কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ‘আদু ভাই’ এক নেতার দাপট
ডেইলিকুমিল্লানিউজ ডেস্কঃ তিনি কখনো অস্ত্রসহ র্যাবের হাতে ধরা পড়েছেন। কখনো সরকারি কাজে বাধা দিয়ে পুলিশের মামলার আসামি হয়েছেন। আবার কখনো শিক্ষককে মারধর বা অপদস্থ করে আলোচিত হয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয় ও ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কারও হয়েছেন। তারপরও তাঁর কিছুই হয় না। সব ছাপিয়ে আবার তিনিই নেতা হন। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসজুড়ে তাঁর দাপট।
এই তিনি হলেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ইলিয়াস মিয়া। একসময় ছাত্রদল করার অভিযোগ থাকলেও এখন তিনি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার শীর্ষ নেতা। শুরু থেকেই ছাত্র হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করলেও এখনো ক্যাম্পাসেই আছেন তিনি। এ কারণে শিক্ষার্থীরা আড়ালে-আবডালে তাঁকে ‘আদু ভাই’ ডাকেন। অভিযোগ উঠেছে, কুমিল্লায় বাড়ি এমন এক মন্ত্রীর ভাইয়ের প্রশ্রয়ে ইলিয়াস মিয়া নানা ‘অপকর্ম’ করেও বারবার পার পেয়ে যাচ্ছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, লোকপ্রশাসন বিভাগের ছাত্র ইলিয়াস মিয়া বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রথম ব্যাচের (২০০৬-০৭) ছাত্র। নিয়মানুযায়ী চার বছরের স্নাতক (সম্মান) কোর্স বড়জোর ছয় বছর এবং এক বছরের স্নাতকোত্তর কোর্স বড়জোর দুই বছরের মধ্যে শেষ করার কথা। কিন্তু ইলিয়াস সাড়ে ১০ বছর ধরে ক্যাম্পাসে আছেন। নিয়মিত পড়াশোনা শেষ করে এখন আবার তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ধ্যাকালীন কোর্সে ভর্তি হয়ে ছাত্র হয়ে আছেন ক্যাম্পাসে।
জানতে চাইলে ইলিয়াস মিয়া দাবি করেন, ছাত্রলীগের কমিটিতে সভাপতি হওয়ার আশায় তিনি নিজ থেকে পড়াশোনায় কিছুটা বিরতি দিয়েছেন, বাকিটা সেশনজটের কারণে দেরি হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০০৬-০৭ শিক্ষাবর্ষে স্নাতকে (সম্মান) খেলোয়াড় কোটায় লোকপ্রশাসন বিভাগে ভর্তি হন। কুমিল্লার সন্তান ইলিয়াস একসময় ছাত্রদলের ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতা ছিলেন বলে অভিযোগ আছে। পরে ধীরে ধীরে তিনি ছাত্রলীগের নেতা হয়ে ওঠেন। এরপর বিভিন্ন ঘটনায় বারবার আলোচিত হয়েছেন ইলিয়াস। তাঁর বিরুদ্ধে ২০১১ সালের ২৪ জানুয়ারি নিজের বিভাগের শিক্ষক মো. মশিউর রহমানকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ আছে। ওই ঘটনার জের ধরে তাঁকে এক বছরের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়।
গত ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসে ক্লাস নেওয়ার কথিত অভিযোগ তুলে ইলিয়াসের নেতৃত্বে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক মাহবুবুল হক ভূঁইয়াকে অপদস্থ করা হয়। এ প্রসঙ্গে ইলিয়াস মিয়া বলেন, নতুন বিশ্ববিদ্যালয়টির সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো এখানকার অধিকাংশ শিক্ষক তুলনামূলক জুনিয়র। তাঁদের মধ্যে একাধিক উপদল আছে। কোনো পক্ষের হয়ে কাজ না করলেই অভিযোগ করা হয়।
২০১৫ সালের ২৪ এপ্রিল কুমিল্লার কোটবাড়ী এলাকায় অস্ত্রসহ সন্ত্রাসী কার্যকলাপ করার সময় ইলিয়াসকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। এ সময় তাঁর কাছ থেকে গুলিভর্তি একটি বিদেশি পিস্তল উদ্ধার করা হয়। ওই দিনই তাঁকে বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সদস্যপদ থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি। পরে জামিনে বের হন তিনি। কিন্তু গত মে মাসে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে তিনিই কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি হয়েছেন। অভিযোগ উঠেছে, সভাপতি হওয়ার পর ইলিয়াস আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন।
সূত্রঃ প্রথম আলো