই থেকেই কুমেক হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর চাপ বাড়তে থাকে। ক্রমেই বাড়তে থাকা ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ৩১ জুলাই এসে ঠেকে ৯৪জনে। আর চলতি মসের প্রথম দুই দিনসহ সব মিলিয়ে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি হন ১৩৩জন ডেঙ্গু রোগী। আর হোমনা ও তিতাস উপজেলা মিলিয়ে সংখ্যাটা দেড় শ’ ছুঁই-ছুঁই (১৪০ জন)।
কুমেক হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, গত কয়েকদিনে জ্বর আক্রান্ত হয়ে প্রায় ৩০০ কুমেক হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগের পরীক্ষা করেছে। তাদের মধ্যে ১৫ জনকে সনাক্ত করেছে হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগ। বাকি রোগীরা প্রাইভেট কিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ডেঙ্গুর বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে চিকিৎসা নিতে এসেছেন।
হাপাতালের সূত্রটি বলছে, ডেঙ্গু পরীক্ষার জন্য হাসপাতালে যে পরিমাণ কিট রয়েছে তা দিয়ে শনিবার (৩ জুলাই পর্যন্ত) কার্যক্রম চালানো যাবে। শনিবারের পরে আবার নতুন করে কীট সংগ্রহ করতে হবে।
কুমেক হাসপাতাল ঘুরে চিকিৎসক ও রোগীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, এ পর্যন্ত শনাক্ত হওয়া ১৩৭ ডেঙ্গু রোগীর সকলেই ঢাকায় আক্রান্ত হয়েছেন। তাদেরই একজন কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার রাজামেহার ইউনিয়নের আবদুল করিমের পুত্র শামিম (২৫) ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ২৭ জুলাই। ঢাকার ধানমন্ডিতে একটি রেস্টুরেন্টে কাজ করেন তিনি। শামিম বলেন, হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার ৫ দিন পূর্বে শরীরে কিছুটা জ্বর অনুভাব করায় পার্শ্ববর্তী একটি ফার্মেসীতে ওষুযধ কিনতে যাই। তখন ফার্মেসির লোকজন ডেঙ্গুর পরীক্ষা করতে বলেন। বিষয়টি রেস্টুরেন্ট কর্তৃপক্ষ জানতে পেরে আমাকে সাথে সাথেই ছুটি দিয়ে বাড়িতে পাঠান। কিন্তু এরই মধ্যে আমার শরীর ক্রমশ খারাপের দিকে যেতে থাকে। এমনকি ফেরার সময় গাড়িতেই ৫/৬ বার বমি হয়েছে। পুরো শরীর ব্যথ্যায় অস্থির। কুমেক হাসপাতালের ভর্তির পরও ২দিন প্রায় অজ্ঞানের মতো ছিলাম। এখন কিছুটা সুস্থ্যতা অনুভব করছেন।
ঢাকা থেকে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে কুমেকে চিকিৎসা নিতে আসা আবুল হাসান জানান, ঢাকায় থাকাকালে শরীরের কিছুটা জ্বর অনুভব করি। পরে বাড়ি ফিরে কুমিল্লা শহরের একটি কিনিকে পরীক্ষা করে জানতে পারি ডেঙ্গু হয়েছে। পরে বৃহস্পতিবার চিকিৎসার জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হই। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন নাঙ্গলকোটের হারেছ মিয়ার পুত্র সোহরাব, মনোহরগঞ্জের আবদুল ওহাবের পুত্র শফিকুল ইসলাম, সদর দক্ষিনের মতিন মিয়ার পুত্র নুর মোহাম্মদ, ১৪গ্রামের আব্দুল রশিদের পুত্র জসিম, ব্রাহ্মণপাড়ার আজর মিয়ার পুত্র সেলিম, দেবিদ্বার উপজেলার আবদুল হাকিমের পুত্র মাসুদ, দাউদকান্দির ওমর ফারুকের পুত্র ফাহিম, দেবিদ্বারের শাহাজাহানের পুত্র শাখাওয়াত, শাহরাস্তির হুমায়ুন কবিরের পুত্র জুয়েল ও কোতয়ালী থানার চানপুরের মোর্শেদ আলমের পুত্র মাহির কাছ থেকেও প্রায় একই ধরনের তথ্য জানা গেছে। তারা সকলেই আক্রান্ত হয়েছেন ঢাকায়।
এদিকে কুমিল্লায় ডেঙ্গুর প্রকোপ বৃদ্ধির খবরে অনেকটা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন নগরবাসীসহ জেলার বাসিন্দারা।
জানতে চাইলে কুমিল্লার জেলা প্রশাসক বলেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধে কুমিল্লায় ব্যাপক সচেতনতা কার্যক্রম চলানো হচ্ছে। সিটি কর্পোরেশন, জেলা প্রশাসন ও জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের উদ্যোগে ডেঙ্গুর ভয়াবহতা প্রতিরোধে নগরীতে সমন্বিতভাবে কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। এছাড়াও জনগণকে সচেতন করতে লিফলেট বিতরণের পাশাপাশি নগরীর ও নগরীর বাইরের বিভিন্ন স্কুল-কলেজসহ গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলোতেও আলাদাভাবে নানা কর্মসূচি পালিত হচ্ছে।
তিনি বলিন, ইতোমধ্যে কুমিল্লার ১৭টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডেঙ্গু বিষয়ে সচেতনতামূলক ‘হেল্প ডেস্ক’ চালু করা হয়েছে। কুমিল্লায় ডেঙ্গুর প্রকোপ নির্মূলে সরকারি বেসরকারি সংগঠনসহ সকলের সহযোগিতা চেয়েছেন তিনি।