লঞ্চে কুমিল্লা থেকে ঢাকায় যাতায়াত শতবর্ষ ধরে
সড়ক পথে উন্নত যোগাযোগের এত সুপরিসর ব্যবস্থার মধ্যেও এখনো কুমিল্লা থেকে ঢাকায় লঞ্চে আসা যাওয়া করে কর্মব্যস্ত মানুষজন। অবিশাস্য হলেও এমন দৃশ্য এখনো দেখা যায়। কারো হাতে-কাঁধে ব্যাগ। কেউ বা কোলে শিশু নিয়ে লঞ্চে উঠেছেন। তাদের মধ্যে কেউ মাছ শাক সবজিসহ বিভিন্ন্ পণ্য ব্যবসার উদ্দেশ্যে ঢাকায় নিয়ে যাচ্ছেন।। তিতাস নদীর বুক চিড়ে লঞ্চ যাচ্ছে। কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর উপজেলার রামচন্দ্রপুর বাজারে গেলে এমন দৃশ্য দেখা যায়। শতবর্ষ ধরে এ ঘাট থেকে ঢাকায় যাতায়াত করেন ওই জনপদের মানুষজন। এখন সড়ক পথের উন্নতি হওয়ায় লঞ্চে যাত্রী কমেছে ঠিক তবে নিম্ন আয়ের মানুষজনের আস্থার জায়গায় রয়ে গেছে।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার পশ্চিম-উত্তরে অবস্থিত প্রায় ৪০০ বছরের পুরানো রামচন্দ্রপুর বাজার। রামচন্দ্রপুর বাজার-সংলগ্ন লঞ্চ ঘাটটির বয়স শত বছর। এ ঘাটে একসময় বড় বড় লঞ্চ ও নৌকা ভিড়ত। যাত্রীর সমাগমে একসময় মুখর থাকতো লঞ্চঘাট। ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদী থেকে যাত্রীর সঙ্গে রামচন্দ্রপুর বাজারে আসত বিভিন্ন পণ্য। বর্তমানে যাত্রী কমায় রামচন্দ্রপুর বাজারের জৌলুস কমেছে। সাত বছর আগেও এখান থেকে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন রুটে ১২টি লঞ্চ ছেড়ে যেত। এখন এ সংখ্যা দুটিতে ঠেকেছে। ঘাটের দুটি মাত্র লঞ্চ ও কয়েকটি নৌকা থেকে ইজারার টাকা তোলেন ৭০ বছর বয়সী মোরশেদ মিয়া। তার বাড়ি পাশের বাঞ্ছারামপুর উপজেলায়। তিনি এ ঘাটে কাটিয়েছেন কৈশোর ও যৌবন। ৪২ বছর তিতাস নদীর পাড়ে বসে জোয়ার ভাটা দেখেছেন। মাছে ভরপুর নদী দেখেছেন। সেই তিতাস আজ পলি জমে, দুই পাড়ে বাজার আর বসতিতে রুগ্ন হয়ে গেছে।
মোরশেদ মিয়া বলেন, এ ঘাটে এক সময় তিনজনে ইজারার টাকা তুলতেন। আধা ঘণ্টা পর পর লঞ্চ ছাড়ত। চার আনা করে টাকা তুলতেন। এখন তা ১০ টাকা হয়েছে। যে লঞ্চ ভাড়া ৩০ টাকা ছিল তা এখন ১৫০। এখন সেই আগের মত লঞ্চ নেই, যাত্রীও নেই। এখন প্রতিদিন দুপুর ১২টায় একটি মাত্র লঞ্চ রামচন্দ্রপুর ছেড়ে যায়। আর নারায়ণগঞ্জ থেকে আরেকটা লঞ্চ ৮টায় ছেড়ে দুপুর ২টায় এসে পৌঁছে। রামচন্দ্রপুর থেকে নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত প্রতিটি চেয়ার সিটের ভাড়া ২০০ টাকা। ডেকে ১৫০। নারায়ণগঞ্জ যেতে সময় লাগে ৫-৬ ঘণ্টা।
সরেজমিনে লঞ্চ ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, লঞ্চ ঘাট থেকে সবে নীলমনি লঞ্চটি ছেড়ে যাচ্ছে। লঞ্চের চেয়ার ও ফ্লোর মিলে ৩০ জনের মতো যাত্রী। যেখানে আগে এ ঘাট থেকে উঠত শতাধিক লোক।
ইজারাদার স্থানীয় ইউপি সদস্য জীবন মিয়া বলেন, ঘাটের বয়স ১০০ বছরের বেশি হবে। লঞ্চ ঘাটটি এখন বন্ধের পথে।
রামচন্দ্রপুর উত্তর ইউপি চেয়ারম্যান ইকবাল সরকার বলেন, রামচন্দ্রপুর লঞ্চঘাটি ঐতিহ্যবাহী। ঘাটের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। ঘাট সচলের বিষয়ে প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলব। ঘাটের দায়িত্বপ্রাপ্ত চাঁদপুর বন্দর কর্মকর্তা শাহাদাত হোসেন বলেন, ঢাকা থেকে লঞ্চ চালুর বিষয়ে আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে।
এ বিষয়ে মুরাদনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আলাউদ্দিন ভুইয়া জনী বলেন, রামচন্দ্রপুর লঞ্চ ঘাটটির আয় কমে গেছে। লঞ্চ চলাচল বাড়ানোর বিষয়ে নৌপথ পরিচালনা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করা হবে।