কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ার কৃতিমুখ, দর্জির মেয়ে আকলিমা বিসিএস ক্যাডার
আলাউদ্দিন আজাদঃ কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ৭ জন শিক্ষার্থী এবার ৩৬-তম বিসিএসে সফলতা পেয়েছেন তাদের অধিকাংশই উঠে এসেছেন নিম্নিবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবার থেকে। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য আদর্শ সদর উপজেলার আকলিমা আক্তার। তাঁর সাফল্যগাঁথা নিয়ে লিখেছেন আলাউদ্দিন আজাদ।
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগে ২০০৪-২০০৫ শিক্ষাবর্ষের অনার্স এবং ২০০৮-২০০৯ মাস্টার্স এর শিক্ষার্থী আকলিমা আক্তার। তিনি ৩৬তম বিসিএস প্রিলি সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশ প্রাপ্ত হন। তিনি কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার আড়াইওরা গ্রামের মোহাম্মদ আলী ওরফে আবু টেইলারের মেয়ে, তার মা পারভীন আক্তার। তিনি আছিয়া গণি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক ও সোনার বাংলা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। আকলিমা আক্তারের সাথে কথা বলে জানা যায়, তিনি বিসিএস পরীক্ষার জন্য নিরলস পরিশ্রম করেছেন। তার এই পড়ালেখার ধারাকে অব্যাহত রাখতে যিনি আন্তরিক সহযোগিতা উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা দিয়েছেন, তিনি তার মা আমেনা আক্তার। তিনি বলেন- আমার মায়ের আন্তরিক সহযোগিতা না পেলে আমার হয়তো বিসিএস ক্যাডার হওয়া সম্ভব হত না। এছাড়াও আমার স্বামী মাকছুদ আলম আমাকে সর্বোচ্চ আন্তরিক সহযোগিতা করেছেন। আমার ইংরেজিতে অনেক দুর্বলতা ছিল, আমার স্বামী ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী হওয়ার সুবাধে সে নিজেই প্রায় ৬মাস বাসায় আমায় পড়িয়ে ইংরেজির দুর্বলতা কাটিয়েছেন। এছাড়াও আমার রিটার্ন পরীক্ষার সময় প্রায় ৬মাস আমাকে বাসার সকল কাজে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করেছে। এই ৬মাসে আমাকে একদিনের জন্যও নাস্তা তৈরি করতে হয়নি। কোনদিন হয়তো বাইর থেকে নিয়ে এসেছে, নতুবা নিজের তৈরি করে দিয়েছে। আমি দেখেছি যখন আমার বাড়িতে পড়াশুনা হচ্ছে না, আমার পরিবারের কাউকে না বলে ঢাকায় চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেই। সেখানে গিয়ে কোচিং এ ভর্তি হই টিউশনি করে নিজের পড়াশুনার খরচ চালাতাম। যখন খুব বেশি সম্যাসায় পড়তাম তখন আমার ছোট বোন আমাকে আর্থিকভাবে সহযোগিতা করেছেন। এছাড়াও আমাকে উৎসাহ ও পরামর্শ দিকনির্দেশনা দিয়েছেন- ভিক্টোরিয়া কলেজ উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের প্রাক্তন প্রভাষক বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগ এর সহযোগী অধ্যাপক আজমল হোসেন ভূঁইয়া। এছাড়াও আমার বিভাগের শিক্ষকদের মধ্যে মেহেরুন্নেছা, শামসিল আরেফিন ভূঁইয়াসহ বিভাগের অন্যান্য শিক্ষকবৃন্দ। পারিবারিক টানাপোড়া থেকে কষ্ট করে পড়াশুনা করে আজকে সফলতা পেয়েছে। যখন আমার পাড়া-প্রতিবেশীরা এসে আমার বাবা মাকে প্রশংসা করে, তখন অনেক আত্মতৃপ্তি উপলব্ধি করি। সত্যিই বুঝি- কষ্টের ফল পেলাম।