কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের জনপ্রিয় জুটি থেকে বিসিএসে ক্যাডার
ডেস্ক রিপোর্টঃ গল্পটা শাওন-দিলারার। পুরো নাম দিলারা বারী দিনা ও এমদাদুল বারীর ডাকনাম শাওন। তারা কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০০৬-০৭ শিক্ষাবর্ষে অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস (এআইএস) বিভাগের প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। ৩৪তম বিসিএসে শিক্ষা ক্যাডারে উত্তীর্ণ হয়ে দুজনেই শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন।
বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে বেশ জনপ্রিয় জুটি ছিলেন। দিলারার কাছে আরেকটি গর্বের খবর হলো, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম নারী বিসিএস ক্যাডার তিনি। বর্তমানে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজে প্রভাষক হিসেবে কর্মরত আছেন।
দিলারা জানান, প্রত্যাশা ছিল জীবনে এমনকিছু হবো যাতে পরিবার, সমাজ ও দেশে গর্বের কারণ হতে পারি। যা-ই হতে পেরেছি, ভালো মানুষ হিসেবে জীবন কাটাতে চাই।
এমদাদুল বারীর ডাকনাম শাওন। বর্তমানে কুমিল্লা সরকারি মহিলা কলেজে প্রভাষক হিসেবে কর্মরত আছেন। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বির্তক প্রতিযোগিতা আয়োজন তার হাত ধরেই। থিয়েটার কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাসহ সহশিক্ষা কার্যক্রমে শাওনের ছিলো আলাদা আগ্রহ। তিনি একাধারে ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় ফুটবল দল, ক্রিকেট দলের সদস্য। দলপতি হয়ে দিয়েছেন সামনে থেকে নেতৃত্বও। রক্তদাতা সংগঠন তৈরিতেও ছিলো আপ্রাণ প্রচেষ্টা। তৈরি করেছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ে রক্তদাতাদের পরিচয়ের তালিকা।
সহশিক্ষা কার্যক্রমে সক্রিয় এই শাওন ২য় বর্ষ ১ম সেমিস্টারে এআইএস বিভাগের ইতিহাসে প্রথম সিজিপিএ ৪-এর মধ্যে সিজিপিএ ৪ পায়।
দিলারা প্রতিদ্বন্দ্বিতার স্বরে বলেন, এত পরিশ্রম করি, কিন্তু শাওন ছেলেটা ২য় সেমিস্টারে আমার থেকে বেশি সিজিপিএ পেলো! পরক্ষণেই শাওনের পক্ষে দিলারার যুক্তি, শাওন পরিশ্রমে কমিটমেন্ট ছিলো। যেটা করবে, ভালোভাবে সেটা করবেই।
শাওন জানান, পড়ালেখা উপভোগ করতে হয়। শুধু অ্যাকাডেমিক শিক্ষা নয়, প্রতিটি শিক্ষার্থী বহুমাত্রিক গুণসম্পন্ন হওয়া উচিত। এমন হলে সফলতা আসবেই।
বন্ধু-বান্ধবী, প্রেমিক-প্রেমিকা, স্বামী-স্ত্রী। দিলারা-শাওনের সম্পর্কের গতিপথটা এমনই।
দিলারা হাসতে হাসতে বলেন, আমরাতো বন্ধুই ছিলাম। শাওনসহ আমরা বেশকয়েকজন একসঙ্গে ক্যাম্পাসে গ্রুপ স্টাডি করতাম। ২০০৮ সাল, ৩য় সেমিস্টারে এসে বুঝতে পারলাম, আমাদের সম্পর্কটা কেবল বন্ধুত্বেই নেই।
শাওন-দিলারা দুজনের মুখে একরকমই কথা, আমাদের সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে হলে জীবনে ভালোকিছু করতে হবে। প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ছিলাম, ভালো করতেই হবে।
