কুমিল্লা-৪ আসনে বিভিন্ন দলের এক ডজন মনোনয়ন প্রত্যাশী
ডেইলিকুমিল্লানিউজ ডেস্কঃ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে কুমিল্লা-৪ (দেবিদ্বার) আসনে এখন মাঠে কৌশলে প্রচারণা চালাচ্ছেন আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও জামায়াতসহ বিভিন্ন দলের প্রায় এক ডজন প্রার্থী। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় টিকিট কে পেতে যাচ্ছেন তা নিয়ে প্রার্থী ও সমর্থকদের মধ্যে জল্পনা-কল্পনার শেষ নেই। নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচার-প্রচারণা শুরু না হলেও ইতোমধ্যে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ছুটতে শুরু করেছেন আগ্রহী প্রার্থীরা। উপজেলার বিভিন্ন গ্রামগঞ্জ, হাটবাজারে নির্বাচনী প্রস্তুতি সভা-সমাবেশে ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রার্থী ও তাদের দলীয় কর্মীরা। যার যার মতো করে দলকে শক্তিশালী করতে কাজ করছেন প্রার্থীরা।
দেবিদ্বারে ১৯৯১ সালে পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকে ২০০৮ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগ পর্যন্ত প্রতিটি নির্বাচনেই জয়লাভ করেছেন বিএনপির ইঞ্জিনিয়ার মঞ্জুরুল আহসান মুন্সী। ১/১১ এর সময় তিনি গ্রেফতার হন এবং তার বিরুদ্ধে মামলাও হয়। ২০০৮ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনে তিনি প্রার্থী হতে না পারায় প্রার্থী হন তার স্ত্রী মাজেদা মুন্সী। এখানে বিএনপির দু’টি গ্রুপ বিদ্যমান। একটি হচ্ছে সাবেক এমপি ইঞ্জিনিয়ার মঞ্জুরুল আহসান মুন্সী গ্রুপ আরেকটি হচ্ছে কেন্দ্রীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল আউয়াল খান গ্রুপ। যদিও স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা জানান, দেবিদ্বারে বিএনপির মধ্যে যতই গ্রুপিং থাকুক না কেন, যে প্রার্থী ধানের শীষ নিয়ে আসবেন এলাকার জনগণ তাকেই ভোট দেবে।
এই আসনে সাবেক একাধিক মন্ত্রী, কেন্দ্রীয় উপদেষ্টামলীর প্রভাবশালী সদস্যসহ মনোনয়ন পাওয়ার যোগ্য একাধিক নেতা থাকার পরেও শুধু মহাজোট করার কারণে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে কুমিল্লা-৪ আসনটি ছেড়ে দিতে হয় জাতীয় পার্টিকে। তবে নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী রাজী মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম মুন্সীর কাছে পরাজিত হন লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করা অধ্যাপক ইকবাল হোসেন রাজু। তখন এই আসনে আওয়ামী লীগের প্রায় নিশ্চিত প্রার্থী ছিলেন সাবেক মন্ত্রী ও এমপি এ বি এম গোলাম মোস্তফা। মহাজোট ঠিক থাকলে এইবারও আসনটিতে জোটগত দলীয় মনোনয়ন পেতে পারেন জাতীয় পার্টির অধ্যাপক ইকবাল হোসেন রাজু। এ আশঙ্কায় কৌশলী প্রচারণা চালাচ্ছেন আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীরা।
এখানে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য ও বর্তমান এমপি রাজী মোহাম্মদ ফখরুলের বাবা সাবেক মন্ত্রী এ এফ এম ফখরুল ইসলাম মুন্সী, কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সাবেক মন্ত্রী ও সাবেক এমপি সদস্য এ বি এম গোলাম মোস্তফা, বর্তমান সংসদ সদস্য রাজী মোহাম্মদ ফখরুল, কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি অধ্যক্ষ এম হুমায়ুন মাহমুদ, কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রৌশন আলী মাস্টার।
বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী সাবেক এমপি মঞ্জুরুল আহসান মুন্সী, কেন্দ্রীয় বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল আউয়াল খান, উপজেলা চেয়ারম্যান মো: রহুল আমিন, হংকং বিএনপির সভাপতি এ এফ এম তারেক মুন্সী, জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল কেন্দ্রীয় কমিটির সহসাধারণ সম্পাদক এবং তিতুমীর কলেজ ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আবদুল আউয়াল খান।
জামায়াতের মনোনয়নপ্রত্যাশী দেবিদ্বার উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম শহিদ, জাতীয় পার্টির মনোনয়নপ্রত্যাশী কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক ইকবাল হোসেন রাজু। ন্যাপের মনোনয়নপ্রত্যাশী আমেনা আহমেদ। ন্যাশনাল কংগ্রেস বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট ছাবের আহাম্মদ (কাজী ছাব্বীর)।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে এ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে প্রার্থী না দিয়ে মহাজোট থেকে জাপার কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক ইকবাল হোসেন রাজুকে প্রার্থী করা হয়। আর এই সুযোগটি লুফে নেন এ বি এম গোলাম মোস্তফার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ফখরুল ইসলাম মুন্সী। তার ছেলে তৎকালীন দেবিদ্বার উপজেলা চেয়ারম্যান রাজী মোহাম্মদ ফখরুল ইসলামকে স্বতন্ত্র প্রার্থী করিয়ে মহাজোট প্রার্থী অধ্যাপক ইকবাল হোসেন রাজুকে পরাজিত করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত করেন।
দেবিদ্বার উপজেলা আওয়ামী লীগ গোলাম মোস্তফা-ফখরুল ইসলাম মুন্সী গ্রুপে বিভক্ত। দেবিদ্বারে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে গোলমাল ও বিভাজন থাকলেও নির্বাচনে আসতে পারে নতুন চমক।
সূত্রঃ নয়া দিগন্ত