প্রবাসী দুই ছেলের দালানে ঠাঁই হচ্ছে না ১১২ বছরের বাশার মুন্সীর

প্রবাসী দুই ছেলের দালানে ঠাঁই হচ্ছে না বাবা আবুল বাশার মুন্সীর (১১২)। চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলার ৭নং বড়কুল পশ্চিম ইউনিয়নের জাকনী মিজিবাড়ির বাসিন্দা তিনি। আবুল বাশার মসজিদে ইমামতি, মেয়াজ্জিন ও মোক্তবে পড়ানোর আয়ে অর্জিত সবকিছু ব্যয় করেছেন দুই ছেলে ও চার মেয়ের পেছনে। স্বপ্ন ছিল দুই ছেলেকে কর্মজীবনের হাল ধরানো। সে লক্ষ্যে নিজের দুই একর সম্পত্তিও বিলিয়ে দিয়েছেন আবুল বাশার।

এখানেই শেষ নয়, শেষ আশ্রয়স্থল হিসেবে থাকা ঘরটুকুও বিক্রি করে দালান করার অর্থ দিয়েছেন ছোট ছেলেকে। নিজের বলতে তার আর কিছু নেই। স্বপ্ন ছিল, ছেলের সঙ্গে থেকে বাকি জীবনটা পার করবেন। কিন্তু বিধি বাম। আবুল বাশারকে থাকতে হচ্ছে তার মেয়ের বাড়িতে। গত কয়েক বছর ধরে হাজীগঞ্জ উপজেলার মৈশাইদ গ্রামের মেয়ের বাড়িতে থাকছেন আবুল বাশার।

জানা গেছে, বছর দুই আগে আবুল বাশারের স্ত্রী মারা যান। এরপর একাকীত্ব হয়ে পড়েন তিনি। ছেলেদের সংসারে নানা অজুহাতে ঠাঁই না হওয়ায় শেষ আশ্রয়স্থল হয় মেয়ে নুরজাহানের বাড়ি। ১১২ বছর বয়সী আবুল বাসার মুন্সী বলেন, বড় ছেলের পেছনে বেশির ভাগ সম্পত্তি খোয়া গেছে। তাকে একাধিকবার বিদেশ পাঠানোর জন্য সম্পত্তি বিক্রি করতে হয়েছে। ছোট ছেলেকে শেষে আমার ঘর বিক্রি করে দিয়েছি। এখন আর আমার কিছু নেই।

নুরজাহান বেগম জানান, প্রায় আট-নয় বছর ধরে স্বামীর সংসারে থেকে বৃদ্ধ মা-বাবার সেবা করছেন মেয়ে নুরজাহান বেগম। মা মারা যাওয়ার পরও বাবার দায়িত্ব নেয়নি দুই ভাই। মাত্র দেড় মাস বাবাকে রাখলেও গেল সপ্তাহে আবুল বাশারের বড় ছেলে শাহাদাত ডেকে নিয়ে বাবাকে পুনরায় নুরজাহানের কাছে তুলে দেয়। তিনি বলেন, বছরে দু-একবার খবর নেন ভাইয়েরা। তখন ৫০০ বা ১ হাজার টাকা দেয় বাবার খরচের জন্য। আর বোনেরা নিয়মিত খবর নেন।

আবুল বাশারের বড় শাহাদাত ডিগ্রি পাস। সে সৌদিপ্রবাসী। তার পেছনে সব সম্পত্তি খোয়াতে হয়েছে। ছুটিতে বাড়িতে এসেছেন। কেন বাবাকে আশ্রয় দেয়া হয়নি জানতে চাইলে বক্তব্য দিতে নারাজ। তবে ছোট ছেলে আনোয়ারের স্ত্রী জানান, তিনি অসুস্থ। সন্তানদের নিয়ে সংসারের কাজ করাটাই কষ্টকর। তাই শ্বশুরকে তিনিও রাখতে পারছেন না।

হাজীগঞ্জ উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. শাহাদাত হোসেন বলেন, এটি একটি ঘৃণিত কাজ। পিতা-মাতার জন্য ২০১৩ সালের ভরণপোষণ আইনে সন্তানদের জন্য জেল-জরিমানার বিধান করা হয়েছে।

হাজীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাশেদুল ইসলাম তানজীর বলেন, এমন ঘটনা কখনো কাম্য নয়। প্রথমত সামাজিকভাবে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে বৃদ্ধ আবুল বাশার মুন্সীর সন্তানদের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। তারপর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার কথা জানান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।

আরো পড়ুন