টানা বর্ষণে ক্ষতির মুখে কুমিল্লার গোমতী পাড়ের কৃষকরা
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ গোমতীর জলে ডুবিয়ে ডুবিয়ে মুলা, ডাটা, সহ অন্যান্য ফসল তোলার মরনপন চেষ্টা করছেন কেউ। কেউ বসে আছেন নদীর পাড়ের বাঁধের ওপর দেখছেন তলিয়ে যাওয়া ক্ষেতের উপড় দিয়ে বয়ে চলা পানির স্রোত। কিছুক্ষণ পরপর ফেলছেন কষ্টের দীর্ঘশ্বাস, কারো বা চোখের পানিও যেন গোমতীর স্রোতের সাথে মিশে বাড়িয়ে দিয়েছে স্রোতের গতি। দেখছেন অনাকাঙ্ক্ষিত পানিতে তলিয়ে যাওয়া স্বপ্ন। সব মিলিয়ে কুমিল্লার দুঃখ গোমতী নদীর চরে কৃষকের হাহাকার আর অার্তনাদের শব্দই যেন শোনা যাচ্ছে নদীর পানির শ্রোতের সাথে।
সারা দেশের ন্যায় সম্প্রতি কুমিল্লায় গত দুই দিনের টানা বৃষ্টিতে ফসলের বিশেষ করে শীতকালীন শাকসব্জি সহ আগাম ফসল সহ অন্যান্য ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে। তবে অন্যান্য এলাকার চেয়ে কুমিল্লার প্রধান নদী গোমতীর পাড় ঘেষা বাঁধের ভেতরের দুই তীরের ৫/৬টি উপজেলার ফসলী জমি পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় হাজারো কৃষক চরম আর্থিক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখিন হতে হবে বলেই ধারনা করা হচ্ছে।
চর এলাকার চাষকৃত আগাম ফলন বিশেষ করে আলু, ফুল ও বাধা কপি, মুলা, সীম, লাউ, বরবটি, মরিচ সহ সকল ক্ষেত পানির নীচে ডুবে যাওয়ায় শত কোটি টাকার ফসলহানির আশংকা কৃষকদের।
সরেজমিন রবিবার কুমিল্লার গোমতী নদীর তীরবর্তী সদর উপজেলার চাঁন্দপুর,বানাশুয়া, আলেখারচর, বুড়িচংয়ের কুসুমপুর,এতবারপুর, কংশনগরসহ বেশ কিছু গ্রামে নদীর চর এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সম্প্রতি সারা দেশের কুমিল্লাতেও নিম্নচাপের কারণে টানা বৃষ্টিতে গোমতী নদীতে পানি প্রবাহ বেড়ে গেছে অনেক। এতে নদীর তীরে এলাকা পানিতে তলিয়ে যায়। নদীর পানি হঠাৎ করেই প্রায় ১৪-১৫ ফুট বৃদ্ধি পাওয়ায় তলিয়েগেছে মাটিতে এবং মাচায় থাকা তরিতরকারি সহ সব ফসল।
ফলে জেলার আদর্শ সদর, বুড়িচং, ব্রাহ্মণপাড়া, দেবিদ্বার, মুরাদনগর উপজেলার নদী তীরবর্তী সদরের শাহপুর, টিক্কাচর, সংরাইশ, ঝাকুনিপাড়া, চাঁন্দপুর, শুভপুর, কাপ্তানবাজার, ভাটপাড়া, বদরপুর, রত্নবতি, বানাসুয়া, আড়াইওড়া, দূর্গাপুর, আমতলী, বুড়িচংয়ের পূর্বহুরা, কাঠালিয়া, রামপাল, বাজেবাহেরচর, গোবিন্দপুর, পীরযাত্রাপুর, রামচন্দ্রপুর, কুসুমপুর, গুণপুর, কংশনগর, বলুদগিরা, রামপুর, শ্যামপুর, ব্রাহ্মণপাড়ার ফতেয়াবাদ, দেবিদ্বারের জাফরগঞ্জ, কালিকাপুর, বেঘনাবাজ, নোয়াপাড়া, মুরাদনগরের কোম্পানীগঞ্জ সহ আশপাশের নদী তীরবর্তী দুপাশের চর সম্পূর্ণ পানিতে তলিয়ে গেছে। ফলে চর এলাকায় চাষাবাদকৃত ধান ছাড়াও শীতকালীন আগাম
