মুক্তিযুদ্ধে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ
মুক্তিযুদ্ধে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ শুধু একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই নয় এটি বিগত একশ বছরেরও বেশি সময় ধরে বিস্তৃত অঞ্চলের নৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক পরিবেশকে প্রভাবিত করেছে। শিক্ষা ও জ্ঞান বিস্তারে, সাহিত্য সংস্কৃতি, ইতিহাস ঐতিহ্যের দিক হতে ভিক্টোরিয়া কলেজের সুবিশাল পরিচিতি সারাদেশে ঈর্ষণীয়। শতাব্দীর প্রাচীন দক্ষিণ বাংলার অন্যতম শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জ্ঞান বিস্তারের পাশাপাশি ৫২-এর ভাষা আন্দোলন ‘৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান ‘৭১-এর মুক্তিযুদ্ধসহ এদেশের মানুষের প্রতিটি আন্দোলনে একাত্ম হয়ে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখে একটি নিজস্ব ইতিহাস সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছে।
ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকেই বেরিয়ে এসেছে বহু স্বাধীনতা সংগ্রামী শহীদ মুক্তিযোদ্ধা। ২৫ মার্চ বাঙালি জাতির কাল রাতে পাকহানাদার বাহিনীর নির্যাতন নিপীড়ন বাঙালি জাতির উপর বর্বর হামলা এবং বাঙালিদের ধরে নিয়ে হত্যা ও নারীদের ইজ্জত কেড়ে নিয়ে তাদের হত্যা করা হয়।তখন বাঙালি জাতির শরীরের রক্ত টগবগ করছে।তাজা মন বারবার কড়া নাড়ছে। এ জাতিকে মুক্তি দিতে হবে। এ জাতিকে পাকহানাদার বাহিনীর হাত থেকে পরিত্রাণ দিতে হবে। এরই ধারবাহিকতায় কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের বাণিজ্য অনুষদের ৪র্থ বর্ষের ছাত্র শহীদ মো. জয়নাল আবেদীন বুকের তাজা রক্ত দিয়ে দেশ স্বাধীনতায় বিশাল অবদান রেখেছে। বাঙালি জাতিকে পাকহানাদার বাহিনীর এ অমানবিক নির্যাতন, মানুষ হত্যা থেকে উদগীরণ করার জন্য কুমিল্লা শহরের ঢুলি পাড়া গ্রামের সন্তান এবং কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের প্রাক্তন ছাত্র শহীদ এ.কে.এম. মোজাম্মেল হক মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পরেন। তিনি পাকহানাদার বাহিনীর হাতে কসবা থানার চারগাছ নামক স্থানে ১৯৭১ সারের ১২ সেপ্টেম্বর ভোর রাতে শহীদ হন। কুমিল্লা জেলার নৈয়রা গ্রামের সন্তান এবং কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের প্রাক্তন ছাত্র শহীদ আবু তাহের কুমিল্লা কোতয়ালি থানার ভারত পাকিস্তান সীমান্ত এলাকায় হানাদার বাহিনীর বুলেটের আঘাতে শহীদ হন।
কুমিল্লা জেলার রাজবাড়ী কম্পাউন্ডের সন্তান এবং কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের প্রাক্তন ছাত্র শহীদ সাইফুল ইসলাম সাফু কসবা থানার চারগাছ নামক স্থানে ১৯৭১ সালের ১২ সেপ্টেম্বর ভোর রাতে হানাদার বাহিনীর বুলেটের আঘাতে শহীদ হন। এছাড়াও ১৯৭১ সালে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ ছাত্রদের মধ্যে যুদ্ধ করতে গিয়ে যারা শহীদ হলেন অ্যাডভোকেট শহীদ যতীন্দ্রকুমার ভদ্র, অ্যাডভোকেট শহীদ প্রসন্নকুমার ভৌমিক, শহীদ লে. কর্নেল মোস্তাক আহমদ, শহীদ দিলীপ দত্ত, শহীদ প্রাণগোপাল ভট্টাচার্য, শহীদ শিশির চন্দ্র দাস গুপ্ত (রানা), শহীদ অসীম শান্তি রায়, শহীদ অশোক কুমার গুহ বেণু, শহীদ নীহার রঞ্জন সরকার, শহীদ প্রিয়লাল ঘোষ, শহীদ কাজল কুমার ভদ্র, শহীদ এ.কে.এম শাহনেওয়াজ হায়দার, শহীদ হুমায়ুন কবীর, শহীদ আবদুল হান্নান, শহীদ কাজী আবদুল মালেক, শহীদ বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামী, শহীদ মো. শামসুল হক, শহীদ মো. খাজা নিজাম উদ্দিন, শহীদ মো. সেলিম মিঞা, শহীদ মো. সোলায়মান মিঞা, শহীদ মো. মোস্তাফা কামাল, শহীদ পরিমল চন্দ্র দত্ত, শহীদ ভুলুপাল, শহীদ সৈয়দ সফিকুর রহমান।
মুক্তিযুদ্ধে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের ২৮ জন ছাত্র পাকহানাদার বাহিনীর হাতে শহীদ হলেও বর্তমান প্রজন্মের ছাত্রছাত্রীরা এই গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসের কিছুই জানে না এবং কর্তৃপক্ষ এমন কোনো স্মৃতির অ্যালবামও রাখেনি যাতে এই বীর সেনানিদের জীবনী জানতে পারবে। যেখানে সারা দেশে মুক্তিযুদ্ধে ইতিহাসকে সংরক্ষণের গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে সেখানে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ কর্তৃপক্ষ এই বিষয় নিয়ে একটুও মাথা ঘামাচ্ছে না। এই ২৮ জন বীর শহীদ মুক্তিযোদ্ধার পুরো জীবনী সংরক্ষণ করার জন্য তাই কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে আকুল আবেদন। যাতে করে তারা চিরস্মরণী ও বরণী হয়ে থাকে ভিক্টোরিয়া কলেজের সব নবীন প্রবীণ প্রাক্তনছাত্রসহ আগামীদিনের আলোকিত ছাত্রছাত্রীদের হৃদয়ে স্থান পায় এবং তারা যে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের জীবনকাহিনী থেকে দেশ প্রেমের অনুপ্রেরণা পায়।
লেখকঃ কাজী খোরশেদ আলম