স্নাতকজীবনের মাঝামাঝি সময়ে বিসিএসমুখী পড়ালেখায় মনোযোগ দেয় শাওন। সে জানায়, স্নাতকে পড়া অবস্থায় শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছিলাম। সেখানে ফয়সাল নামে আমার এক বন্ধুর বিসিএস সংশ্লিষ্ট পড়ালেখা আমায় মুগ্ধ করে। এরপর থেকে বিসিএসে ভালো করতে নিজের সেরাটা দিই।
দুজনের ভালো জায়গায় পৌঁছাতে পারবো, সেই বিশ্বাসটা ছিল আমাদের। পরিশ্রম করেছি অনেক। এটি মানুষের সঙ্গে বেঈমানি করে না।
স্নাতকে দিলারার সিজিপিএ ৩ দশমিক ৮। স্নাতকোত্তরে ৩ দশমিক ৫৮। শাওনের স্নাতক সিজিপিএ ৩ দশমিক ৬৪। স্নাতকোত্তরে ৩ দশমিক ৫২।
শাওন ও দিলারা উভয়ই ৩৪তম বিসিএসে শিক্ষা ক্যাডারে মনোনীত হন। এদিকে তাদের বিয়ে হয় ২০১৪ সালে। ওয়াসিক এমদাদ আজমান তাদের একমাত্র সন্তান।
শাওন জানান, ছাত্রজীবনে দিলারা আমায় বেশ সহযোগিতা করেছে। সে নিয়ম মেনে চলতো। তার নোট করা, আমায় পড়তে তাড়া দেয়া- এগুলো জীবনে কাজে লেগেছে। দিলারার প্রতি কৃতজ্ঞতা।
শাওন কুমিল্লা জিলা স্কুলে পড়াশেষে উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি হন ঢাকা কমার্স কলেজে। এদিকে দিলারা পড়েন আওয়ার লেডি অফ ফাতিমা গার্লস স্কুল ও কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজে।
জীবনে এই শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানগুলো রসদ জুগিয়েছে শাওন-দিলারার। তারা জানায়, ভাগ্য ভালো, এই প্রতিষ্ঠানগুলোতে পড়তে পেরেছি। জীবনের লক্ষ্য পূরণের ভিতটা এখানেই গড়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ম সমাবর্তনে বেশ উৎফুল্ল দেখা যায় এমদাদুল বারী শাওনকে। তিনি জানান, দীর্ঘসময় পর হলেও সমাবর্তন আয়োজন করায় কুবি প্রশাসনকে অনেক ধন্যবাদ। সমবয়সী, ছোট অনেকের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়েছে। এই কয়েকটা দিন খুব আনন্দে কেটেছে।
তরুণদের উদ্দেশ করে শাওন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েই চাকরির পড়ালেখায় মনোযোগ দেয়া উচিত মনে করি না। বিশ্ববিদ্যালয়কে উপভোগ করাও জীবনের অংশ। প্রথম দুটো বছর প্রত্যেক শিক্ষার্থীর উচিৎ বিশ্ববিদ্যালয়ে সহশিক্ষা কার্যক্রমে জোর দেয়া। এতে ওই শিক্ষার্থীর বাচনভঙ্গি, যোগাযোগ দক্ষতা, নেতৃত্ব, ব্যবস্থাপনা দক্ষতার গুণগুলো ধারালো হবে। এরপর তৃতীয় বর্ষ থেকে আস্তে-আস্তে বাস্তবতা বুঝে চাকরির পড়ালেখায় মন দেয়া উচিত।
জীবনে সফল হতে দিলারার সুনির্দিষ্ট দুই কথা ‘মানবিক হওয়া ও সুন্দর কৌশলে পরিশ্রম করা’। তিনি বলেন, পৃথিবীকে সুন্দর রাখতে আমাদের মানবিক হতেই হবে। নিঃস্বার্থ মনন তৈরি করতে হবে আমাদের। এটাই প্রত্যেকের প্রথম সফলতা। পরেই আসবে কৌশলে পরিশ্রম করা। দিন-রাত শ্রম দিয়ে গেলেই হবে না, কৌশল জানতে হবে।
সূত্রঃ ডেইলি বাংলাদেশ