রোপনকৃত তরিতরকারী বিশেষ করে আগাম গোল ও মিষ্টি আলু, ফুল ও বাধাঁ কপি,মূলা ,কাচাঁমরিচ সহ অন্যান্য বিশেষ করে লাউ, বরবটি, শিম, মিষ্টি কুমোড়, লালশাক, পুইঁশাক ইত্যাদি সম্পূর্ণরুপে পানির নীচে তলিয়ে যায়। এতে পুরো চর এলাকার শত শত হেক্টর জমির ফসল সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যাবে বলেই ধারনা সকলের । কংশনগর এলাকার নদী তীরে আগাম গোল আলু চাষ করা এক কৃষক বলেন, আর এক মাসের মধ্যে তার উৎপাদিত ফসল বাজারে নিয়ে যেতে পারতেন বিক্রির জন্য। কিন্তু হঠাৎ বৃষ্টিতে তার বিপুল টাকা লোকসান গুনতে হয়েছে।
অন্য আরেক জন কৃষক বলেন প্রতিবছরের মত এবারও চরে আগাম ফুল ও বাধাঁ কপি ছাড়াও মুলা, ডাটা ও লাউ লাগিয়েছিলেন। গত দ’দিনের বৃষ্টির পানিতে কপিক্ষেত সম্পূর্ণ ডুবে গেছে।
বুড়িচং ভারেল্লা (উত্তর) ইউনিয়নের রামচন্দ্রপুর গ্রামের নদীর চর এলাকায় দেখা গেছে পানিতে ডুবে যাওয়া ক্ষেত থেকে মুলা, ডাটা ডুবিয়ে ডুবিয়ে তোলার চেষ্টায়য় আছেন কেউ কেউ।
একইভাবে লাউ, মিষ্টি কুমড়া, চাল কুমড়া, লালশাক, পালংশাক মরিচ সহ তলিয়ে যাওয়ায় মাথায় হাত দিয়ে নদির পাড়ে বসে আছেন কেউ কেউ । অনেক গরিব চাষী যারা অন্যের জমি বর্গা নিয়ে চাষবাস করে সংসার ও ছেলেমেয়ের লেখাপড়া চালাতেন তাদের পথে বসার উপক্রম হয়েছে টানা বৃষ্টি ও ভারতীয় পাহাড়ী পানির ঢলে।
এসব এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা আরো জানান, আগাম ফসল উৎপাদনের জন্য তারা বিভিন্ন ব্যাংক, এনজিও, সমিতি ও আত্মীয় থেকে বিপুল পরিমান টাকা ঋণ নিয়ে জমিতে ফসল রোপন করেছেন, দিয়েছেন সার এবং বদইল্লা খরচ সহ নিজের শ্রম। কিন্তু হঠাৎ প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে তাদের সমস্ত ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে। প্রতিবছরের ন্যায় এবছরও চর এলাকায় আগাম ফসল বিশেষ করে গোল আলু,মিষ্টি আলু,ফুল ও বাঁধা কপিসহ লাল, পালংশাক ছাড়াও বিভিন্ন শাক সব্জি আবাদ করেন। গেলো দুদিনের টানা বৃষ্টির পানিতে নদীর তীর উপচে চর এলাকা ডুবে যাওয়ায় তাদের পুরো ফসলী জমি নস্ট হয়ে যায়।
টানা বৃষ্টিতে গোমতীর পানি বৃদ্ধিতে চর এলাকার জেলার বিভিন্ন নদী তীরবর্তী উপজেলার মাঝে বুড়িচং- কোতোয়ালি , দেবীদ্বার, উপজেলার কৃষকরা সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্থ হবে বলেই ধারনা। সরকারী বেসরকারি সহায়তা না পেলে এসব ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা কোন ভাবেই সোজা হয়ে দাড়াতে পারবে না পারবে না পানি কমলে আবার নতুন ফসল রোপন করতে। অসহায় কৃষকরা সহয়তাই কামনা করছেন এখন।