কুমিল্লার মুরাদনগরে নদীর মাটি গিলে খাচ্ছেন ইউপি চেয়ারম্যান!
কুমিল্লার মুরাদনগরে প্রশাসনের নির্দেশনার কোন তোয়াক্কা না করেই আর্সি নদীর মাটি লোপাট করছেন এক ইউপি চেয়ারম্যান। অভিযুক্ত ওই ইউপি চেয়ারম্যানের নাম রুহুল আমিন। তিনি উপজেলার বাঙ্গরা পশ্চিম ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান।
অভিযোগ উঠেছে, উপজেলার বাঙ্গরা বাজার থানার ধনপতি খোলা গ্রাম এলাকায় গত দুই মাস ধরে আর্সি নদী থেকে অবৈধ ড্রেজার দিয়ে মাটি উত্তোলন করছেন তিনি।
ইতিমধ্যে নদীর মাটি লোপাট করে অন্তত ৫০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি। স্থানীয় ভূমি অফিসের এক কর্মকর্তা তাকে এসব কাজে বাধা দিলে চেয়ারম্যান রুহুল আমিন ওই কর্মকর্তাকে দেখে নিবেন বলে নানানভাবে হুমকি দিয়েছেন। এ ঘটনায় ওই ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে বাঙ্গরা বাজার থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ওই ভূমি কর্মকর্তা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার বাঙ্গরা বাজার থানার ধনপতি খোলা গ্রাম এলাকা দিয়ে বয়ে যাওয়া আর্সি নদীতে প্রায় দুই মাস আগে একাধিক ড্রেজার মেশিন বসান স্থানীয় বাঙ্গরা পশ্চিম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রুহুল আমিন। এরপর শুরু করেন নদীর মাটি লোপাট। অবৈধভাবে মাটি কাটার ফলে স্থানীয় কৃষকরা ক্ষতির মুখে পড়েন। অনেকের জমি নদীতে ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়।
পরে এলাকাবাসী বিষয়টি একাধিকবার জানানোর পর গত ১৭ ফেব্রুয়ারি প্রশাসন ওই নদীতে ভ্রাম্যমাণ আদালতে অভিযান পরিচালনা করেন। ওইদিন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাইফুল ইসলাম আর্সি নদীতে ড্রেজার দিয়ে মাটি উত্তোলনের সময় চেয়ারম্যান রুহুল আমিনসহ তার কয়েকজন সহযোগীকে আটক করে তার কার্যালয়ে নিয়ে যান। পরে এসিল্যান্ড চেয়ারম্যানের সহযোগীদেরকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জরিমানা করে মুচলেকা রেখে ছেড়ে দেন।
স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, ওইদিন দুপুরে এসিল্যান্ড অফিস থেকে ছাড়া পেয়ে একইদিন বিকেলেই ফের ড্রেজার চালু করেন ওই চেয়ারম্যান। নদীতে ফের ড্রেজার দিয়ে মাটি উত্তোলন শুরু করার খবর পেয়ে বাঙ্গরা পশ্চিম ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা (তহশিলদার) হালিমা আক্তার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ওই চেয়ারম্যানকে মাটি উত্তোলনে বাধা দেন। এতে ওই চেয়ারম্যান ক্ষুব্ধ হয়ে ওই ভূমি কর্মকর্তাকে নানানভাবে হুমকি দিতে শুরু করেন।
ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা হালিমা আক্তার জানান, এসিল্যান্ড স্যার তাদের জরিমানা করার পর তারা আবারো নদী থেকে মাটি উত্তোলন শুরু করে। এই সংবাদ পেয়ে আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে মাটি উত্তোলনে বাধা দিই। এতে চেয়ারম্যান রুহুল আমিন ক্ষিপ্ত হয়ে আমাকে নানানভাবে দেখে নেবার হুমকি প্রদান করেন। পরে আমি বিষয়টি ইউএনও এবং এসিল্যান্ড স্যারকে অবহিত করি। এ ঘটনায় বাঙ্গরা বাজার থানায় রুহুল আমিন চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন বলে জানান তিনি।
তবে এই বিষয়ে অভিযুক্ত চেয়ারম্যান রুহুল আমিন জানান, আমি তহশিলদার হালিমা আক্তারকে কোন প্রকার হুমকি প্রদান করিনি। এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও মনগড়া অভিযোগ করেছেন তিনি।
চেয়ারম্যান রুহুল আমিন দাবি করেন, স্থানীয়দের মতামত নিয়েই আর্সি নদী থেকে মাটি উত্তোলন করছেন তিনি। আর সেই মাটি দিয়ে ধনপতি খোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠ ভরাট করছেন। ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে এ ঘটনার জন্য জরিমানা করা হয়েছে। তবে অল্প একটু জায়গা ভরাটের বাকি থাকায় তিনি স্থানীয়দের মতামত নিয়ে আবারো ড্রেজার চালাচ্ছেন। এতে কারো কোন ক্ষতি হচ্ছে না বলে দাবি করেন তিনি।
এই বিষয়ে বাঙ্গরা বাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কামরুজ্জামান তালুকদার বলেন, তহশিলদার হালিমা আক্তারের কাছ থেকে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগটি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
এই প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মুরাদনগর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাইফুল ইসলাম বলেন, আর্সি নদী থেকে ড্রেজার দিয়ে মাটি উত্তোলনের সময় ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে তাদেরকে জরিমানা করা হয়েছে। পাশাপাশি ড্রেজার মালিক মুচলেখা দিয়ে বলেছেন তারা আর নদীর মাটি উত্তোলন করবেন না। যদি এরপরও মাটি উত্তোলন করে থাকেন, তাহলে খোঁজ নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সূত্রঃ বার্তা২৪