কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলা চেয়ারম্যানের দাবি মসজিদ বন্ধের!
করোনায় মুসল্লিদের ঘরে নামাজ পড়ার নির্দেশ নয়, মসজিদ বন্ধ ঘোষণার দাবি তুলেছেন কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মেজর (অব.) মোহাম্মদ আলী। তিনি সরকারের কাছে ‘মসজিদ বন্ধ’ করে দেওয়ার বিনীত আবেদন জানিয়েছেন। করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে মসজিদে জামাত চালু রাখার প্রয়োজনে খতিব, ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদেমরা মিলে পাঁচ ওয়াক্তের নামাজে সর্বোচ্চ পাঁচ জন এবং জুম্মার জামাতে সর্বোচ্চ ১০ জন শরিক হতে পারবেন এমন বিজ্ঞপ্তিতে সরকার যে নির্দেশ দিয়েছেন তা মানতে নারাজ ওই উপজেলা চেয়ারম্যান। তার দাবি মসজিদে গিয়ে তা কে নির্ধারণ করে দেবে?
তিনি মন্তব্য করেছেন, উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে কোনোভাবেই তার পক্ষে এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। এ কারণে এক্ষুণি সব মসজিদ বন্ধ করে দেওয়ার অনুরোধ করেন সরকারের কাছে। এ দাবির স্বপক্ষে একটি ফেস্টুন তৈরি করে ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করেছেন উপজেলা চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী।
মসজিদ বন্ধের দাবির বিষয়ে জানতে চাইলে দাউদকান্দি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মেজর (অব.) মোহাম্মদ আলী জানান, পাঁচ ওয়াক্ত এবং জুম্মার নামাজের জামাতে সরকার যা নির্ধারণ করেছেন তা তিনি বাস্তবায়ন করতে পারবেন না। এটা তার জন্য সম্পূর্ণ অসম্ভব ব্যাপার।
কেন অসম্ভব জানাতে চাইলে তার পাল্টা প্রশ্ন, কিভাবে সম্ভব?
আর কোনও ব্যাখ্যা না দিয়ে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমার সব বক্তব্য ফেসবুকে আমার স্ট্যাটাসে আছে।
উপজেলা চেয়ারম্যান তার ওই স্ট্যাটাসে আরও লেখেন, ‘মুসলিম জাহানের সকল মসজিদ বন্ধ। আমাদের মসজিদ খোলা কেন? আমরা কি সমগ্র পৃথিবীর মুসলমানদের থেকে বেশি বুঝি, নাকি আমরা ভিনগ্রহের মুসলমান? এছাড়াও তিনি আরও লেখেন, আমি গোঁড়া ধর্মান্ধ মুসলমান হিসেবে থাকতে চাই না। আমি প্রকৃত কোরআন/হাদিসের আলোকে প্রকৃত মুসলমান হিসেবে বাঁচতে চাই। আমি করোনাকে ভয় করি না। আমি ভয় করি, আমার সৃষ্টিকর্তাকে। যিনি করোনাকে পাঠিয়েছেন, উনার অবাধ্য হওয়ার কারণে। আমি বাঁচতে চাই। আমি মৃত্যুকে ভয় করি। আমি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মরতে চাই না।”
মসজিদের বিষয়ে সরকারের নির্ধারিত নির্দেশ বাস্তবায়নে দাউদকান্দির উপজেলা প্রশাসনের কোনও ঘাটতি আছে কিনা? এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম খান জানান, করোনা মোকাবিলায় চলমান দুর্যোগে সরকার যা করতে বলবেন প্রশাসন তা বাস্তবায়ন করতে মাঠে রয়েছে। করোনাভাইরাস সংক্রামণ রোধে মুসল্লিদের ঘরে নামাজ পড়ার নির্দেশ দিয়েছে সরকার। মসজিদে জামাতে নামাজের বিষয়ে প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তি হাতে আসার পর থেকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে উপজেলার প্রত্যেক মসজিদে মসজিদে বলে দেওয়া হয়েছে। সেই অনুসারে আজানের পরই মুসল্লিদের ঘরে বসে নামাজ আদায় করার আহ্বান জানানো হচ্ছে।
উপজেলা চেয়ারম্যান কেন বলছেন সরকারের নির্দেশ বাস্তবায়ন অসম্ভব? এমন প্রশ্নের জবাবে ইউএনও জানান, উপজেলা চেয়ারম্যান জনপ্রিতিনিধি। উনার দ্বারা কেন বাস্তবায়ন অসম্ভব, সেই উত্তর তিনিই ভালোভাবে দিতে পারবেন। আমরা উপজেলা প্রশাসন করোনা মোকাবিলায় সার্বক্ষণিক মাঠে রয়েছি।
সরকারের নির্দেশ মুসল্লিরা মানছেন কিনা জানতে চাইলে কুমিল্লা জেলা ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উপ-পরিচালক সরকার সরোয়ার আলম জানান, সরকারের নির্দেশ মেনে ঘরে নামাজ পড়ার জন্য ইতোমধ্যে মসজিদে প্রচার করা হচ্ছে। করোনাভাইরাস সংক্রামণ রোধে আশাকরি মুসল্লিরা সরকারের নির্ধারিত নির্দেশটি অমান্য করবে না।
সূত্রঃ বাংলা ট্রিবিউন