কুমিল্লায় গত এক বছরে সড়ক দুর্ঘটনায় ১৬৯ জনের প্রাণহানি
ডেস্ক রিপোর্টঃ যানবাহনের বেপরোয়া গতির কারণে দেশের ইকোনমিক লাইফ লাইন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার ৯৭ কিলোমিটার অংশে এবং আঞ্চলিক সড়কেও বাড়ছে দুর্ঘটনা। গেলো বছর ১২৬টি সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যাওয়া ১৬৯জনের পরিবারের স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে। আহত হয়েছেন পাঁচ শতাধিক।
এরমধ্যে দুইশর মতো যাত্রী পঙ্গুত্ববরণ করে পার করছে দুর্বিষহ জীবন। এসব দুর্ঘটনায় তিন শতাধিক যানবাহন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। হাইওয়ে পুলিশের কর্মকর্তাদের মতে, স্পিড ডিটেক্টর মেশিনে মামলার হার বাড়লেও চালকের বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানোর কারণেই মূলত দুর্ঘটনা ঘটছে।
প্রতিদিন মহাসড়কের কুমিল্লা অংশ দিয়ে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, টেকনাফ, ফেনী, নোয়াখালী, লহ্মীপুর, রামগতি, বান্দরবান, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও ঢাকা থেকে মুরাদনগরের কোম্পানীগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চাঁদপুর, হাজীগঞ্জ, লাকসাম এবং কুমিল্লা থেকে ঢাকা, ফেনী, বান্দরবান, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, উত্তরবঙ্গের কয়েকটি জেলার ৪০টির বেশি গন্তব্যে প্রতিদিন কমপক্ষে ২০ হাজার যাত্রী ও মালবাহী যানবাহন চলাচল করে।
মহাসড়কের দাউদকান্দি থেকে ফেনীর মোহাম্মদ আলী পর্যন্ত প্রায় ৩৫টি দুর্ঘটনাপ্রবণ স্থান রয়েছে। এগুলো হচ্ছে- কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার কুটম্বপুর, হাসানপুর, শহীদনগর, গাজীপুর, রায়পুর, পুটিয়া, দৌলতকান্দি, বারপাড়া, জিংলাতলী, নাওতলা, আমিরাবাদ, রায়পুর। চান্দিনা উপজেলার হাড়িখোলা, নুরীতলা, ছয়ঘড়িয়া, দোতলা, কাঠেরপুল, গোবিন্দপুর, কোরেরপাড়, গোবিন্দপুর। বুড়িচং উপজেলার নিমসার, কাবিলা, কোরপাই, কালাকচুয়া, সদর উপজেলার কালাকচুয়া, জাগুরঝুলি। সদর দক্ষিণ উপজেলার বেলতলী, মাটিয়ারা, কমলাপুর, সোয়াগাজীর লালবাগ। চৌদ্দগ্রাম উপজেলার হাড়িসর্দার বাজার, আমজাদের বাজার, দত্তসার, আমানগন্ডা, নানকড়া ও মোহাম্মদ আলীর বাজার। এসব স্থানেই বেশিরভাগ সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে থাকে।
গতবছরের পুরো সময় মহাসড়কের কুমিল্লা অংশে ছোটবড় ১২৬টি দুর্ঘটনায় ১৬৯জনের প্রাণহানি ঘটেছে। আর আহত হয়েছে পাঁচ শতাধিক লোক। যানবাহনের মুখোমুখি সংঘর্ষ, পেছন থেকে ধাক্কা দেয়া, গাড়ির বেপরোয়া গতি নিয়ন্ত্রণ রাখতে ব্যর্থ হয়ে খাদে পড়ে যাওয়া, মোবাইল ফোনে কথা বলা, উল্টোপথে গাড়ি চালানো এবং ওভারটেকিংয়ের কারণে মূলত মহাসড়কে ওই দুর্ঘটনাগুলো ঘটেছে।
এরমধ্যে দাউদকান্দির ইলিয়টগঞ্জ টামটা এলাকায় বেপরোয়া গতির একটি বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মহাসড়ক থেকে ছিটকে একটি জলাশয়ে পড়ে। ঘটনাস্থলেই ইবনে সিনা মেডিকেলের ছাত্রী কুমিল্লা শহরের মুরাদপুরের আনিকা তাহসিন এবং বুড়িচংয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষিকা রৌশনারা বেগম মারা যান। চান্দিনার বড় গোবিন্দপুরে হাজীগঞ্জগামী একটি বাস বেপরোয়া গতির কারণে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মহাসড়কে উল্টে যাওয়া দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলেই তিনজন মারা যায়। এমনিভাবে বেশিরভাগ দুর্ঘটনাই ঘটেছে বেপরোয়া গতির কারণে।
এ বিষয়ে হাইওয়ে পুলিশ কুমিল্লা অঞ্চলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রহমত উল্লাহ অপু বলেন, গাড়ির গতি নিয়ন্ত্রণে রেখে চালানো এবং উল্টোপথে চলাচলকারীদের বিরুদ্ধে আমরা সবসময় কঠোর। চালকদের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টিতে হাইওয়ে পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে। গতি নিয়ন্ত্রণে মহাসড়কে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা হচ্ছে। স্পিড ডিটেক্টর গানে হাইওয়ে পুলিশের টিম সক্রিয় রয়েছে। স্পিড ডিটেক্টর মেশিনে মামলাও বেশি হচ্ছে। এরপরও গাড়ির চালকরা গতি নিয়ন্ত্রণে আন্তরিক হচ্ছেন না।
সূত্রঃ ইনকিলাব