কুমিল্লায় মাতৃত্বকালীন ছুটি নিয়ে ৭ শিক্ষক ইতালিতে, অনেকের খোঁজ নেই
কেউ নিয়েছেন মাতৃত্বকালীন ছুটি, কেউ অসুস্থতাজনিত ছুটি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে এমন ছুটিতে থাকা সাতজন শিক্ষকই চলে গেছেন ইতালি। আর অনেকে পুরোপুরি লাপাত্তা!
কুমিল্লা জেলার বিভিন্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এমন অনেক শিক্ষকের খোঁজ মিলছে না। মাসের পর মাস কর্মস্থলে তাঁদের দেখা নেই। কয়েক জনের বিরুদ্ধে রুজু হয়েছে বিভাগীয় মামলা। কয়েকজনকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আব্দুল মান্নান।
কুমিল্লা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলার বিভিন্ন উপজেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ২৭ জন শিক্ষক ছুটি নিয়ে দীর্ঘ দিন আর কর্মস্থলে আসছেন না। এর মধ্যে মাতৃত্বকালীন ছুটি নিয়ে বিদেশে গেছেন সাতজন। তাঁরা সবাই ইতালিতে আছেন বলে জানা গেছে। এ সাতজনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়েছে। এর মধ্যে পাঁচজনকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। দু’জনের বিরুদ্ধে মামলা চলমান।
সরকারি চাকরি বিধি মোতাবেক সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া কেউ বিদেশ যেতে পারবেন না। তাঁরা কর্তৃপক্ষকে না জানিয়ে গোপনে দেশের বাইরে যাওয়ায় ও দীর্ঘদিন কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকায় তাঁদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়েছে।
আর দেশেই আছেন ২০ শিক্ষক। তাঁরা অসুস্থতার ছুটি নিয়ে আর কর্মস্থলে আসছেন না। তাঁদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়েছে। এর মধ্যে ১১ জনকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। বাকি নয়জনের বিরুদ্ধে মামলা চলমান।
একাধিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জানান, উপজেলা সরকারি প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে অনেকেই মাতৃত্বকালীন ছুটি নিয়ে বিদেশ যান। তাঁদের স্বামীরা প্রবাসে থাকায় সন্তানের নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্যই অনেকে এ কাজ করে থাকেন। আবার অনেকের বিরুদ্ধে একাধিক জায়গায় চাকরি করার অভিযোগও রয়েছে। সরেজমিনে খোঁজ নিলে আরও এমন ঘটনা পাওয়া যাবে বলে দাবি করেন তাঁরা।
এ ব্যাপারে মুরাদনগর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ফওজিয়া আক্তার জানান, এ উপজেলার বায়েরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাধবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বোরারচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও রাজারবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চার শিক্ষকের মধ্যে দুজন দেশের বাইরে গিয়েছিলেন। এর মধ্যে বিষয়টি জানাজানি হলে একজন বিদেশ থেকে অব্যাহতিপত্র দিয়েছেন। আর বাকি তিনজনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আব্দুল মান্নান বলেন, যারা অনুমতি না নিয়ে বিদেশ যাচ্ছেন আমরা আধুনিক টেকনোলজির মাধ্যমে তাদের বের করে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিচ্ছি। করোনাকালীন ও এর আগে দেশে অবস্থান করা এবং বিদেশে থাকা মোট ২৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছি। এর মধ্যে ১৬ জনকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। এমন আরও নয়জনের বিরুদ্ধে মামলা চলমান। সম্প্রতি স্কুল খোলার পর আরও তথ্য নেওয়া হচ্ছে। জেলার যেসব প্রাথমিক শিক্ষক সরকারি চাকরিবিধি পরিপন্থী কাজ করবেন তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সূত্রঃ আজকের পত্রিকা