কুমিল্লায় গ্যাসের তীব্র সঙ্কট

বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (বিজিডিসিএল) অধিভুক্ত কুমিল্লাসহ বিভিন্ন এলাকায় তীব্র গ্যাস সঙ্কট দেখা দিয়েছে। প্রতিদিন বাসাবাড়িতে সকাল ৭টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত জ্বলছে না চুলা। কোথাও কোথাও রাতেও চুলা জ্বলে না। এতে দিনে-রাতে সীমাহীন ভোগান্তি বেড়েছে গৃহস্থালি গ্রাহকদের। ছোট-বড় শিল্পকারখানায়ও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। তবে বিজিডিসিএল কর্মকর্তারা বলছেন, চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস সরবরাহ না থাকায় এমনটি হচ্ছে, শিগগির সঙ্কট দূর হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
বিজিডিসিএল সূত্রে জানা গেছে, কুমিল্লার বাখরাবাদ দেশের অন্যতম বৃহৎ গ্যাসক্ষেত্র। ১৯৮০ সালের ৭ জুন বাখরাবাদ গ্যাস সিস্টেমস লিমিটেড নামে প্রতিষ্ঠানটির যাত্রা শুরু হয়। ২০০৮ সালের ১৭ নভেম্বর ওই কোম্পানিকে দ্বিখণ্ডিত করে কুমিল্লায় বিজিএসএল ও চট্টগ্রামে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড করা হয়। ২০১১ সালের ৩০ জুন থেকে বিজিডিসিএল নামে কোম্পানির নামকরণ করে একই সালের ১ জুলাই থেকে নতুন নামে কোম্পানির কাজ শুরু হয়।
সূত্র আরো জানায়, প্রতিষ্ঠালগ্নে গ্রাহক কম থাকলেও এখন গ্রাহকসংখ্যা কয়েকগুণ বেড়েছে, কলকারখানাও বেড়েছে। তবে গ্যাসের পাইপলাইন সেই অনুযায়ী বাড়েনি। বর্তমানে বাখরাবাদে গৃহস্থালি (বাসাবাড়ি), সিএনজি ফিলিং স্টেশন, বিসিক শিল্পনগরী, ইপিজেড, সার কারখানা, ছোট-বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও বিদ্যুৎ স্টেশন কেন্দ্রসহ সব মিলিয়ে গ্রাহকের সংখ্যা চার লাখ ৯০ হাজার ৬০৫। এর মধ্যে শুধু গৃহস্থালি গ্রাহক আছেন চার লাখ ৮৮ হাজার ৮১ জন। তবে চাহিদানুযায়ী গ্যাস সরবরাহ না থাকায় সঙ্কট থেকে মুক্তি পাচ্ছেন না গ্রাহকরা। নগরীর দৌলতপুর, অশোকতলা এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা জানান, অনেক বাসাবাড়িতে গ্যাসের পাইপলাইন ব্যবহারের অনুমোদন রয়েছে যার অধিকাংশ বাড়িতেই অনুমোদনের বাইরেও জ্বলে অতিরিক্ত চুলা। দু-চারটা চুলার অনুমোদন নিয়ে বহুতল ভবনের ফ্ল্যাটে ফ্ল্যাটে ব্যবহার করা হচ্ছে গ্যাসের পাইপলাইন। ফলে প্রতি মাসে লাখ লাখ টাকার গ্যাসের অপচয়সহ বিপুল রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। এতে গৃহস্থালি খাতের গ্রাহকদের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়েছে। নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ না থাকায় সঙ্কট দিনে দিনে আরো ঘনীভূত হচ্ছে।
শুক্রবার সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে, কুমিল্লা নগরীর দক্ষিণ চর্থা, আশ্রাফপুর, চকবাজার, মুরাদপুর, রাজাপাড়া, চৌয়ারা, দিশাবন্দ, হিরাপুর, পশ্চিম বাগিচাগাঁও, রেসকোর্স, বিষ্ণুপুর, ছোটরা, কালিয়াজুরি, দৌলতপুর, অশোকতলা, হজরতপাড়া ও শহরতলির চাঁন্দপুর, ধর্মপুর, মাঝিগাছা, জগন্নাথপুর ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামে সকাল ৮টার আগ থেকেই চুলা জ্বলেনি। কোনো কোনো বাড়িতে মিটিমিটি করে জ্বলছে চুলা। চাঁপাপুরে বিজিডিসিএলের প্রধান কার্যালয়ের আশপাশের এলাকায়ও গ্যাসের সঙ্কট বলে জানা গেছে।
নগরীর বাগিচাগাঁও এলাকার একটি বহুতল ভবনের শিক্ষক গৃহিণী ফারহানা আক্তার জানান, গ্যাসের অভাবে সকালে ও দুপুরে সময়মতো খাবার জোগান দিতে পারেননি। গত বৃহস্পতিবার সকাল ৭টার পরপরই চুলা জ্বলেনি। বেলা ১টা পর্যন্ত গ্যাসের দেখা মেলেনি। এতে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। পাঁচ বছর ধরে এমনটি হচ্ছে বলে জানান তিনি। সকাল সাড়ে ৮টার দিকে দক্ষিণ চর্থা এলাকার বাসিন্দা স্কুলশিক্ষক পারভীন সুলতানা বলেন, চুলা মিটিমিটি জ্বলছিল। এখন রান্না আটকে আছে। আমরা গ্যাস চাই। অন্য এলাকায় গ্যাস থাকে জেনেছি, এখানে থাকে না।
শহরতলির চাঁন্দপুর এলাকার শাহীন মির্জা জানান, শীতের দিনে ভোরে ওঠে পরিবারের সদস্যদের নাশতা ও ভাত রান্না করতে হয়। গ্যাস নেই, এভাবে আর কত দিন চলবে। জেলার সদর দক্ষিণ উপজেলার বিজয়পুর রুদ্রপাল সমবায় সমিতির সভাপতি তাপস কুমার পাল জানান, এখানে মৃৎশিল্প কারখানায় গ্যাসের চাপ কম থাকায় তিনটি চুলার একটিও জ্বলছে না। এতে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। গ্যাসের অভাবে অস্তিত্ব সঙ্কট দেখা দিয়েছে, প্রতি মাসে লোকসান গুনতে হচ্ছে। দেশী-বিদেশী কোম্পানির অর্ডার বাতিল করতে হয়েছে।
বিজিডিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শংকর মজুমদার সাংবাদিকদের বলেন, বাখরাবাদ বিপণন কোম্পানি। প্রতিদিন এখানে গ্যাসের চাহিদা ৫৮৮ এমএমসিএফ। কিন্তু সপ্তাহে গড়ে সরবরাহ হচ্ছে ২৮৫ এমএমসিএফ। সরকার ওমান ও কাতার থেকে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি করে। কিন্তু এর দাম বেড়ে গেছে। সরকার ভর্তুকি দিয়ে আনে। তার ওপর দেশীয় উৎপাদন কমে গেছে। চাহিদামতো গ্যাস না পাওয়ায় সঙ্কট বেড়েছে। কবে এই সঙ্কট দূর হবে, তা বলা যাচ্ছে না।